১৯ নভেম্বর, ২০১৭ ১২:০২

আত্মসম্মানবোধের মূর্ত প্রতীক হয়ে উঠা মেয়েটির নাম কলি!

ইফতেখাইরুল ইসলাম:

আত্মসম্মানবোধের মূর্ত প্রতীক হয়ে উঠা মেয়েটির নাম কলি!

ইফতেখাইরুল ইসলাম:

মেয়েটির বয়স কতইবা ১৭-১৮! গ্রাম থেকে এসেছে কাজ করতে। এক বাসায় কাজও মিলে যায়। অভাবের সংসার তাই না পেরেই অন্য বিভাগ থেকে ঢাকায় চলে আসা। কাজ মিলে যাত্রাবাড়ীতে! নামটি নাইবা বললাম, ধরে নিই তাঁদের নিয়ে আমার যে ঠুনকো বিশ্বাস তার শক্ত দ্বারে জোরালো আঘাত করা মেয়েটির নাম কলি! কলি নামটিই ভাল কারণ তাঁর ব্যক্তিত্বের বিকাশ কলি থেকেই শুরু হয়েছে।

ঢাকায় কাজ করতে এসে কলি'র অভিজ্ঞতা খুবই খারাপ। মালিক আর মালকিন শুধু মারধর করে, খাবার সঠিক সময়ে ও যথাযথভাবে দিত না! মারের যন্ত্রনায় না পেরে বাসা থেকে বের হয়ে যায় কলি এবং গ্রামে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করে কিন্তু তার আগে ঢাকার সিনেমা হলে একটা ফিল্ম দেখার বহুদিনের শখ সে পূরণ করতে চায়! যায় সন্ধ্যার শো দেখতে এবং টিকেট চেকারকে বলে দেয় পাশে কোনো মহিলা ছাড়া কাউকে যেন বসতে না দেয়!

টিকেট চেকার কথা রাখেন কিন্তু হঠাৎ করেই রবিন নামে একটা ২৩ বছরের ছেলে পাশে বসে। কথা বলতে চায়,কলি কথা বাড়ায় না! ফিল্মের শেষ পর্যায়ে কলি বের হয়ে আসে। ছেলেটা পিছু নেয়, কলি না করে তারপরেও রবিন পিছু ছাড়েনা। গ্রামের সহজ মেয়েটার সামনে রবিন তার মাকে মিথ্যা ফোন করে এবং বলে "মা আমি তোমার বউ পাইছি তুমি কইলে (বললে) আমি তারে নিয়া আসবো" মা সায় দেয় রবিন বোঝায়!

কলি মনে করে একবার দেখেই আসি, মেয়েটা যায় রবিনের সাথে এবং তাঁর জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ সময় ও রাত নেমে আসে। আমাদের দ্রুত তৎপরতায় ধৃত হয় কুলাঙ্গার রবিন! সকালে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করার পূর্বে রবিন ও তার মা কলিকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করে " মা আমার বাসায় তুমি রাজরানী হয়ে থাকবা, আমার পোলারে বিয়া কইরা ফেলো। মামলা কইরা কী হইবো"?

কলি মেয়েটা ফিরে তাকিয়ে বললো "আপনার এই চরিত্রহীন মিথ্যুক ছেলে সুযোগ পেলেই আরো মেয়ের জীবন নষ্ট করবে, আমি তারে এই সুযোগ দেবনা! এই পোলারে বিয়ে করার চেয়ে আমি সারাজীবন বিয়া না করে থাকমু"

আমি শুধু অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখলাম কলি নামে বাসা বাড়িতে কাজ করা অসহায় মেয়েটির অন্যায়কে প্রতিহত করার বলিষ্ঠতা! যে বলিষ্ঠতা অনেকদিন দেখিনি অনেক শিক্ষিত ও তথাকথিত আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন ব্যক্তিত্বের মাঝেও!
কলিরা বিকশিত হয়ে ফুটন্ত গোলাপ হয়ে উঠুক..সমাজ তাদের মূল্যায়ন করতে শিখুক...প্রত্যাশা এটুকুই।

লেখক: সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (ডেমরা জোন)।

(লেখকের ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত)
বিডিপ্রতিদিন/ ১৯ নভেম্বর, ২০১৭/ ই জাহান

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর