১৭ জানুয়ারি, ২০১৮ ১২:২৪

মুক্তিযুদ্ধ করে 'মালপানি' কি পেলাম?

জুয়েল আইচ

মুক্তিযুদ্ধ করে 'মালপানি' কি পেলাম?

মুক্তিযুদ্ধ করে 'মালপানি' কি পেলাম? কি আশ্চর্য্য! যখন মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম, তখন এই জীবনটাই ফেরত পাবো কি না এমন হিসেবও মাথায় আসেনি। কতবার প্রায় মরতে মরতে বেঁচে গেছি! এখন শীতকাল বলে মনে পড়ছে।

বাড়িঘর, লেপকাঁথা, জামাকাপড়, ডালভাত, কিচ্ছু ছিল না। বৃদ্ধ-বৃদ্ধা বাবা-মা, কচি কচি ভাইবোন। অনাহারী। বুকে হাঁটু চেপে বাতাস আর শিশিরের মধ্যে শীতের রাত আর কাটতে চাইতো না। আহারে জীবন!

রিলিফ আসতো। সুস্বাদু পূর্ব ইউরোপিয়ান ছাতু, ক্ষিরের গন্ধি গুঁড়ো দুধ, বিশালকায় মচমচে বিস্কুট।

অতি গরীবের মধ্যে বন্টন করেছি। নিজেরা লজ্জায় নিতাম না। 'ভদ্দরনোক'যে। অসহ্য সে মহত্ব। ক্ষিদের পেটে বুকভাঙা কান্না চেপে রাখা কি অত সোজা! তবে একটা চুরি করা রিলিফের জিনিস নিয়েছিলাম বটে।

পিরোজপুরের এম. এন. এ. (মেম্বার অফ ন্যাশনাল এসেমব্লি) ছিলেন জনাব এনায়েত হোসেন খান। তিনি এক ব্যান্ডের একটা নীল রঙের রেডিও চুরি করে রেখে দিয়েছিলেন।

এক রাত্রে চেলা কাঠের স্তুপের মধ্যে থেকে রেডিওটা বের করে বললেন, এটা কিন্তু রিলিফের না। কাউকে দিয়ে দিও না যেন। তুমি নিজে শুনবে। মনে থাকবে তো?

বেশি ভালোবাসায় আমার চোখ ভিজে যায়। বহু কষ্টে কান্না থামালাম। শব্দ করে কিছু বললে কান্না বেরিয়ে আসতো। মাথা কাৎ করে- 'হ্যাঁ' বললাম।

আহারে, একাত্তরে যাদের জন্মই হয়নি তারা যখন এখনো মুক্তিযোদ্ধার কোটায় নাম লেখায়। হাজার হাজার টাকা তোলে, বিভিন্ন কোটায় সুবিধা আদায় করে; তখন হা করে তাকিয়ে থাকা ছাড়া কিইবা করার থাকে!

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি প্রতিদিন/১৭ ডিসেম্বর, ২০১৭/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর