৬ জানুয়ারি, ২০১৬ ১১:৫৪

ভীতরগড়ের মহারাজার দীঘিতে পরিযায়ী পাখির ঝাঁক

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

ভীতরগড়ের মহারাজার দীঘিতে পরিযায়ী পাখির ঝাঁক

পঞ্চগড়ের অন্যতম দর্শনীয় স্থান মহারাজার দীঘিতে এখন পরিযায়ী পাখির ভিড় লেগেছে। সকাল বিকাল পুকুরের পানি আর পাড়ের উঁচু ঢিবিতে বিশাল বিশাল গাছের ডালে এখন হাজার হাজার পাখি। সারদিন পাখির কলতানে মুখরিত প্রায় দেড় হাজার বছরের পুরনো এই দীঘি। 

মহারাজার দীঘিতে প্রায় সারা বছরই পাখির কলতান থাকে। শীতকালে পরিযায়ী পাখিরা এলে এই অসাধারণ আবহের সঙ্গে যোগ হয় নতুন মাত্রা। সেই সঙ্গে চেনা দৃশ্যও বদলে যায়। পাখি দেখার জন্য স্থানীয় এবং দেশের নানা প্রান্তের পর্যটকেরা ছুটে আসে। প্রকৃতির চেনা অচেনা এই পাখিরা যে কোন মানুষকেই দাঁড় করিয়ে রাখে অবাক বিস্ময়ে। পাখির কলতানে কোলাহলে ভেঙে যায় দীঘির নীরবতা। বিকাল হলেই মহারাজার দীঘিতে নামে পানকৌড়ির ঝাঁক। তাদের ডুব সাঁতার চলে থেমে থেমে। মাঝে মাঝেই ছলাৎ ছলাৎ শব্দে পানির নিচ থেকে ঠোঁট দিয়ে মাছ তুলে নিচ্ছে হরেক রকমের মাছরাঙা। গাছে গাছে ঝুলছে বাদুড়। ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখি পাতি সরালীরা এখন মহারাজার দীঘিতে গা ভেজায়। এসব মন ভোলানো দৃশ্যে যে কেউ আনমনা হয়ে যায়।

পঞ্চগড় জেলা শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার উত্তর পূর্বে  সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের ভারতের পশ্চিম বাংলার জলপাইগুড়ি সীমান্তের ভীতরগড় গ্রামে এই দুর্গনগরী। প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে এই দুর্গনগরী গড়ে ওঠে। ইতোমধ্যে খননের মাধ্যমে ৬ষ্ঠ শতকের ৯টি স্থাপত্য কাঠামোর নিম্নাংশ এবং মাটি ও ইট দ্বারা নির্মিত অভ্যন্তরীণ চারটি আবেষ্টনির প্রকৃত স্বরূপ আবিষ্কৃত হয়েছে। পঞ্চগড় জেলার ২৫০ বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত ভিতরগড় দুর্গনগরী বাংলাদেশে এ যাবৎ প্রাপ্ত দুর্গনগরীগুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ। এই দুর্গনগরী নিয়ে অনুসন্ধান এবং গবেষণা করছেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস-এর প্রত্নতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. শহনাজ হুসনে জাহান। তার  প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে প্রাপ্ত নিদর্শনসমূহের আলোকে অনুমান করা যায় যে, ভিতরগড় একটি স্বাধীন রাজ্য হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সারা বছর চাষাবাদের জন্য সেচ ব্যবস্থা এবং নদীর পানি নিয়ন্ত্রণে নৈপুণ্য কৌশলের অধিকারী ছিল ভিতরগড়ের প্রাচীন জনপদ। প্রাচীণ বাণিজ্য সড়ক ও নদী-পথের উপর অবস্থিত হওয়ায় ভিতরগড়ের প্রাচীন জনপদ সম্ভবত তিব্বত, চীন, নেপাল, ভুটান, সিকিম, আসাম, কুচবিহার এবং মধ্য ও নিম্ন গঙ্গা উপত্যকায় অবস্থিত অঞ্চগুলির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রেখেছিল।

এদিকে, পাখিদের ভিড়ে মহারাজার দীঘি কল্লোলিত হয়ে উঠলেও শিকারীরা কিন্তু থেমে নেই। প্রায়ই তারা নানাভাবে পাখি শিকার করে। এ ছাড়াও দীঘির চারপাশে গড়ে উঠছে অপরিকল্পিত ঘর-বাড়ি আর চা বাগান। ফলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে প্রাচীন এই দীঘিরদিঘীািটর সৌন্দর্য। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য প্রতিনিয়তই জনমানুষের দ্বারা বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ভিতরগড় দুর্গনগরী রক্ষা এবং মহারাজার দীদিঘীর সৌন্দর্য রক্ষায় সম্প্রতি পঞ্চগড়ের প্রাণ, প্রকৃতি,পরিবেশ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সংগঠন কারিগর সচেতনতা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। 

 

বিডি-প্রতিদিন/ ০৬ জানুয়ারি, ২০১৬/ রশিদা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর