৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ ১২:০২

নির্বাচন মানে নির্বাচন!

আনিসুর রহমান (মিঠু)

নির্বাচন মানে নির্বাচন!

আনিসুর রহমান (মিঠু)

অভিমান, অভিযোগ ঝেড়ে ফেলে মাঠে নামতে হবে সবাইকে এবং অচিরেই...! দেশব্যাপী অনেক রাজনৈতিক কর্মীর প্রত্যাশা সফল হয়নি; অনেকেই পাননি যথাযথ মূল্যায়ন। রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যোগ্যদের পেছনে ফেলে অযোগ্যরা এগিয়ে গেছে বহুদূর- আমি মানি একথা, বিশ্বাসও করি।

অনেকেই ভীষণ হতাশ- বঙ্গবন্ধুর আদর্শের যথাযথ অনুসরণ নেই দেখে! তরুণ-তরুণীরা জানেন না- বঙ্গবন্ধুর আদর্শ কী জিনিস, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে কী; দেশপ্রেম নিজের ভিতর কিভাবে লালন করতে হয়! বিষয়টি কতোই না পরিতাপের- আমার কাছে!

মানবতা, মানবাধিকার, নাগরিক অধিকার- শব্দগুলোর সাথে পরিচিত হলেও নিজের মধ্যে এসবের প্রায় কিছুই লালন করছেন না নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক কর্মীরা! বিষয়টি কতোই না কষ্টের- আমার কাছে!

এসবের কারণও আছে- নবীনদের রাজনৈতিক জ্ঞানে পরিপক্ক করার দায়িত্ব পালন করেছেন এবং করছেন- অযোগ্য, অথর্ব, মেধাহীন, রুচিহীন কিন্তু সম্প্রতি ধনবান- এমন সব নেতারা! লিখতেও তো বুকে হাহাকার জাগে- আমার!

ভদ্র পরিবার থেকে আসা একজন মেধাবী ছাত্র রাজনীতি করতে এসে এসব নেতাদের যখন শিক্ষক হিসেবে পান- তখন তিনি ব্যথিত না হয়ে পারেন না! তিনি তখন নিজে থেকে দূরে চলে যান! তার স্থান তখন দখল করে নেয় আদর্শহীন, রুচিহীন, সুযোগসন্ধানী আর বখে যাওয়া তরুণ বা তরুণী! রুজি-রোজগারই থাকে যার একমাত্র আদর্শ! এদের বিক্রয় মূল্যও হয় অতি সামান্য! এসব জনসমক্ষে জানাতে লজ্জা লাগে; বড়ো লজ্জা লাগে- আমার!

এসব নানাবিধ কারণে অনেকেই তাদের প্রিয় সংগঠনের উপর বিরক্ত অথবা রেগে আছেন, থাকতে পারেন! তাছাড়া নানা রকম না পাওয়ার বেদনা এবং বঞ্চণার বিষয়তো আছেই! সবমিলিয়ে দুঃখ নিয়ে তারা বসে আছেন নিরাপদ দূরত্বে! কতোই না ক্ষতির বলে মনে হয় বিষয়টি- আমার কাছে!

আমি মনে করি, এইসব মানুষদের ভেবে দেখা উচিৎ- কী কী পেয়েছেন আপনারা? হয়তো ব্যক্তিগতভাবে আপনি কিছু পাননি, কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে আপনি কি কিছুই পাননি? তথ্য প্রযুক্তিতে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন; বিদ্যুৎ, সড়ক, যোগাযোগ, ক্রীড়া, শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়েছে আজ আপনার দেশ- বাংলাদেশ! কলেজ আর বিশ্ববিদ্যায়গুলোতে ভর্তি-বাণিজ্য শব্দটাই ভুলে গেছে মানুষ!

বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ছিল আমার পুরো জীবনের সবচেয়ে বড়ো রাজনৈতিক প্রত্যাশা! ৯১ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়া যদি 'ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স' বাতিল করতেন, আমি হয়তো সেই মুহূর্তেই রাজনীতি ছেড়ে দিতাম!

এ সরকার ক্ষমতায় বলেই বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার পেয়েছি আমরা। রাজাকারদের ফাঁসি হয়েছে! তারেক রহমানের মত নেতিবাচক ব্যক্তি পালিয়ে আছে! জঙ্গীরা প্রশ্রয় তো পাচ্ছেই না- উল্টো নির্মূল হচ্ছে- এই বিষয়গুলো কি আমাদের ভীষণ আত্মতৃপ্তি দিচ্ছে না? তবে আরো বেশি তৃপ্তি পেতাম- যদি প্রত্যাশিত সুশাসন পেতাম, কোন অপদার্থকে মন্ত্রী হিসেবে দেখতে না পেতাম, জনগণকে কেউ হয়রানি না করতো, মিথ্যা অভিযোগে কেউ কাউকে জেলে পাঠাতে না পারতো, পুলিশি হয়রানি না থাকতো...।

সুনির্দিষ্ট নির্বাচনী আইন নেই বলে এবং তথ্য প্রযুক্তি আইনকে অযৌক্তিক মনে হওয়ায় অনেকের মনে ক্ষোভ আছে। এ আইনে যারা জেলে আছেন- এদের মধ্যে শতকরা পঁচানব্বই ভাগ সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও কর্মী।

মানুষকে কথা বলতে বাধা দিলে জনপ্রিয়তা নষ্ট হয়- একথা বোঝার ক্ষমতা থাকা উচিৎ সরকারের। আইন প্রণয়নের আগে ভাবা উচিৎ- আমরাও একদিন বিরোধী দল হতে পারি! 'রোজ কেয়ামত' পর্যন্ত কেউ ক্ষমতায় থাকে না, সম্ভবও নয়...!

আমি বলতে চাই, সবকিছু ভুলে গিয়ে তারপরও মাঠে নামতে হবে সবাইকে। তা না হলে উল্টো পথে হাঁটতে পারে প্রিয় স্বদেশ! বন্ধ হতে পারে সকল উন্নয়নের অগ্রযাত্রা! আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে ভয়ঙ্কর জঙ্গীবাদ আর সাম্প্রদায়িকতা!

আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আগামীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে উন্নয়নের চাইতেও সুশাসনের প্রতি বেশী মনোযোগী হবেন প্রিয় নেত্রী। কারণ, তিনিই আমাদের 'মাহাথির মোহাম্মদ'! কারণ, তিনি হেরে গেলে, হেরে যাবে বাংলাদেশ!

লেখক: স্পেশাল পিপি জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল কুমিল্লা এবং সাবেক সহ-সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় উপ-কমিটি।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি-প্রতিদিন/০৫ ডিসেম্বর, ২০১৮/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর