২০ মার্চ, ২০১৯ ০৮:২৩

বাংলাদেশে কোনো মাইকেল ব্রায়ান্ট সড়কে মৃত্যুর দায় নিয়ে বলবে না...

শওগাত আলী সাগর

বাংলাদেশে কোনো মাইকেল ব্রায়ান্ট সড়কে মৃত্যুর দায় নিয়ে বলবে না...

শওগাত আলী সাগর

মাইকেল ব্রায়ান্টকে ভাবা হতো অন্টারিওর ‘নেক্সট প্রিমিয়ার’। প্রভিন্সের আইনমন্ত্রী বা এটর্নী জেনারেল এর দায়িত্বে থাকা ব্রায়ান্ট ক্ষমতা বলয়ে এবং লিবারেল পার্টির ভেতরে অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেছিলেন।  কিন্তু একটি দুর্ঘটনা, হ্যাঁ, একটি সড়ক দুর্ঘটনা সবকিছুই উলটপালট করে দেয়। রাজনীতি থেকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে যান সম্ভাবনাময় রাজনীতিক, মিডিয়া ডার্লিং মাইকেল ব্রায়ান্ট।

নিজের বিয়ে বার্ষিকীর রাতে স্ত্রীকে নিয়ে ডিনারে গিয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে রাতে বাড়ী ফেরার সময় দুর্ঘটনাটা ঘটে। তার গাড়ির সাথে ‘ধাক্কা খেয়ে’ একজন সাইকেল আরোহীর মুত্যু ঘটে। গাড়ি থামিয়ে পুলিশ ডেকে ঘটনাস্থলেই অপেক্ষা করছিলেন প্রভাবশালী এই রাজনীতিক। একজন সাইকেল আরোহীর মৃত্যু! পুলিশ ঘটনাস্থল থেকেই গ্রেফতার করে নিয়ে যায় তাকে।

প্রভিন্সের আইনমন্ত্রী- তাকে গ্রেফতার করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি পুলিশ! বিয়ে বার্ষিকীর সেই রাতটা একাকী হাজতে কাটাতে হয় ‘হবু প্রিমিয়ার’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া প্রভাবশালী রাজনীতিক এবং আইনমন্ত্রীকে। পরের দিন আদালত থেকে জামিন পান তিনি।  

এ নিয়ে রাস্তায় কোনো বিক্ষোভ করতে হয়নি, ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টি তার ক্যাবিনেটের আইনমন্ত্রীর পক্ষে একটি বাক্যও ব্যয় করেনি ‘মিডিয়া ডার্লিং’ বিশেষনটা যার নামের সাথে একাত্ম হয়ে গিয়েছিলো, সেই ডার্লিং এর পক্ষে সাফাই গাইতে এগিয়ে আসেনি একটি মিডিয়াও। পুলিশ নিজের মতো করে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত শুরু করে। এক রাত জেল খেটে  জামিনে মুক্তি পাবার পর  প্রভিন্সের মন্ত্রীত্বের পদ থেকে সরে দাঁড়ান মাইকেল ব্রায়ান্ট।

পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে ভিন্ন এক চিত্র। ৩৩ বছর বয়সী সাইকেলিষ্ট গাড়িটির সাথে রেস করতে গিয়ে এক সময় গাড়ির হুডকে আগলে ধরে। সেই সময় সে পড়ে যায় গাড়ির চাকার নীচে। পুলিশের রিপোর্ট যখন আদালতে যায়- তখন নতুন প্রশ্ন দেখা দেয়। অন্টারিওর আইনমন্ত্রী হিসেবে প্রভিন্সিয়াল কোর্টের অনেক বিচারক এবং প্রসিকিউটরদের নিয়োগ হয়েছে তার হাতে। সেখানেই যদি তার বিচার যায়- নাগরিকদের বিশেষ করে দুর্ঘটনায় মৃত সাইকেলিষ্ট এর পরিবারের কারো মনে বিচার নিয়ে সংশয় তৈরি হতে পারে। মাইকেল ব্রায়ান্ট এর বিচার পরিচালনার জন্য ব্রিটিশ কলম্বিয়া থেকে বিচারক এবং প্রসিকিউটর আনা হয়। বিচারে মাইকেল ব্রায়ন্ট নির্দোষ প্রমাণিত হন। কিন্তু রাজনীতিতে তিনি আর ফিরে আসেননি। শুধু তাই নয়, সেই ঘটনার পর থেকে জনসম্মুখ থেকেও নিজেকে  গুটিয়ে নেন তিনি।

এই ঘটনার পর তিনি একটি বই লিখেছেন- '২৮ সেকেন্ড'।২০১২ সালে প্রকাশিত সেই বইয়ে তিনি অনেক কথাই বলেছেন। কিন্তু ৩৩ বছর বয়সী ডার্সি এলান শেফার্ডকে তিনি কিছুতেই ঝেড়ে ফেলতে পারেননি। “"He was a human being and he lost his life and that's something I can't undo and can't go back, so what can I do today? That's how I'm living."- 'ও একজন মানুষ ছিলো,  ও তার জীবন হারিয়েছে, এটি এমন একটি ঘটনা যা আমি মুছে ফেলে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে পারি না'- ভাবা যায়!  যেই ডার্সি এলানের জন্য নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ, সামাজিক জীবন সবকিছুকে ছেড়ে দিয়ে নিজেকে আড়াল করে রেখেছেন একদার প্রভাবশালী রাজনীতিক, সেই এলানের জন্যই তার মনে কতোটা বেদনাবোধ!

ঢাকার রাস্তায় গাড়িচাপা পড়ে আবরারের মৃত্যুটার সঙ্গে এই ঘটনার কোনোই সাদৃশ্য নাই। তবু এতো বছর পর কেন যে মাইকেল ব্রায়ান্ট এর কথাই বার বার মেনে পড়ে গেলো? অথচ আমি জানি, বাংলাদেশে কখনোই কোনো মাইকেল ব্রায়ান্ট সড়কে কোনো মৃত্যুর দায় নিয়ে বলবে না- "He was a human being and he lost his life and that's something I can't undo and can't go back''

লেখক: টরন্টোর বাংলা পত্রিকা 'নতুনদেশ'- এর প্রধান সম্পাদক

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)


বিডি প্রতিদিন/হিমেল

সর্বশেষ খবর