৫ আগস্ট, ২০১৮ ১৭:৫১

বিবেকের বাইরে যেতে পারি নাই

খোরশেদ আলম

বিবেকের বাইরে যেতে পারি নাই

খোরশেদ আলম

ছোট্ট বন্ধুরা, হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা আর শুভেচ্ছা নিও। তোমাদের প্রতি আমার বা আমাদের কোন অভিযোগ, অভিমান নেই। আমি শুধু বলতে চাই কিছু কথা।

তোমরা যারা নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে, সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবাদে বাংলাদেশ পুলিশের উপর চড়াও হয়েছো। পুলিশকে কটাক্ষ করে অশ্লীল শব্দ চয়ন লেখা ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, লিফলেট নিয়ে দাঁড়িয়েছো, যারা সরকারি পুলিশের গাড়িতে মার্কার পেন, কালি দিয়ে বাজে ভাষা লিখেছো তাদের জ্ঞাতার্থে।

আমাদের মত তোমাদের পরিবারেরও কোন না কোন পুলিশ সদস্য আছে। আবার আমাদের পরিবারেও তোমাদের মত বয়সী ভাই, বোন, ছেলে, মেয়ে, ভাগ্নি, ভাগ্নে রয়েছে। আমরা তোমাদের শত্রুও না। প্রতিপক্ষও না। আবেগের জন্য, ভুলবশত কিংবা না বুঝে, না জেনে তোমরা আমাদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছো।

পুলিশ মানেই খারাপ না, পুলিশ মানেই অবিবেচক কেউ না। ছোট্ট বন্ধুরা, মহান মুক্তিযুদ্ধে পুলিশবাহিনীর অবদান অবিস্মরণীয়। পাকিস্তানী হানাদারদের বিরুদ্ধে নিজের জীবন বিপন্ন করে বাংলাদেশ পুলিশ প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জনের জন্য প্রতিবাদী হয়েছিল।

আমরা প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা। দিনশেষে আমরা মানুষ। আমাদেরও বিবেক রয়েছে। মাঝে মধ্যে আমি নিজেই ভুলে যাই পেশাদারিত্ব মনোভাব। বিবেকের তাগিদে অনেক কিছু করে ফেলি। এতকিছুর উদাহরণ ছোট্ট বন্ধুরা তোমাদেরকে বিশ্লেষণ করে দিতে পারবো না। তবে কয়েকটা কাহিনী বলতে বাধ্য হচ্ছি।

মাঝরাত। দিনের দায়িত্ব শেষে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলাম। কেউ একজন কল করে বললো অজ্ঞান হয়ে একজন আপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকায় পড়ে আছে। তাড়াহুড়া করে মাঝরাতে বের হলাম। গিয়ে দেখি, আমার দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকার বাইরে। বিবেকের বাইরে যেতে পারি নাই। মেডিকেলে নিয়ে নির্ঘুম রাত পার...

৩ মাস পরপর নিয়মিত রক্তদান করি। রক্তদানটা সবসময় চেয়েছি মানবিক কারণে। একইরকম মনে করেছি পেশাগত দায়িত্বটা।

ছোট্ট বন্ধুরা, আমি দীর্ঘদিন ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগে দায়িত্ব পালন করেছি। আমাদেত কাজ রাস্তার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ। খানা-খন্দে ভর্তি রাস্তাঘাট মেরামত আমাদের কাজ না। তারপরও শুধু নিরাপত্তা প্রদানের জন্য, জনসাধারণের জন্য দায়িত্বের বাইরে গিয়েও নিজের হাতে ইট নিয়ে মেইন রোডের বড় গর্ত পূরণ করে নির্বিঘ্ন যাতায়াত করার জন্য কাজ করেছি।

ছোট্ট বন্ধুরা, তোমাদের বয়সী অনেকে সন্ত্রাসীদের হাতে জিম্মি হয়। তোমাদের বাবা-মার নিকট মুক্তিপণ দাবী করে। সেসময় তোমাদের উদ্ধার করার জন্য আমরা যখন মিশনে নামি। তখন কোনভাবেই মনে হয় না তোমরা আমাদের দূরের কেউ। খুব আপনজন মনে হয়। আমরা ব্যর্থ হলে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হই তোমাদের কথা ভেবে।

ছোট্ট বন্ধুরা, অনেক সময় অনেক মেধাবী ছেলেমেয়ে টাকার অভাবে পড়াশোনা করতে পারে না। আমি ব্যক্তিগত ভাবে কয়েক জনকে নিজ দায়িত্ব নিয়ে পড়াশোনার সহায়তা করে আসতেছি দীর্ঘদিন যাবৎ।

এই দেশ, এই শহর, জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অনেক সময় অনেক রাত ঘুমাতে পারি নাই। দায়িত্বের বাইরে অনেকটা দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। আমার মত অসংখ্য এমন পুলিশ কর্মকর্তা জীবনের আনন্দ উপভোগ করতে পারেনি, অন্য কারো মুখের হাসি উপহার দিতে।

তারপরও যখন তোমরা আমাদের গালি দাও। পরিবার নিয়ে বাজে কথা বলো। আমাদেরও কষ্ট লাগে। তোমরা মেধাবী। তোমরা জাতির ভবিষ্যৎ। একদিন দেশ শাসিত হবে তোমাদের মেধায়। তোমাদের শাণিত মেধা কোন প্রপাগান্ডা, কারো কব্জায় না যাক। সুশিক্ষিত হয়ে, মানুষের মত মানুষ হয়ে দেশ সেবায় এগিয়ে যাও। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, তোমাদের কলম হোক শোষণ মুক্তির হাতিয়ার।

তোমাদের উচিত এখন পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়া যেন ভবিষ্যৎ সময়ে তোমাদের মেধা বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে আরো উচ্চ শিখরে নিয়ে যেতে পারে।

লেখক: অ্যাডিশনাল এসপি, বাংলাদেশ পুলিশ

বিডি-প্রতিদিন/০৫ আগস্ট, ২০১৮/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর