২৫ অক্টোবর, ২০১৮ ১০:৪৬

সৌদি কর্তৃপক্ষ যুবরাজকে বাঁচানোর জন্য নানান গল্প তৈরি করছে

আমিনুল ইসলাম

সৌদি কর্তৃপক্ষ যুবরাজকে বাঁচানোর জন্য নানান গল্প তৈরি করছে

আমিনুল ইসলাম

ভদ্রলোক সাংবাদিক ছিলেন। নিজ দেশে নিরাপদে থাকতে পারছিলেন না, তাই আমেরিকায় গিয়ে আশ্রয় নেন। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হলো না! বিয়ে করতে চাইছিলেন বাগদত্তা'কে। এর জন্য দেশ থেকে কিছু কাগজপত্রের প্রয়োজন। কিন্তু দেশটা যে সৌদি আরব! তাও আবার তিনি লিখতেন বর্তমান যুবরাজের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে। তাই দেশে যাওয়া সম্ভব হচ্ছিলো না। সৌদি আরবের কনস্যুলেট অফিস আছে তুরস্কের ইস্তানবুলে। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন তুরস্কে নিজ দেশের দূতাবাসে গিয়ে কাগজগুলো নিয়ে আসবেন। তাহলে অন্তত দেশে যেতে হবে না। তার বাগদত্তা বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তিনি ঢুকলেন নিজ দেশ অর্থাৎ সৌদি দূতাবাসে। সেই যে ঢুকলেন, আর বের হলেন না। তার বাগদত্তা এরপর বার বার অভিযোগ করেছেন, সাংবাদিক জামাল খাশোগি সৌদি দূতাবাসে ঢুকে আর বের হননি।

কিন্তু সৌদি কতৃপক্ষ অস্বীকার করে বলেছে, জামাল খাশোগি দূতাবাস থেকে সেই দিনই বের হয়ে গেছে। এরপর ১৮ দিন পার হয়ে গেছে। এর মাঝে তুরস্কের সরকার অবশ্য বার বার বলেছে, জামাল খাশোগি'কে সৌদি দূতাবাসে হত্যা করা হয়েছে। সৌদি যুবরাজ আর দূতাবাস সবাই বার বার হত্যা করার ব্যাপারটা অস্বীকার করে এসছে।

১৯ দিনের মাথায় যখন তুরস্ক সরকার একটু একটু করে প্রমাণ হাজির করা শুরু করেছে, তখন সৌদি দূতাবাস বলেছে, জামাল খাশোগির সঙ্গে হাতাহাতির এক পর্যায়ে তিনি মারা যান! অর্থাৎ তার মৃত্যুর বিষয়টি তখন সৌদি কর্তা ব্যক্তি স্বীকার করে নেন। কিন্তু তাকে হত্যা করা হয়েছে সেটা তারা তখনও স্বীকার করেনি।

এরপর আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে এই ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, আমাদের মনে হচ্ছে সৌদি কতৃপক্ষ সত্যি কথাই বলছে। তাদের কথায় যুক্তি আছে। অথচ এই সৌদি আরবই প্রথমে অবশ্য বলেছে, জামাল খাশোগি বের হয়ে গেছেন সেই দিন'ই! এরপর যখন প্রশ্ন আসে- তাহলে তার ডেড বডিটার কি হয়েছে?

আস্তে আস্তে জানা গেল, তাকে হত্যা করার জন্য সৌদি আরব থেকে তাদের যুবরাজের স্পেশাল গোয়েন্দাদের একটি দল জামাল খাশোগি'কে হত্যা করার জন্য আগে থেকেই তুরস্কে সৌদি দূতাবাসে অবস্থান করছিল। ওই সাংবাদিক দূতাবাসে ঢুকার পর তাকে হত্যা করে কেটে টুকরো টুকরো করে সুটকেসে ভোরে তার মৃতদেহ ওই গোয়েন্দারা নিজেদের প্রাইভেট বিমানে করে নিয়ে যায়!

তুরস্ক কতৃপক্ষ বার বার প্রমাণ হাজির করার হুমকি দেওয়ার পর সৌদি আরব শেষমেশ স্বীকার করেছে, ওই সাংবাদিক'কে হত্যা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তারা এও বলেছে, যুবরাজ এই সবের কিছুই জানে না। সৌদি গোয়েন্দারা এই কাজ করেছে!

এখন প্রশ্ন হচ্ছে- সৌদি গোয়েন্দারা নিজ থেকে কোন দুঃখে নিজ দেশেরই একজন সাংবাদিককে হত্যা করার জন্য আরেক দেশে উড়ে যাবে? খুব স্বাভাবিক ভাবেই বুঝা যাচ্ছে, সৌদি যুবরাজ নিজে ওই ভদ্রলোকের হত্যার সঙ্গে জড়িত। অথচ সৌদি কর্তৃপক্ষ এখন যুবরাজকে বাঁচানোর জন্য নানান গল্প তৈরি করছে।

এই প্রসঙ্গে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে আবার প্রশ্ন করা হয়েছে, যে দেশ নিজ দেশের নাগরিককে নিজ দেশের একটা দূতাবাসে হত্যা করতে পারে, তাদের বিরুদ্ধে আপনারা কি ব্যবস্থা নিবেন?

উত্তরে ট্রাম্প বলেছেন, এটা অবশ্যই একটা জঘন্য ঘটনা। তবে এও মনে রাখতে হবে সৌদি আরব আমাদের বন্ধু। এই মাসেই ওরা আমাদের কাছ থেকে নানান জিনিস কেনার জন্য ৪০০ বিলিয়ন ডলারের অর্ডার করেছে। এছাড়া এরা ১৫০ বিলিয়ন ডলারের সামরিক অস্ত্রও কিনবে আমাদের কাছ থেকে। তাই ওদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের দরকার আছে।

হঠাৎ মনে হলো- আচ্ছা, সৌদি আরব এইসব অস্ত্র কিনে কাদের বিরুদ্ধে ব্যাবহার করবে? হয়ত ইয়েমেনের মানুষের বিরুদ্ধে কিংবা এমন অন্য কোন দেশের বিরুদ্ধে। আচ্ছা, এই যে সিরিয়ার এখনও প্রতিদিনই মানুষ মারা যাচ্ছে, হাজার হাজার মানুষ শরণার্থী হচ্ছে; এই সিরিয়ানদের দোষটা কি ছিল?

ওদের রাসায়নিক অস্ত্র আছে, এই বলেই তো আমেরিকা হামলা শুরু করেছিল মনে হয়। সেই রাসায়নিক অস্ত্রগুলো তাহলে কোথায়?

আমরা যারা ইউরোপে থাকি, তাদের কাছে রায়ান এয়ার নামে এয়ারলাইন্সটির বেশ নাম ডাক আছে। বাজেট এয়ার লাইন্স হওয়াতে কম টাকায় ভ্রমণ করা যায়।

গতকাল বিবিসির এক খবরে দেখালাম, এই রায়ান এয়ারলাইন্সের এক বিমান ইউরোপের এক শহর থেকে আরেক শহরে যাচ্ছিলো। তো সেই বিমানে এক সাদা চামড়ার লোকের সঙ্গে এক কালো চামড়ার নারীর সিট পড়ায় সাদা চামড়া ওই লোক যা ইচ্ছে তাই বলেছে ওই নারীকে। এর মাঝে কিছু ভাষা নাকি ছিল খুবই বর্ণ বৈষম্যমূলক। এই যেমন- "কালো ভুত বা কুচ্ছিত মানুষ, তুমি আমার সঙ্গে বসতে পারবে না। "

অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, ওই বিমানে থাকা কেউ এর তেমন কোন প্রতিবাদ করেনি। এমনকি এয়ারলাইন্স কতৃপক্ষেরও কেউ তেমন কোন প্রতিবাদ করেনি।

এত সব বাজে ভাষা ব্যাবহার করার পরও রায়ান এয়ারলাইন্স ওই সাদা চামড়ার যাত্রীকে বিমান থেকে নামিয়ে না দিয়ে কিংবা পুলিশে না দিয়ে সম্মানে সাথে তার গন্তব্য পৌঁছে দিয়েছে।

ওই কালো চামড়ার যাত্রী এরপর অভিযোগ করে বলেছেন, আমি যদি এমন ভাষায় কথা বলতাম, তাহলে এয়ারলাইন্সের লোকজন আমাকে কখনোই ওই ফ্লাইটে ফিরতে দিতে না এবং আমাকে বিমান থেকে নামিয়ে পুলিশে দিত। অথচ ওই যাত্রীর কিছুই হয়নি।

সৌদি সাংবাদিককে হত্যার ঘটনা, এক আফ্রিকান নারীকে ইচ্ছে মতো বর্ণ বৈষম্যমূলক গালি দেয়ার ঘটনা আলাদা মনে হলেও এক জায়গায় এই ঘটনাগুলোর অনেক মিল।

সৌদি কতৃপক্ষ দিনে-দুপুরে একজন খ্যাতনামা সাংবাদিককে দূতাবাসে হত্যা করার পরও স্রেফ টাকার জোরে সবার কাছেই মিত্র এবং ধোয়া তুলসি পাতাই থেকে যাচ্ছে। ঠিক যেমনটা হাজারো গালি দেয়ার পরও স্রেফ সাদা চামড়া হওয়ার জন্য ওই ভদ্রলোক নিরাপদেই তার বাড়ি ফিরে গেছেন। 

দেশে দেশে যুদ্ধ বাঁধিয়ে এবং প্রকাশ্যে অস্ত্র বিক্রি করে বেড়ানো আমেরিকা হয়ে যাচ্ছে শান্তি প্রিয় সভ্য জাতি; তাদের মিত্র দেশ সৌদি আরব সেই অস্ত্র কিনে হয়ে যাচ্ছে পুত-পবিত্র রাষ্ট্র! সিরিয়া আর ইয়েমেনের মানুষজন কিছু না করেও হয়ে যাচ্ছে সন্ত্রাসী। তাদের কপালে জুটে আকাশ থেকে নেমে আসা আমেরিকান বোমা কিংবা হাওয়া (আমেরিকা-সৌদি জোট) থেকে নেমে আসা স্মরণকালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ!

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি-প্রতিদিন/২৫ অক্টোবর, ২০১৮/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর