২০ অক্টোবর, ২০১৮ ১৫:৫১

ছেলেটা তো অনশন করছিল

আমিনুল ইসলাম

ছেলেটা তো অনশন করছিল

ছেলেটা তো অনশন করছিল।

সে তো ভাংচুর করছিল না, বোমা মারছিল না কিংবা গ্রেনেড মারছিল না।

আপনারা এই ছেলেটারও একটা আলাদা পরিচয় খুঁজে বের করলেন?

প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে কিংবা ফাঁস হবার গুঞ্জন তো আমরা সবাই শুনতে পেয়েছি।

আপনাদের তো দায়িত্ব ছিল হয় প্রমাণ করা- প্রশ্ন ফাঁস হয়নি কিংবা পরীক্ষা টা বাতিল করা।

এর কোন কিছু'ই আপনারা করছিলেন না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছর'ই বলে-কয়ে প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যাচ্ছে; এর জন্য তো পুরো বাংলাদেশের মানুষ উচিত ছিল রাস্তায় আন্দোলন করা।

আমরা কেউ সেটা করছিলাম না।

এই ছেলে'টা, যে নিজেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করছে; সে আমাদের চোখে আঙ্গুল দেখিয়ে দিয়ে- অনশন করছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তা-ব্যক্তিদের কাছে দাবী নিয়ে- হয় পরীক্ষা বাতিল করুন, নয়ত প্রমাণ করুন পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়নি।

আর আপনারা কি করলেন?

আপনাদের প্রোক্টর মশাই বলে বসলেন- এই ছেলে মাদ্রাসায় পড়াশুনা করেছে। এর ব্যাকফ্রাউন্ডে সমস্যা আছে!

এর মানে কি?

কেউ মাদ্রাসায় পড়লে'ই তার সমস্যা আছে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কি করে এমন মন্তব্য করে বসলেন আমার ঠিক জানা নেই।

আমার ক্লাস মেট'দের অনেকে'ই তো মাদ্রাসা থেকে পড়ে এসছিল। ওদের অনেকে আবার খুব ভালো ছাত্র'ও ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে। অনেকে গান-বাজনা করত, সংস্কৃতি'র চর্চা করতো।

আমার ক্লাস মেট'দের কথা বলছি কেন, বিদেশে আমার এখানকার ইউনিভার্সিটি'র এক বাংলাদেশি ছাত্র যখন বছর খানেক আগে এখানে পড়তে এসছে, প্রথম যেদিন ওর সঙ্গে কথা বলেছি; এতো চমৎকার করে ইংরেজি বলছিল, আমি মন্ত্র-মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম।

ছেলেটা যেমন স্মার্ট, গানও গায় অসাধারণ।

এখানে আসার পাঁচ মাসের মাথায় খুব ভালো একটা চাকরীও সে পেয়ে গিয়েছে একটা সফটওয়্যার কোম্পানি'তে।

এই ছেলে কিন্তু মাদ্রাসায় পড়াশুনা করেছে। শুধু তাই না, সে কোরানে হাফেজ।

সে একজন মুসলিম, কোরানে হাফেজ এবং মাদ্রাসায় পড়াশুনা করেছে; এই জন্য বিদেশে এডমিশন পেতে কিংবা ভালো একটা চাকরী পেতে তাকে কোন সমস্যা'র মাঝ দিয়ে যেতে হয়নি কিংবা কেউ তাকে বলে বসে'নি- আরে ও তো মাদ্রাসার ছাত্র। ওর ব্যাকগ্রান্ডে সমস্যা আছে!

অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটা জায়গায়, ছেলেটা একা একা'ই অনশন করছিল; এবং সে আপনাদের'ই ছাত্র। তার ছাত্র পরিচয়'টা আমাদের কাছে মুখ্য হলো না, আপনাদের কাছে বড় হয়ে দেখা দিল- এই ছেলে মাদ্রাসায় পড়াশুনা করেছে। সুতরাং তার সমস্যা আছে!

আর মাদ্রাসায় পড়াশুনা করা যদি অন্যায় হয়, তাহলে আপনারা এটা চালু রেখেছেন কেন? আর এদের ভর্তি'ই বা নিচ্ছেন কেন? সোজা বলে দিন- মাদ্রাসায় পড়াশুনা করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেয়া যাবে না!

এটা যে এক ধরনের সাম্প্রদায়িকতা সেটা বুঝার ক্ষমতা কি আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট শিক্ষকদের আদৌ আছে? এই কথা আপনাদের প্রোক্টর কি করে বলে বসলেন?

আপনাদের পরীক্ষার প্রশ্ন বছরের পর বছর ফাঁস হবে আর সেটার অহিংস প্রতিবাদ করতে গেলেও আপনারা ব্যাকগ্রাউন্ড খোঁজা শুরু করবেন!

বাহ কি চমৎকার সব ব্যাপার!

আপনাদের ব্যাকগ্রাউন্ড খুঁজতে গেলে তো আবার কেঁচো খুঁড়তে সাপ বের হয়ে আসবে!

আপনারা একেকজন কি করে শিক্ষক হন কিংবা প্রোক্টর, প্রভোস্ট বা অন্যান্য পদ পান, তার যদি একটা গবেষণা করা যায়; তাহলে মনে হয়- কেঁচো খুঁড়তে সাপ না; আস্ত জলহস্তী বের হয়ে যাবে!

আপনারা অন্যের গবেষণা পত্র নিজের বলে চালিয়ে দিয়ে ধরা খান, এরপরও আপনাদের কিছু হয় না।

আপনাদের ব্যাকগ্রাউন্ড এরপরও ফুলের মতো পবিত্র'ই থাকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নাম-গন্ধ তো পৃথিবীর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন তালিকায় এমনিতে'ই পাওয়া যায় না। এভাবে প্রতিবছর পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হতে থাকলে, আর কিছুদিন পর আপনাদের নাম-গন্ধ বাংলাদেশেও খুঁজে পাওয়া যাবে না।

মানুষজন তখন বলবে- ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়! ওখানে তো টাকা দিয়ে প্রশ্ন কিনে পড়াশুনা করা যায়!

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)


বিডি প্রতিদিন/২০ অক্টোবর ২০১৮/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর