১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০৮:২১

যেভাবে নিহত হন রাউফুন বসুনিয়া

আনোয়ার হোসেন মুকুল:

যেভাবে নিহত হন রাউফুন বসুনিয়া

রাউফুন বসুনিয়া (সংগৃহীত ছবি)

১৯৮৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি রাতে সূর্য সেন হলে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের মিটিংয়ের দায়িত্ব ছিল বাসদ ছাত্রলীগের। আমরা সন্ধ্যা থেকেই রুমে রুমে যেয়ে মিটিঙে আসার জন্য সবাইকে বলতে থাকি। রাত সাড়ে আটটা নয়টার দিকে বসু ভাইয়ের সাথে আমার দেখা হয় হলের ভিতরে। আমাকে জিজ্ঞেস করে রানা হামিদ কোথায়। আমি বলি সামনে যান রানা ভাই আর শফি ভাই সামনেই বসে আছে। আমাদের কারো এক জনের রুমে ডিমের তরকারী আর ভাত রান্না হয়েছিল, সেখানে আমারও খাওয়ার কথা তাই বসু ভাইকে বলি ভাই মিটিংয়ের দেরি আছে ডিমের তরকারি দিয়ে ভাত খাবেন? তিনি না বলে গেটের বাইরে চলে যান। যথারীতি সভার প্রস্তুতি চলাকালে আমি উনাদের কাছে গেলে শফি ভাই বলেন, তার ঠাণ্ডা লেগেছে। আমি বললাম তাহলে সিগারেট খাচ্ছেন কেন? আমার উদ্দেশ্য ছিল সিগারেটের বাকি অংশটায় ভাগ বসানো। সেই সভায় সে রাতে সভাপতিত্ব করে আমাদের হল শাখার সভাপতি কামিদ।

নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখার পর এরশাদের উপজেলা নির্বাচন বন্ধসহ আগামীকাল ১৪ ফেব্রুয়ারি বটতলার জমায়েতে যোগদানের আহবান জানিয়ে আমরা স্লোগান দিতে দিতে মহসিন হল পার হয়ে সামনে এগুতে থাকি। সংখ্যায় ৩০/৩৫ জন ছিলাম। মিছিলের সামনে ছিল শফি ভাই, রানা হামিদ বসু ভাই ও অন্যান্যরা। মহসিন হল পার হতেই শফী ভাই দ্বিতীয় সারিতে এসে দুই একবার স্লোগান দিতেই তার গলা বসে যায়। তারপর বসু ভাই জ্বালো জ্বালো আগুন জ্বালো বলতেই তার গলার স্বরও দুর্বল হয়ে যায়। সাধারণত প্রায় সব মিছিলে আমি অন্যান্যদের সাথে শ্লোগান দিতাম। খানিকটা লজ্জায় আমি বসু ভাইকে বলি ভাই আপনে সামনে যান আমি স্লোগান ধরছি। তখন আমি স্লোগান ধরি দ্বিতীয় সারি থেকে। জ্বালো জ্বালো আগুন জ্বালো, খুনি এরশাদের গদিতে আগুন জ্বালো একসাথে, শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেবনা। ততক্ষণে মিছিলটা বড় রাস্তায় উঠে গেছে। একটা হুণ্ডা সামনে দিয়ে খুব জোরে শব্দ করে এফ রহমান হলের দিকে চলে গেল। ঠিক তখন সামনের সারিতে পাশাপাশি বসু ভাই, শফী ভাই ও রানা হামিদ ভাই। তারপরই এফ রহমান হলের সামনে গাছের পাশে দাঁড়িয়ে একজন কেউ গুলি করেছিল। ধুপ করে একটা শব্দ শুনেছিলাম। নিচু হয়ে তাকিয়ে দেখি বসু ভাই, রক্তে ভেজা চুলগুলো এলোমেলো হয়ে ঢেকে গেছে চোখ আর কপাল ।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

সর্বশেষ খবর