২৫ অক্টোবর, ২০১৮ ১৬:৩৫
ফেসবুকে লাইভে

এই নেতা থাকলে ছবি বানানো সম্ভব না: আব্দুল আজিজ

অনলাইন ডেস্ক

এই নেতা থাকলে ছবি বানানো সম্ভব না: আব্দুল আজিজ

জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আব্দুল আজিজ। এ প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে আগামী নভেম্বরে মুক্তি পাচ্ছে সিয়াম-পূজা অভিনীত 'দহন' ছবিটি। ছবির গান 'হাজীর বিরিয়ানি' প্রকাশের পরপরই নানা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় ফেসবুকে লাইভে ছবির অন্যতম অভিনেত্রী রাজ রিপাকে পরিচয় করিয়ে দেন আব্দুল আজিজ। এসময় ছবির গান নিয়ে বিতর্ক, বর্তমানে বাংলাদেশে চলচ্চিত্রের অবস্থাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি।

'দহন' ছবির গান নিয়ে বিতর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, এ ছবিতে একটা সময়কে ধরা হয়েছে। বলা হচ্ছে 'হাজীর বিরিয়ানি' গানের কথা মাদক বিরোধী অভিযানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সবাইকে বলতে চাই এ ছবির নায়ক সিয়াম মাদবিরোধী অভিযানের শুভেচ্ছাদূত। আমরা এখানে মাদককে সমর্থন করিনি। ডাকাত ডাকাতি করে, চোর চুরি করে কিন্তু নেশাখোর সব করতে পারে। এ ছবির চরিত্রটা কত খারাপ তা প্রতিষ্ঠিত করতেই এ গান। কোনো বিতর্ক বা কাউকে আঘাত দেয়ার জন্য 'হাজীর বিরিয়ানি' গানটি নির্মাণ করা হয়নি। ছবি দেখলেই বুঝবেন এ গানটার আসলে দরকার ছিল। এর আগে 'পোড়ামন টু' ছবিতে সালমান শাহ অভিনীত একটি ছবির গানের ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। কিন্তু ছবিটি দেখার পর সবাই বলেছে, 'না... গানটার দরকার ছিল।'

রাজশাহীর উপহার সিনেমা হল ভেঙে ফেলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা চলচ্চিত্র প্রযোজক, চলচ্চিত্র পরিবেশন করি। হলের কাজ আমাদের না। তারপরও অনেক জায়গায় যে হলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, চালাতে পারছে না, আমরা ভাড়া দিয়ে ভর্তুকি দিয়ে চালাচ্ছি। সিনেমার অসম্ভব রকম দরকার। বাংলাদেশে সিনেমা বন্ধ হলে সামাজিক অবক্ষয় নামবে। সিনেমা মানুষকে শেখায়। খেয়াল করে দেখবেন ছবির নায়ক সবসময় ইতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করে। মানুষকে ভাললাগার বিনোদন দেয় সিনেমা। সিনেমা বন্ধ হলে দেশের কৃষ্টি-সংস্কৃতিতে ধস নামার শঙ্কা থাকে। এ পর্যন্ত বন্ধ হতে যাওয়া ২৩টি হল আমরা চালু করেছি। রাজশাহীর উপহার সিনেমা হল যখন বন্ধ করে দেয়া হয় তখন একটা চিঠি এসেছিল। তাতে লেখা ছিল পর্যাপ্ত কনটেন্ট মানে ছবির অভাবে সিনেমা হলটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এটা আমার অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। বাংলাদেশ বছরে কমপক্ষে ৫০টা ছবি বছরে দরকার। না থাকলেও ৪০টা ছবি দরকার, এর ভেতরে ১২টি ছবি অবশ্যই সুপারহিট হতে হবে। না হলে হল টিকে থাকবে না। 

তিনি আরও বলেন, দর্শক ফিরিয়ে আনতে, হল চালু রাখতে গত সাত বছর ধরে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। 'ভালোবাসার রঙ' দিয়ে শুরু করেছিলাম। দর্শকও আসলো। নতুন অনেক মুখ উপহার দিলাম। ছবির সংখ্যা বাড়াতে যৌথ প্রযোজনায় গেলাম। ১২ মাসে ১২টা ছবি যেন দিতে পারি হলকে... প্রতি মাসে একটা ছবি হিট করলেই হল টিকে থাকতে পারে। একটা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ৫/৬টার বেশি ছবি বানানো সম্ভব না। ছবি শুধু টাকা থাকলেই বানানো যায় না। গল্প লাগবে, গান লাগবে, মেধা লাগবে, এটার পেছনে খাটতে হবে, সময় দিতে হবে। একটা ছবি তৈরি করতেই তো দুই মাস চলে যায়। 'দহন' এর গল্প প্রস্তুত করতে আমাদের ১ বছরের ওপর লেগেছে। পরে যৌথ প্রযোজনায় গেলাম। ওখানে আমার মেধা লাগাতে হয় না। ওরা গল্প দেয়, আমি অনুমোদন করে দিই। কখনো আমি গল্প দিতাম ওরা কাজ করতো। যৌথ প্রযোজনা বন্ধ করতে এত আন্দোলন, আপনারা জানেন যে একটা গোষ্ঠী আছে... যারা কাজ করতে পারছে না, কাজের সুযোগ পাচ্ছে না... কারণ তারা কাজের অযোগ্য। সিনেমা কী হচ্ছে না? শাকিব কী কাজ করছে না, রোশান-আরিফিন শুভ-সিয়াম কী কাজ করতেছে না? এটা বাণিজ্যক জগত, এখানো ব্যক্তিগত ভালোবাসা দিয়ে টিকে থাকা যাবে না। দর্শক চাইলেই আপনি পর্দায় আসতে পারবেন। দর্শক না চাইলে আপনি যতই নেতা হন একটা সমিতির... আপনি ভাবছেন সমিতির নেতা হয়ে আপনি বড় হিরো হয়ে যাবেন... ভোট নিয়ে ক্ষমতায় আসতে পারেন কিন্তু বড় পর্দায় কাজ করতে হলে দর্শকের ভালোবাসা লাগবে। আপনি ভালো না মন্দ তা বড় বিষয় নয়, দর্শকের কাছে আপনার গ্রহণযোগ্যতাই বড় বিষয়।

তিনি আরও বলেন, যৌথ প্রযোজনায় ছবি নির্মাণে যে নীতিমালা হলো সেটা দিয়ে কোনো ছবি নির্মাণ সম্ভব না। তারপরও নিরীক্ষামূলকভাবে এ আইনের আলোকে একটা ছবি করতে গেলাম, সেটা হল 'প্রেম আমার টু'। ছবির সব প্রস্তাব প্রিভিউ কিমিটিতে পাশ হয়, তথ্য মন্ত্রণালয়ও সেটার অনুমোদন দেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছবিটির শুটিং আটকে দেয়া হয়। তাই আমরা আর কোনো যৌথ প্রযোজনার ছবি করছি না। হল মালিকরাও এটা জানে। জাজ বছরে ৪/৫টার বেশি ছবি করতে পারবে না। এরপরও এ ৪/৫টা ছবি করতে গেলেও প্রচুর বাধা দেয়। সেন্সর বোর্ডে বাধা দেয়। আমাদের চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি, ওনার চেষ্টা থাকবে সরকারি আমলাদের কাছ থেকে কীভাবে ছবিটা পাশ করানো যায়। উল্টো উনিই বাধা দেয়। বাংলাদেশের ছবি, ওনার সমিতির মেম্বারের ছবিতে ওনি ভেটো দিচ্ছেন। আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা এমন একজন নেতা পেয়েছি। এই নেতা থাকলে ছবি বানানো সম্ভব না। যদি ভালো নেতৃত্ব আসে... আমরা তো প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান, নীতি তৈরি করে নেতারা, তারা এমনভাবে নীতিমালা তৈরি করছে যে মনে হচ্ছে জাজ যা করছে তাই ভুল। অথচ জাজ যে ইন্ড্রাস্ট্রিটা যে ধরে রাখছে... আমি নিশ্চিত একবছর পর ওনারাই এসে বলবে প্লিজ আপনারা ছবি বানান।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা  

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর