৫ অক্টোবর, ২০১৮ ১২:৩৮

'শরণার্থীদের ফেরত নেয়া না নেয়ার সঙ্গে গণহত্যার বিচারের সম্পর্ক নেই'

আলী রিয়াজ

'শরণার্থীদের ফেরত নেয়া না নেয়ার সঙ্গে গণহত্যার বিচারের সম্পর্ক নেই'

আলী রিয়াজ

রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট সমাধানে চীনের পক্ষ থেকে যে ফর্মুলা গোড়া থেকেই দেয়া হচ্ছে তা হচ্ছে দ্বিপাক্ষিক সমাধান। সম্প্রতি নিউইয়র্কে চীনের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশ-মিয়ানমারের বৈঠকের উদ্দেশ্যও তাই। চীন কোনোভাবেই রোহিঙ্গা ইস্যুকে আন্তর্জাতিকীকরণের পক্ষে নয়। এর কারণ একাধিক; মিয়ানমারের, বিশেষত মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর, সঙ্গে চীনের দীর্ঘ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তার অন্যতম। অর্থনৈতিক স্বার্থ আরেকটি। কিন্ত তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এই অঞ্চলে পশ্চিমা দেশগুলোর কোনো রকম প্রভাব বিস্তার রোধ।

চীনের এই সব স্বার্থ এই অঞ্চলের দেশগুলোর জন্যে কতটা লাভজনক বা তার ফলে এই অঞ্চলের দেশগুলোকে কি ভার বইতে হবে সেই বিষয়ে চীনের বিবেচনা সামান্যই। মিয়ানমারের অর্থনীতিতে ক্রমবর্ধমান সংকট দৃশ্যমান। একথা অস্বীকারের উপায় নেই এই অবস্থার একটা কারণ হচ্ছে রাখাইনের পরিস্থিতি। চীনের এবং মিয়ানমারের সরকারের আগ্রহ হচ্ছে দ্রুত একটা জোড়াতালির সমাধানের ব্যবস্থা করে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়িয়ে অবস্থার মোকাবেলা করা। সেই কারণেই চীন এবং মিয়ানমার এক ধরণের উৎসাহ দেখাচ্ছে। আগে কেবল কথা বলার জায়গায় ছিলো।

এখন তার চেয়ে দুই কদম আগাতে চায় – এর বেশি কিছু নয়। কিন্ত তা যে শরণার্থীদের জন্যে সমাধান নয় তা উপলব্ধি করা দরকার। রোহিঙ্গা সমস্যার যে তিনটি দিক আছে সেগুলো পারস্পরিকভাবে সম্পর্কিত হলেও এখন সেগুলোকে আলাদা আলাদা ভাবে বিবেচনা করা এবং সেগুলোকে মোকাবেলা করার জন্যে আলাদা আলাদা ভাবেই বাংলাদেশের অগ্রসর হওয়া দরকার। প্রথম দিক হচ্ছে শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তন; দ্বিতীয় দিক হচ্ছে মিয়ানমারের ভেতরে রাজনৈতিক এবং সাংবিধানিক পরিবর্তনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের মৌলিক নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা; তৃতীয়ত হচ্ছে মিয়ানমারে সংগঠিত গণহত্যার বিচারের ব্যবস্থা করা।

প্রথমটি যদিও দ্বিপাক্ষিকভাবে সমাধান করতে হবে, পরেরগুলো দ্বিপাক্ষিকভাবে সমাধান সম্ভব নয়। মিয়ানমারের ভেতরের সংস্কার ছাড়া যে শরণার্থীদের ফেরত পাঠানো যাবে না সেটা বোধগম্য। অন্যদিকে গণহত্যার বিচারের দায়িত্ব আন্তর্জাতিক সমাজের। ফলে চীনের মধ্যস্থতায় যে কোনো ধরনের দ্বিপাক্ষিক সমাধানের সময়ে বাংলাদেশকে বলতেই হবে যে চীন তার প্রভাব খাটিয়ে অভ্যন্তরীণ সংস্কারের পদক্ষেপ নিক।

আর অন্যদিকে শরণার্থীদের ফেরত নেয়া না নেয়ার সঙ্গে গণহত্যার বিচারের সম্পর্ক নেই। কোনোভাবেই যেন চটজলদি কিছু শরণার্থীকে দেশে ফেরত নেবার কারণে মিয়ানমার এই অপরাধের দায় থেকে মুক্তি লাভ না করে সেটা লক্ষ্য রাখার বিষয়।

লেখক: যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর