১০ নভেম্বর, ২০১৭ ০৮:৫১

'পুলিশ মামারা নাকি অনেক চকলেট দেয়'

ইফতেখাইরুল ইসলাম

'পুলিশ মামারা নাকি অনেক চকলেট দেয়'

ইফতেখাইরুল ইসলাম

ঘটনা-১ : ছেলেটির নাম অর্নব ভান্ডারী, বয়স ১৫ বছর! গত ৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় নিজ বাসা থেকে বের হয়ে যায় এরপর থেকে মিসিং! আমার কাছে অর্নবের মা কাজল রানি এবং তাঁর বড় ছেলে এলেন যে কিনা এআইইউবিতে (এ্যামেরিকান ইন্টা: ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ) পড়াশুনা করছেন। মমতাময়ী মা নিজেকে খুব শক্ত রেখে আমার সাথে কথা বলছেন। সন্তান হারানোর কষ্টকে চাপিয়ে রাখা যায় না। কিছু প্রশ্ন করে বুঝলাম অর্নব খেলাধুলা পছন্দ করে পড়ালেখায় মনোযোগ কম!

আরও কিছুটা সময় অতিবাহিত হবার পর বুঝলাম অর্নব আসলে নিজেই লুকিয়ে আছে! কিন্তু প্রমাণতো নেই! মায়ের মনতো আবেগ, বুদ্ধি আর যুক্তি বোঝে না।

পুলিশের একটি জটিল কাজ হলো কেউ যদি ইচ্ছাকৃত আত্মগোপন করে থাকে, তাকেও খুঁজে বের করতে হয়! এটা শুধু দুরুহ নয় মাঝে মাঝে অসাধ্যও বটে!

কথা শুনছিলাম এমন সময় অর্ণবের বড় ভাই চিৎকার করে কান্না জুড়ে দিলো। বড় একটা ছেলে এভাবে কাঁদলে অপ্রস্তুত লাগে! খারাপও লাগলো অনেক। ওকে বললাম চিন্তা করোনা অর্নবকে খুঁজে বের করে দেবো ২-৩ দিনের মধ্যে। বলে তো দিলাম কিভাবে সম্ভব! দায়িত্বশীল এসআই গোলাম মোস্তফাকে (আমার দেখা নিতান্তই ভদ্র ছেলে) দায়িত্ব দিলাম। একটু নির্দেশনা পেতেই সে বুঝে নিল তার কাজ। আজ দুপুরে আত্মগোপনে থাকা অর্ণবকে এক ফার্নিচারের দোকান থেকে উদ্ধার করা হয়!

অর্ণবের পরিবারকে বিশ্বাস রাখতে বলেছিলাম, এরকম হাজারো অর্ণবের পরিবারের বিশ্বাস টিকিয়ে রাখে এস আই মোস্তফারা........

ঘটনা-২ : মেয়েটি হারিয়ে গিয়েছিল কয়েক মাস আগে, আমরা তাকে উদ্ধার করে দেই! সে হারায় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে দেয় বারবার!! মিতু নামের সেই মেয়ে এক মাস আগে আবার হারায়! মিতু'র মা আবারও জিডি করতে আসেন; এবার কিছুটা ভর্ৎসনাও করি তাঁর দায়িত্বহীনতার জন্য!

নাহ এবার আমরা নই আরেক মমতাময়ী মা মিতুকে দিয়ে যান। এরপর মিতুর দাবি তার মায়ের কাছে 'পুলিশ মামারে দেখুম'।

প্রায় ১৪ বার হারিয়ে যাওয়া মিতু পুলিশ মামাদের কাছে থাকতে চায়, পুলিশ মামারা নাকি অনেক চকলেট দেয়, আদর করে।

ভালবাসার এ দাবি ছড়িয়ে পড়ুক সর্বত্র......

লেখক: সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (ডেমরা জোন)।

(লেখকের ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত)

বিডি প্রতিদিন/১০ নভেম্বর ২০১৭/এনায়েত করিম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর