২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০৯:০৬

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলেই ভালো হতো!

অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান মিঠু

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলেই ভালো হতো!

অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান মিঠু

কুমিল্লা শহরের এবং এ জেলার রাজনৈতিক কর্মীদের একটা অনেক বড় অংশ আমার প্রচেষ্টা, আন্তরিকতা, সাহসিকতা, উদারতা, শ্রম, অর্থ ও সময় ব্যয়ের কারণে সৃষ্টি হয়েছিল।

আমার বিশ্বাস, আমার পরিশ্রমের সুফল ভোগ করে কেউ বড় নেতা, কেউ মন্ত্রী হয়েছিলেন। আমার মনে করায় কিংবা বিশ্বাসে ভুল থাকতে পারে, কিন্তু অসততা নেই।

১৯৮৭/৮৮/৮৯ সালে ১৫ আগস্ট পালন করা ছিল প্রায় অবৈধ। শহরব্যাপী পোস্টার থাকত 'মহা মুক্তির মহান দিবস - ঐতিহাসিক ১৫ আগস্ট'। সে দিনে, ভবিষ্যতে কোন দিন মেয়র কিংবা এমপি, মন্ত্রী হওয়ার চিন্তা থেকে নয় বরং আদর্শিক কারণে মনে হতো, বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের অবিবেকী হত্যার বিচার করা সম্ভব না হলে ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মদান বৃথা হয়ে যাবে। এদেশে আমার জন্ম বৃথা হয়ে যাবে।

১৯৯০ সালে এরশাদের পতনের পর, জনগণের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এলেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি আশা করেছিলাম, তিনি বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার করবেন এবং আমি রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাব। কিন্তু খালেদা জিয়াও এরশাদের মতই দেশ চালাতে লাগলেন।

পাঁচ বছর হরতাল, অবরোধ, মিছিল, আন্দোলন, অসহযোগ, এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোনল এবং সর্বোপরি ১৯৯৬ সালের  ১৫ ফেব্রুয়ারির একদলীয় নির্বাচন প্রতিহত করতে বার বার জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলাম।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলো, সে সরকার ছিল আমার দৃষ্টিতে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচাইতে ভালো সরকার। সে সরকার বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু করলেও শেষ করতে পারেনি।

জামায়াত, জাতীয় পার্টি এবং ছোট ছোট ইসলামী দলগুলো ইসলামী ঐক্যজোট হয়ে বিএনপির সাথে ঐক্য করে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে হারিয়ে দেয়। শুরু হয় ২০০১ সাল থেকে এক ভয়ংকর রাজনৈতিক অধ্যায়। সন্ত্রাস দমন অধ্যাদেশ, ক্রস ফায়ার, হাওয়া ভবন, ২১ আগম্ট ইত্যাদি!

আমি ছিলাম তখন কুমিল্লার আওয়ামী লীগের জন্য এক কথায় অনিবার্য। ২০০১ সালের প্রথম গ্রেফতার আমি এবং আমার অত্যন্ত কাছের সহযোগী মুন্না ও শরীফ।

সে দিনই প্রথম মিছিল শুরু হয় শহরে। এর আগে আওয়ামী লীগ হরতালের দিনেও অফিসের বাইরে বের হতো না!

পাঁচ বছর পর, খালেদা সরকার আবারো একদলীয় নির্বাচন করার যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলো, আমরা রাজপথে শক্ত অবস্থান নিলাম জীবন বাজি রেখে। সেনাবাহিনী ক্ষমতা নিল, 1/11 আসল।

এ সময়ে আমি প্রথমবার আমেরিকা যাই। নেত্রী গ্রেফতার হলে আমার নির্দেশে ছাত্রলীগের নেতার চর্থায় বাসে আগুন লাগায়, সিএসবি টিভি তা ভিডিও করলেও প্রচার করতে পারেনি, বাহার রায়হানের ক্যামেরা নিয়ে যায় আর্মিরা!

২০০৭ সালে আমি আমেরিকার বিভিন্ন স্ট্যাটে কঠিন শীত ও বরফের মধ্যে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি পালনে সর্বোচ্চ ভূমিকা রেখেছিলাম।

আমি এবং আমার তিনজন কর্মী প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দিনকে জাতিসংঘের সামনে লাঞ্ছিত করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম, যা টের পেয়ে পুলিশ গোপন রাস্তা দিয়ে তাঁকে জাতিসংঘে নিয়ে যায়।

তারপর ২০০৮ সালে সংসদ নির্বাচন হলো। আমরা রাত দিন পরিশ্রম করলাম। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার প্রতিটি আসনে আমি ও আমার কমিটির প্রতিটি কর্মী দিন রাত কাজ করলাম।

এবারে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসি কার্যকর করল। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করল। দলের বেকার যুবকদের চাকরি দিল, দেশের জন্য অনেক অনেক ভালো কাজের উদ্যোগ নিল।

কিন্তু আমরা অপ্রয়োজনীয় হতে শুরু করলাম দেশব্যাপী। আমাদের প্রজন্মের বেশীর ভাগ নেতা-কর্মীরাই অবহেলার শিকার হলাম।

নেতাদের পরিবারে সদস্যরা, যাদের রাজনীতিতে কোন ভূমিকা ছিল না কোন দিন, তাদের দাম নেত্রীর কাছে আমাদের চাইতে অনেক বেশী! এটা এক বিরাট রহস্য!

এখন মনে হচ্ছে জীবনের ত্রিশ বছরেরও বেশী সময় অপচয় করে ফেলেছি! সব কিছুই এখন অর্থহীন মনে হয়।

কিন্তু আমি এখনো বিশ্বাস করি, দল ক্ষমতায় না থাকলে, আমি এবং আমার মতো যারা আছেন দেশব্যাপী, তারাই এখন দায়িত্ব নিয়ে মাঠে থাকতো। যেহেতু দল ক্ষমতায়- সেহেতু আমাদের দরকার নেই। তাই মাঝে মাঝে মনে হয়, দল ক্ষমতায় না থাকলেই ভালো হত। অন্তত আদর্শহীন কর্মীদের দখলে যেত না দলটি!

কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষণ করলে মনে হয়, এদেশে আওয়ামী লীগের চাইতে কোন দেশ প্রেমিক দল এখনো মাথা তুলে দাড়াতে পারেনি।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

লেখক: সাবেক সাধারণ সম্পাদক, কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগ
            যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক, মহানগর আওয়ামী লীগ 
             স্পেশাল পিপি জননিরাপত্তা ট্রাইব্যুনাল কুমিল্লা

বিডি-প্রতিদিন/২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর