৩ জানুয়ারি, ২০১৯ ১৫:১৮

আমার বন্ধু লিয়াকত...

আশরাফুল আলম খোকন

আমার বন্ধু লিয়াকত...

লিয়াকত

লিয়াকতের সঙ্গে আমার পরিচয় ১৯৯৫ সালে। উদীয়মান তরুণ ছাত্রনেতা। গাজীপুর জেলা সদরে বাড়ি, জেলা পরিষদ অফিসের সাথেই। তখন সে গাজীপুরের কাজী আজিমুদ্দিন কলেজের ছাত্র। বিএনপি তখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। লিয়াকত বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সৈনিক, ছাত্রলীগের উদীয়মান নেতা। সরকার বিরোধী ছাত্র সংগঠনের কর্মী হলেও কলেজ ক্যাম্পাসে তার ব্যাপক দাপট। খুব সাহসী ছিল লিয়াকত। তারা ছয়টি ভাই ব্যাপক সাহসী, সবাই রাজনীতিতে সক্রিয়। লিয়াকতের ছোট ভাইটি সর্বশেষ গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ছিল। 

সম্ভবত ২০০০-২০০১ সালে লিয়াকত আজিমুদ্দিন কলেজ ছাত্রসংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়। আমাদের আরেক বন্ধু আরিফ একই সংসদের জিএস নির্বাচিত হয়। আরিফ পরিবর্তিতে গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়। প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতিতেও তাদের দুইজনের মধ্যেও সম্পর্ক ছিল খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ। সেই বিষয়ে পরে আসছি... 

২০০১ এর নির্বাচনের পর বিএনপি-জামাত পুরো গাজীপুরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। হত্যা নির্যাতন মামলা মোকদ্দমা ছিল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নিত্যদিনের সঙ্গী। শত অত্যাচারের মুখেও লিয়াকত-আরিফ’রা গাজীপুর ছেড়ে যায়নি। প্রতিরোধ-প্রতিবাদ করেছে, মামলা খেয়েছে, হামলার শিকার হয়েছে। খুব বেশি সমস্যা হলে ঢাকায় এসে অনেকের সঙ্গে আমার ইস্কাটনের বাসায় এসে থাকতো। আমার বাসাটি দুই রুমের হলেও এমনও দিন গেছে ১৪/১৫ জন একসঙ্গে ঘুমাতো বালিশ কাঁথা শেয়ার করে। 

খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু হলেও যোগাযোগ কম ছিল। কিছু বন্ধুত্ব আছে বিশ্বাসের, আত্মার সম্পর্কের। যোগাযোগের মাত্রা সেখানে মুখ্য বিষয় নয়। আরিফ যখন গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হয় ওই সময় লিয়াকতও সভাপতি প্রার্থী ছিল। আমাকে শুধু বলেছিলো, আমি জানি আরিফ না থাকলে তুমি আমার জন্যই চেষ্টা করতা। এই বিশ্বাস তার ছিল। লিয়াকত জেলা ছাত্রলীগের এক নম্বর সহ-সভাপতি হয়েছিল। আবার ওর ভাই এরশাদ যখন গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হয় তখন শুধু বলেছিলো, “বন্ধু আমাকে তো নেতা বানাতে পারোনি, আমার ভাইটার জন্য একটু চেষ্টা করো। আরিফ ছিল বলে আমার জন্য তো তখন চেষ্টা করতে পারোনি।” 

এই বিশ্বাস আমারও ছিল যে আমার যেকোনো প্রয়োজনে লিয়াকতকে পাশে পাবো। 

লিয়াকত ছিল শহীদ আহসানুল্লাহ মাস্টারের অন্ধ ভক্ত। এই আসন থেকে চতুর্থবারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়েছেন স্যার এর ছেলে জাহিদ আহসান রাসেল। নির্বাচনের পুরোটা সময় নির্বাচনের ক্যাম্পাইন নিয়েই ব্যস্ত ছিল লিয়াকত। এর মধ্যেও একদিন কথা হয়েছে। বললো দোস্ত সারাদেশে কি হবে জানি না, তবে আমরা বেঁচে থাকতে গাজীপুরে বিএনপি জামাত সুবিধা করতে পারবে না।   

আসলেই গাজীপুরে বিএনপি-জামাত সুবিধা করতে পারেনি। তবে গাজীপুরে লিয়াকতকে তারা হত্যা করতে পেরেছে। হ্যাঁ লিয়াকত, আমার বন্ধু লিয়াকত। যাকে নির্বাচনের দিন দুপুর বেলা ভোট কেন্দ্রের সামনে স্ব-দলবলে এসে বিএনপি-জামাত কুপিয়ে হত্যা করেছে। যেমন সারাদেশে আওয়ামী লীগের ১৫ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। 

লিয়াকতের অপরাধ ছিল সে বিএনপি জামাতের সন্ত্রাসীদের ভোট কেন্দ্র লুট করতে দেয়নি, বাধা দিয়েছিল। লিয়াকতের হয়তো বিশ্বাস ছিল বাড়ির পাশের কেন্দ্রে প্রতিবেশী বিএনপি জামাতিরা হয়তো তাকে আক্রমণ করবে না। হয়তো সে জানতো না, খুনি অমানুষদের কাছ থেকে ভালো কোনো কিছুর প্রত্যাশা থাকতে নেই। 

দলের নিবেদিতপ্রাণ কর্মী বন্ধু লিয়াকতের মৃত্যুর শোক হয়তো আমরা একদিন ভুলে যাবো, এটা বাস্তব সত্য। কিন্তু নির্মম সত্য হলো, তার তিন বছর বয়সী মেয়ে, আর দেড় বছরের শিশু ছেলেটি বাবার আদর ছাড়া বড় হবে। লিয়াকত হত্যার বিচারও হয়তো একদিন হবে, কিন্তু বন্ধুটি আর ফিরে আসবে না। 

ভালো থাকো বন্ধু। আমরা এখনো বেঁচে আছি। তোমার স্লোগানের সারথি হয়ে বঙ্গবন্ধুর কন্যার পাশে থাকবো আজীবন।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর