১৮ নভেম্বর, ২০১৬ ১৫:১৬

যেখানে গৃহিণীরাই মূল কারিগর

মো. রফিকুল আলম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

যেখানে গৃহিণীরাই মূল কারিগর

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার নেজামপুর ইউপির সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায় অধ্যুষিত গ্রামটিরর নাম টিকইল। এই গ্রামটিই এখন সারা দেশে আলপনা গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেতে চলেছে। আর এ আলপনার মূল কারিগর হচ্ছেন প্রতিটি পরিবারের গৃহিণীরা। বংশ পরম্পরায় তারা এ ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রেখেছেন। টিকইল গ্রামের গৃহিণীরা জানান, সূচি-শুভ্রতা, সৌন্দর্যবর্ধন ও দেবতার সুদৃষ্টি ও আশির্বাদ কামনায় নারীরা বংশ পরম্পরায় বাড়ির দেয়ালে আলপনা এঁকে থাকেন।

কথা হয় নয়ন মণী বর্মন (৩২), দেখান বালা বর্মন (৪৫), অনিতা বর্মন (৩১) ও বন্দনা বর্মন (৩৩)সহ অনেকের সঙ্গে। তাদের সবার মাটির বসতঘর, বৈঠক ঘর ও রান্নাঘরের ভিতরের-বাইরের দেয়ালে বিভিন্ন ধরনের ফুল, পশু-পাখি, শহীদ মিনার, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, বিভিন্ন দেব-দেবীর ছবি এবং হিন্দুধর্মীয় শ্লোক আঁকা। 

তারা জানান, পূর্বে আলপনা আঁকতে গিরিমাটি, চক (খড়িমাটি), রং, তারপিন তেল ব্যবহার হত। তবে ওইসব উপকরণে আঁকা আলপনা বেশি দিন স্থায়ী হতো না। তাই বর্তমানে শুকনা বরই চুর্ণ আঠা, গিরিমাটি, আমের পুরাতন আঁটির শাঁস চুর্ণ, চকগুড়া, বিভিন্ন রং, মানকচু ও কলাগাছের কস দিয়ে তৈরি রংয়ের মিশ্রণ ৪/৫দিন ভিজিয়ে রেখে রঙ তৈরি করা হয়। ওই রঙ দিয়ে আঁকা আলপনা প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় স্থায়ী হয়। 

টিকইল গ্রামের প্রভাতী বালা (৬৩) এখনও নিজ হাতে মনের মাধুরী মিশিয়ে ধর্মীয় শ্লোক ও আলপনা আঁকেন। তার বিশ্বাস, এতে বাড়িঘরে পবিত্রতা আসে, পরিবারের সকলের আনন্দ লাভের সুযোগ সৃষ্টি হয়। প্রভাতী বালা জানান, পূর্বে বাড়িঘরের আলপনার মাধুর্য দেখে বর-কনে পছন্দ করতেন বুড়া-বুড়িরা। হিন্দুপাড়ার টিকইল গ্রামের নারীরা আজও আলপনা আঁকার চর্চাটি ধরে রেখেছেন। তার আশা, আগামী প্রজন্মও এর ধারা অব্যাহত রাখবে।


বিডি প্রতিদিন/১৮ নভেম্বর, ২০১৬/ফারজানা

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর