৩ ডিসেম্বর, ২০১৬ ১৫:৫১

শিমের জেলা লালমনিরহাট

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

শিমের জেলা লালমনিরহাট

বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে সবুজ আর সবুজ। সেই সবুজে ভালো করে তাকালে দেখা যায় লকলকে লতার সমারোহ। লতার ফাঁকে ফাঁকে ছোট্ট নীল-সাদা অজস্র ফুল ফুটে আছে বুক সমান উচ্চতার মাচানজুড়ে। আর তাতেই জন্মেছে অসংখ্য, অজস্র শিম। এই শিম কুমড়িরহাট ও দুরাকুটি হাটের বিক্রেতাদের কাছ থেকে চলে যাচ্ছে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। আর এভাবেই প্রতিদিন দেশের বৃহত্তম শিমের হাট কুমড়িরহাট ও দুরাকুটিহাটে বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৩০ ট্রাক শিম।

লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালিগঞ্জ, আদিতমারি  এবং লালমনিরহাট সদর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে শিমের আবাদ হচ্ছে। এই এলাকায় শিম আবাদ শুরু হয় ১৯৯৭ সালে। লালমনিরহাট জেলার কমলাবাড়ি গ্রামের সবজি ব্যবসায়ী শিমুলের নিকট থেকে উচ্চ ফলনশীল শিম বীজ এনে জমিতে আবাদ করেন। তিনি ওই বছর শিম বিক্রি করে লাভবান হন। প্রতিবেশী কৃষকরা তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হন। তাছাড়া বাজারে ক্রমশই শিমের চাহিদা বাড়তে থাকায় পর পর কয়েক বছর এলাকার কৃষকেরা শিমের চাষ করেন। এভাবেই এলাকায় শিম চাষ সম্প্রসারিত হয়। এ এলাকার চুনযুক্ত দো-আঁশ মাটিতে শিমের ফলনও ভালো হতে থাকে। আর এভাবেই কুমড়িরহাট এখন দেশের বৃহত্তম শিম উৎপাদন এলাকা। কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা এই এলাকার নামকরণ করেছেন ‘শিমের গ্রাম’।

শিম চাষে ঝামেলা তুলনামূলক কম এবং অন্যান্য ফসলের তুলনায় লাভজনক। তাছাড়া বেশ কিছু দিন সময় নিয়ে ধীরে ধীরে গাছ থেকে শিম সংগ্রহ করে বিক্রি করা যায়। ২৩টি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই কম-বেশি শিম চাষ হচ্ছে। বাড়ির আঙিনা এবং এলাকার বিভিন্ন সড়কের দুই পাশে শিমের মাচান রয়েছে। বুড়িমারি থেকে রংপুরগামী মহাসড়কের দুই পাশে এবং দৈখাওয়াহাট থেকে দুরাকুটি সড়কের দুই পাশে মাঠের পর মাঠ শুধু শিম ক্ষেত।
 
শিম চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিম চাষ হয় দুইভাবে। নিজের জমিতে আবাদ করা ছাড়াও কৃষকেরা অন্যের জমি বর্গা নিয়ে আবাদ করেন। একেবারেই যারা ভূমিহীন তারাও জমি বর্গা নিয়ে চাষ করেন। বর্গা চাষীরা আবাদ করে এক তৃতীয়াংশ ফসল দেন জমির মালিককে। এতে জমির মালিকও অন্য ফসলের তুলনায় লাভ বেশি পান। যারা জমি লিজ নিয়ে আবাদ করেন তারা প্রতি বিঘা জমির জন্য মালিককে দেন ছয় থেকে আট হাজার টাকা। দুরাকুটি গ্রামের কৃষক হাসান আলী বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে শিম চাষে খরচ হয় ১৫ হাজার টাকা। উৎপাদন হয় প্রায় ১১ মণ শিম। যার বাজার মূল্য প্রায় ৪০ হাজার টাকা।

চলতি বছর শিমের ফলন ভালো হয়েছে বলে অনেকেই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। শিয়াল খোওয়া গ্রামের কৃষক রোকন জানালেন, তিনি শ্রাবণ মাসে শিম বীজ বপন করেছেন। কার্তিকের শেষ সপ্তাহে প্রথম দফা শিম উঠিয়েছেন। চলতি মৌসুমে এলাকায় লাল রংয়ের নতুন জাতের শিম আবাদ শুরু হয়েছে। 

এলাকায় শিম চাষ করে অনেকেই ভাগ্য ফিরিয়েছেন। ফলে বেকার তরুণেরাও ঝুঁকছেন শিম চাষে। অনেকে ব্যবসা ছেড়ে মৌসুমের সময় শিম চাষ করছেন। 

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্যমতে চলতি মৌসুমে জেলার পাটগ্রাম উপজেলায় ১০৫০ হেক্টর জমিতে ১০৯০০ মেট্রিক টন, হাতীবান্ধা উপজেলায় ৮৩০ হেক্টর জমিতে ৯৭০০ মেট্রিক টন, কালিগঞ্জ উপজেলায় ১৩০ হেক্টর জমিতে ৫০০ মেট্রিক টন ,আদিতমারি উপজেলায় ১৪৭৬০ হেক্টর জমিতে ১৩৬৩৪ মে: টন এবং সদরে ২১০ হেক্টর জমিতে ৩২১ মে: টন শিম আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। লালমনিরহাটের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বিধু ভূষন রায় বলেন, এ এলাকার মাটি শিম চাষের জন্য উপযোগী। ফলে শিম চাষে সাফল্য এসেছে।

দেশের শিম বিপণনের সবচেয়ে বড় হাট কুমড়িরহাট ও দুরাকুটিহাট। সারা দেশ থেকে পাইকারী ক্রেতারা এই হাটে আসেন। প্রতিদিন ভোরবেলা থেকে হাট বসে। বিক্রি চলে রাত পর্যন্ত। 


বিডি প্রতিদিন/৩ ডিসেম্বর, ২০১৬/ফারজানা 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর