১০ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০৮:৫০

'লাল তালিকায়' জিরাফ

অনলাইন ডেস্ক

'লাল তালিকায়' জিরাফ

আফ্রিকায় নিরন্তর চলতে থাকা গৃহযুদ্ধের জেরে সেখানে খাদ্য সঙ্কট বেড়েছে। বাধ্য হয়েই মানুষ এখন জিরাফ ধরে খাওয়া শুরু করেছে। শুধু মানুষের খাদ্য হওয়াই নয়, বৃক্ষ নিধনের ফলে কমে গেছে জিরাফের খাদ্য। এমন একাধিক কারণে গত তিন দশকে জিরাফের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। তাই ভূচর এই স্তন্যপায়ী প্রাণীকে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দ্য কনজারভেশন অফ নেচার (আইইউসিএন) বিলুপ্তপ্রায় বলে তকমা দিয়েছে। ১৯৮৫ সালে জিরাফের সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ৫৫ হাজার। ২০১৫ সালে সেই সংখ্যা নেমে এসেছে ৯৭ হাজারে। ৪০ শতাংশ সংখ্যা হ্রাসে আইইউসিএন -এর ‘লাল তালিকা’য় ঠাঁই পেয়েছে জিরাফ।

আইইউসিএন-এর জিরাফ বিশেষজ্ঞ গ্রুপের প্রধান জুলিয়ান ফেনেসির বক্তব্য, ‘নীরবে বিলোপের পথে চলেছে জিরাফ। আমরা হাতি ও গন্ডারের অস্তিত্ব নিয়ে বেশি মাথা ঘামিয়েছি। কিন্তু জিরাফের সংখ্যা খুব অল্প সময়ে অত্যন্ত বেশি হ্রাস পেয়েছে।’ জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বসতি এলাকা বাড়ছে। ফলে ক্রমশ কমছে জঙ্গল। বাসস্থানের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে জিরাফ। আফ্রিকার গৃহযুদ্ধ উদ্বেগ আরও বাড়াচ্ছে। ফেনেসির ভাষায়, ‘একটানা যুদ্ধের জেরে বাড়ছে খাদ্য সঙ্কট৷ খাবারের প্রয়োজনে মেরে ফেলা হচ্ছে জিরাফ। বড় আকারের প্রাণী , অনেকের ক্ষুধা মেটায়। তাই নিশানায় জিরাফ।’ হাতি বা গন্ডারের মতো জিরাফের আত্মরক্ষার হাতিয়ার না থাকায় সহজেই শিকার করা যাচ্ছে এই প্রাণীটিকে।

ফেনেসি জানান, ‘যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলি---কেনিয়ার উত্তরাংশ , সোমালিয়া , ইথিওপিয়া , দক্ষিণ সুদানে নির্বিচারে জিরাফ নিধন করা হচ্ছে। বছরের পর বছর এই প্রবণতা বাড়তে থাকায় জিরাফের সঙ্কট বাড়ছে।’আইইউসিএন -এর রিপোর্টে জিরাফের আলাদা আলাদা প্রজাতির কথা বলা হয়েছে। জিরাফের ন’টি প্রজাতির মধ্যে পাঁচটির সংখ্যা কমেছে। একটির সংখ্যা কমেনি। তিন প্রজাতির সংখ্যা সামান্য বেড়েছে। বিভিন্ন এলাকার ভিত্তিতে সংখ্যার এই বাড়া -কমা লক্ষ্য করা গেছে। ফেনেসি জানান , ‘আফ্রিকার দক্ষিণে জিরাফের সংখ্যা গত তিন দশকে বেড়েছে।

কিন্ত্ত পূর্ব আফ্রিকায় বিপুল ভাবেকমেছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে এই হ্রাস ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত। ’ জিরাফের সঙ্গে আরও কয়েকটি প্রাণীর অবলুপ্তির আশঙ্কা জানিয়েছে আইইউসিএন। এর মধ্যে রয়েছে আফ্রিকান গ্রে প্যারট। ১৯৭৫ থেকে ২০১৩ -র মধ্যে এই প্রজাতির ৩২ লক্ষ টিয়া আফ্রিকার জঙ্গল থেকে ধরা হয়েছে। কেনিয়ার কাকামেগা অরণ্যে ধূসর রঙের টিয়ার দেখা মিলত সহজেই। এখন ওই জঙ্গলে দশটির বেশি টিয়া না থাকার আশঙ্কা। মানুষের ভাষা নকল করে কথা বলতে কুশলী গ্রে প্যারট। অন্য কোনও প্রজাতির টিয়া নকলে এদের মতো দক্ষ নয়। শুধু মানুষের কথা নয় , টেলিফোনের রিং , ফায়ার অ্যালার্ম কিংবা কলকল জলের শব্দও হুবহু শুনিয়ে তাক লাগিয়ে দেয় এই টিয়া। বুদ্ধিমত্তার জন্য এই প্রজাতিকে ‘টিয়াকুলের আইনস্টাইন ’ তকমা দেওয়া হয়। এ কারণেই এই পাখিটি মানুষের কুনজরে পড়েছে। পোষ্য হিসেবে দারুণ চাহিদা গ্রে প্যারটের।

আইইউসিএন -এর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে অরনেট গ্রাউন্ড স্নেক। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের সেন্ট লুসিয়ায় এই সাপ হারিয়েই গেছে। শ’খানেক টিকে আছে তার কাছের দ্বীপ মারিয়া মেজরে। ইন্দোনেশিয়ার স্কারলেট ব্রেস্টেড লরিকিট বিপন্ন। এই পাখির পালকের দারুণ চাহিদা। শুধু প্রাণী নয়, আম, বার্লি-সহ একাধিক ফল ও শস্য রয়েছে এই তালিকায়।

‘লাল তালিকা ’য় এমন ৮৫ হাজার প্রাণী ও উদ্ভিদের প্রজাতির উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে ২৪ হাজারের অস্তিত্ব সঙ্কটে। এই সংখ্যাই কিন্ত্ত বিপন্নতার পুরো ছবিটা তুলে ধরছে না। আইইউসিএন -এর ডিরেক্টর জেনারেলে ইঙ্গার অ্যান্ডারসনের বক্তব্য , ‘অনেক প্রাণীর উপর ঠিকঠাক গবেষণা করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই তালিকায় অনেক নাম বাদ থেকে যায়।’ --- সংবাদ সংস্থা ৷

বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর