২৮ মে, ২০১৭ ০০:০৬

মৌ মৌ গন্ধের সুবাস পাহাড়ে

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি:

মৌ মৌ গন্ধের সুবাস পাহাড়ে

পার্বত্য অঞ্চলে এ বছর মৌসুমী ফলের বাম্পার ফলন হয়েছে। বিভিন্ন বাহারী ফলের মৌ মৌ গন্ধ সুবাস ছড়াচ্ছে পাহাড়ে। রাঙামাটির বাজারে নানা ধরনের রসালো মৌসুমী ফলের সয়লাব। রমজানকে সামনে রেখে শহরে, বনরূপা, সমাতা ঘাট, কলেজ গেইট, তবলছড়ি ও রিজার্ভ বাজারের হাট বাজার গুলোতে এখন মৌসুমী ফলের সমারোহ। প্রায় প্রতিদিন বসানো হয় মৌসুমী ফলের হাট। এসব ফলের মধ্যে রয়েছে স্থানীয় ও উন্নত জাতের লিচু, আম, কাঠাঁল, আনারস।

স্থানীয় কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, তীব্র গরম আর রমজানের কারণে মানুষের আকর্ষণ এখন মৌসুমী ফলের দিকে। আম, কাঠাঁল, আনারস বাজারে থাকলেও বাজার দখল করেছে লিচু। বর্তমানে প্রচুর লিচু উৎপাদন হয়েছে পাহাড়ে।  ফলন ভালো হওয়ায় দেশী জাতের পরিবর্তে এখন পাহাড়ে অধিক চাষাবাদ হচ্ছে চায়না-২, চায়না-৩ জাতের লিচুও। বোম্বে লিচুর ফলনও হচ্ছে উচ্চ পরিমাণে। এ বছর এরইমধ্যে বাজারে এসেছে উন্নতজাতের লিচু। 

এছাড়া রাঙামাটি জেলার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় এ বছর কয়েক হাজার একর জমিতে আনারসের চাষাবাদ হয়েছে। ফলন লক্ষ্যমাত্রার অধিক। হানিকুইন জাতের আনারস সবচেয়ে বেশি ফলে রাঙামাটি জেলায়। এ জাতের আনারসকে স্থানীয়ভাবে দেশি আনারসও বলা হয়। দেশি আনরস পাকলে খুব মিষ্টি ও রসালো। যে কারণে এ জাতের আনারসের কদরও বেশি। এছাড়া জায়েনকিউ বা সিঙ্গাপুরি আনারসের চাষও হয় এ জেলায়। উৎপাদনেও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে।

রাঙামাটির স্থানীয় মৌসুমী ফল ব্যবসায়ী নেজাম উদ্দীন জানান, আনারসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ইতোমধ্যে বাজারে এসেছে- আম, কাঠাঁল, লিচু। 

তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে রাঙামাটিতে এসব মৌসুমী ফল উৎপাদন হচ্ছে প্রচুর। তাছাড়া এসব উৎপাদিত মৌসুমী  ফলের বাজারে সয়ালব হয়ে গেছে। ক্রেতাদের চাহিদা অনেক। তাই লাভবান হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। তবে হিমাগার না থাকায় সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না এসব ফলমূল। অতিরিক্ত গরম ও কাপ্তাই হ্রদে পানি কমে যাওয়ার কারণে সঠিক সময়ে বাজারজাতে হিমশিম খাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। 

অন্যদিকে, রাঙামাটিসহ পার্বত্য তিন জেলায় কেবল সুষ্ঠু সংরক্ষণ ও বাজারজাতের অভাবে প্রতি বছর কোটি টাকার ফলমূল পচে নষ্ট হয়ে যায়। যার কারণে  পার্বত্যাঞ্চলের কৃষিভিত্তিক অর্তনৈতিক সম্ভবনা বিঘ্নিত হচ্ছে। সহজ পরিবহন ও সুষ্ঠু বাজারজাত ব্যবস্থা না থাকায় এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের অভাবে শুধু কাঁঠাল, আনারস নয়- পার্বত্যাঞ্চলে প্রতিবছর বিভিন্ন জাতের কোটি কোটি টাকার ফল নষ্ট হচ্ছে। তাই দাবী উঠেছে তিন পার্বত্য জেলায় হিমাগার স্থাপনের।

রাঙামাটি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রমনী কান্তি চাকমা জানান, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণে প্রতিবছর পার্বত্যাঞ্চলে আম, কাঠাঁল, কলা, লিচুসহ বিভিন্ন ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই এসব গাছের বাগান করতে কৃষকদেরও আগ্রহ বেড়েছে। কৃষি বিভাগের পরার্মশে অনেকেই ব্যক্তি উদ্যোগে পাহাড়ে বিভিন্ন ফলের বাগার গড়ে তুলেছে। সদ্য মৌসুমে উপযুক্ত আবহাওয়ার কারণে রাঙামাটিতে মৌসুমী ফলের প্রচুর ফলন এসেছে। 

এরইমধ্যে রাঙামাটি জেলা সদর, নানিয়ারচর, বিলাইছড়ি, কাপ্তাই, কাউখালী, বরকল, জুরাছড়ি, লংগদু, বাঘাইছড়ি, রাজস্থলী উপজেলাসহ আম, কাঠাঁল, আনারস, লিচুর আবাদ হয়েছে প্রায় ৩৬ হাজার হেক্টর জমিতে। পাহাড়ে মৌসুমী ফলে উৎপাদন ভাল তাই এসব ফলের দিন দিন আবাদের জমিও বাড়ছে । তবে এ সম্ভাবনাকে ধরে রাখতে পার্বত্যাঞ্চলে মৌসুমী ফল সংরক্ষণ ও কৃষকদের স্বার্থে হিমাগার স্থাপন খুবই প্রয়োজন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর