১৬ জুলাই, ২০১৬ ১৬:১৬

নিখোঁজ হওয়ার কিছু কারণ

মুশফিকুল হক মুকিত

নিখোঁজ হওয়ার কিছু কারণ

নিখোঁজ হওয়ার মত চাঞ্চল্যেকর খবরে আঁতকে উঠতে হয়। সাধারণত মানুষ ভেবে থাকে কেউ হয়ত জিম্মি করে রেখেছে। কিংবা কারোর হিংসাত্মক আগ্রাসী মনভাবের কারণ হল নিখোঁজ হয়ে যাওয়া। কেন মানুষ নিখোঁজ হয় সেই প্রশ্নের দানা যখন মনে বেঁধে যায় উঠে আসে কিছু জানা কিন্ত অজানা কিছু বিষয়।   

বিশ্বব্যাপী আট মিলিয়ন শিশু নিখোঁজের চাঞ্চল্যকর তথ্য রেকর্ড করা হয়েছে। প্রতি বছর কেবল আট লক্ষ শিশু কেবল যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিখোঁজ হয়ে থাকে। বাংলাদেশ পুলিশ পরিসংখ্যান ২০১৫ সালে অনুসারে, বাংলাদেশ থেকে ৮০৬ জন অপহরণের শিকার হন। সেই হিসেবে ২০১৪ সালে  ৯২০ জন অপহৃত হয়।

তবে, সমাজবিজ্ঞানীরা মানুষ নিখোঁজ হয়ে যাওয়াকে বলে হোয়াইট ইউমেন সিনড্রোম। সোশ্যাল মিডিয়ায় হোয়াইট ইউমেন সিনড্রোম তত্ত্বটা বহুল প্রচলিত ও প্রচারিত। এর পেছনের কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, মূলত সাদা চামড়ার সোনালী চুলের মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরা প্রায় নিখোঁজ থাকতো। সেই সুবাদে হোয়াইট ইউমেন সিনড্রোম তত্ত্বটা প্রতিষ্ঠা লাভ করে।        

স্বেচ্ছাকৃত আত্নগোপন: শৈশব ও কৈশোরে পরিবার, সমাজ, সংসার যাদের সমস্যার ভিতর দিয়ে কাটে তারা বেশ হীনমন্যতায় ভোগে। তবে, সব বিষয় নিয়ে এরা তখন বেশ উদ্বিগ্ন থাকে। অনেক বেশী আবেগপ্রবণ আর জেদি হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এরা হটাৎ করে নিজেকে নিজেরা নিখোঁজ করে রাখে। এর পেছনের কারণ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অর্থনৈতিক অভাব, অনটন, পারিবারিক কলহ, বিচ্ছেদসহ যাবতীয় সমস্যায় জর্জরিত করে রাখে।তখন মুক্তির জন্য পথ খুঁজে মন। নিজে নিজেই তখন সবার থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় । সরকারী হিসেব অনুযায়ী প্রতি বছর কানাডায় ১০০০ মানুষ নিখোঁজ থাকে। তবে, অনেকে পরিবার ও বন্ধুদের ছেড়ে নিরুদ্দেশ হতে চায়। 
       
আত্মহনন: অনেক প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ আছেন যারা আত্মহননের জন্য নিজ থেকেই নিখোঁজ হয়ে যায়। মানসিকভাবে বিপর্যয় আত্মহনন ডেকে আনে।  

দুঃসাহসিক কিংবা দুর্ঘটনায়: তরুণদের মনে চ্যালেঞ্জ মারাত্মক ভাবে কাজ করে। তারা দুঃসাহসিক কর্মকাণ্ড জড়িয়ে যায়। কেউ ভালবাসে পাহাড় , পর্বত, দেশের কিংবা বিদেশের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়াতে। কেউ কেউ আরও অজানা রোমাঞ্চকর কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যায়। অনেকে সময় দুর্ঘটনায় নিখোঁজ হয়ে যায় অনেকে। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে , ২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রায় তিন লক্ষ পচিশ হাজার শিশু নিখোঁজ। অন্যদিকে, পাকিস্তানে প্রায় তিন হাজার শিশু প্রতি বছর নিখোঁজ হয়ে থাকে। 
  
যাযাবর জীবন: ক্যারিয়ার , লাইফ, নিরাপদ আবাস, সংসার যাদের মনকে ছুঁয়ে যায় না তারা ভাসমান হয়ে ঘুরে ঘুরে পথে পথে ঘুরে বেড়ায়। অজানার উদ্দেশ্যে কাটে এদের জীবন। স্থায়ী কোন কিছুতেই মন টেকে । অতিরিক্ত অস্থির আর ছটফটে থাকে।    

অনিচ্ছায় নিখোঁজ: অনেকের স্মৃতি ভ্রম থাকে। মানসিক ভাবে স্মৃতি শক্তি লোপ পেলে মনের অজান্তে নিখোঁজ হয়ে যায়। যাকে বলে আলঝেইমার ডিজিজ। বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘোরাঘুরি করে থাকে। আবার অনেকে না বলে ভ্রমণ অবকাশের জন্য নিখোঁজ হন। তবে, অস্ট্রেলিয়ায় প্রতি পনের সেকেন্ডে একজন নিখোঁজ হন।  

সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড: ইসলামিক স্টেট প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে অনেক তরুণকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকতে ব্রেইন ওয়াশ করা হয়ে থাকে। চ্যালেঞ্জিং জীবন ও ভ্রান্ত আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেকে হয়ে যায় নিখোঁজ। আইএস তাদের দলে ফ্রান্স থেকে প্রায় ২৫% তরুণদের দলে ভেরায়।  

মানসিক সমস্যায়: মস্তিষ্ক বিভ্রাটের কারণে নিখোঁজ হওয়ার প্রবণতা খুব বেশী। কিছু কিছু মানসিক মানসিক রোগ অনির্ণীত থেকে যায়। অতিরক্ত উল্লাস কিংবা বিষণ্ণতার কারণ হল বাইপোলার ডিজঅর্ডার, মনোব্যাধি কিংবা সিজোফ্রেনিয়ার রোগীরা অনেকে নিখোঁজ হয়ে থাকেন।      

অজ্ঞাত ঘটনায়: অনেক সময় কোন অজ্ঞাত কারণে মানুষ নিখোঁজের কারণ জানা যায়। মতের বিরোধ, সম্পর্কের অবনতি, অংশীদারিত্ব ব্যবসার কিংবা রাজনৈতিক উদ্ভূত পরিস্থিতিকে নিখোঁজ থাকার কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রতিবছর কেবল      

সন্দেহজনক পরিস্থিতি (ফাউল-প্লে):  সন্দেহজনক অশান্ত পরিস্থিতির কারণে অনেকে সময় বেড়ে যায় গুপ্ত হত্যা, মুক্তিপণ, পারিবারিক সহিংসতা, মানবপাচার কিংবা অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। যার ফলে নিখোঁজের ঘটনা আঁতকে স্বজনরা। অনেকে বিশ্বাসঘাতকতার কারণ হিসেবে শনাক্ত করেন। যাকে ফাউল প্লে বলা হয়ে থাকে। 

ব্যাংক লোন- কর ফাকি: অনেকে ব্যাংকের থেকে লোন নিয়ে আত্মগোপণ করে থাকেন। আর নিজদের আত্মীয় স্বজন দিয়ে পত্রিকায় নিখোঁজের বিজ্ঞাপন প্রচার করে থাকেন। ইনকাম ট্যাক্সের বা করের টাকা পরিশোধ করতে হবে বিধায় অনেকে একই ঘটনায় আত্মগোপন করে নিখোঁজ হন।    

 

  
বিডি-প্রতিদিন/ ১৬ জুলাই, ২০১৬/ আফরোজ

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর