২৯ মে, ২০১৭ ১৮:০৩

মৌ-চাষের ডার্থ পিরিয়ডেও উৎপাদিত হচ্ছে মধু

সরকার হায়দার, পঞ্চগড়:

মৌ-চাষের ডার্থ পিরিয়ডেও উৎপাদিত হচ্ছে মধু

মে হতে সেপ্টেম্বর  এই পাঁচ মাস বাংলাদেশের প্রকৃতিতে ফুল কম থাকে। তাই পর্যাপ্ত খাবার পায়না মৌমাছি। এ সময় মৌ-চাষিরা চিনির সিরা দিয়ে মৌমাছিদেরকে বাঁচিয়ে রাখেন। কিন্তু এই পদ্ধতি অত্যন্ত ব্যায়বহুল। অন্যদিকে ফুল না থাকার কারণে মৌমাছির ব্যপক ক্ষতি সাধন হয়। মৌমাছির এই সময় টাকে বলা হয় ডার্থ পিরিয়ড।

মৌমাছির এই ডার্থ পিরিয়ডেও খাদ্য সংগ্রহের পাশাপাশি পঞ্চগড়ে উৎপাদিত হচ্ছে মধু। এই এলাকার মৌচাষিরা  এ সময় মৌমাছির খাদ্য সংক্রান্ত ব্যায়  সাশ্রয়ের পাশাপাশি মধু উৎপাদন করে আয় করছেন লাখ লাখ টাকা। আশে পাশের বিভিন্ন জেলা থেকেও মৌচাষিরা মৌবক্স নিয়ে এই সময়ে চলে আসছেন পঞ্চগড়ে। এই জেলার বিভিন্ন গ্রাম গঞ্জে ছড়িয়ে পড়ছেন তারা। 

কারণ এই জেলায় এ সময় তিল,মিষ্টি কুমড়ো,মরিচ,ভূট্টা সহ নানা ধরনের শাক সবজির আবাদ হয়। এই শাক সবজির ফুল থেকে মৌমাছিরা নিজেদের খাদ্য সংগ্রহের কাজটি করার পাশাপাশি চাষির জন্য বয়ে নিয়ে আসে মধু। দেশের দক্ষিণাঞ্চল সহ অন্যন্য জেলার মৌ খামারিরা একে মধু উৎপাদনের নতুন উৎস হিসেবে মনে করছেন । 

সম্প্রতি বাংলাদেশ এসোসিয়েশন ফর সোস্যাল এডভান্সমেন্ট (বাসা) নামের একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগে ৫ টি জেলার মৌচাষিরা এসেছিলেন ডার্থ পিরিয়ডে মৌচাষের নতুন এই কৌশল জানতে। সংস্থাটির ভ্যালু চেইন ফেজিলিটেটর রেজাউল করিম জানান, পঞ্চগড়ে এই সময়ে মধু সংগ্রহ একটি নতুন পদ্ধতি। তাই ৩০ জন মৌ খামারি দিনব্যাপী বিভিন্ন মৌ খামার পরিদর্শন করে স্থানীয় খামারিদের কাছ থেকে হাতে কলমে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন।

পরে এই মৌচাষিরা ফলপ্রসূ অভিজ্ঞতার কথা বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে তুলে ধরে বলেন, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, সিরাজগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ ও খুলনা মৌচাষীদের নতুন উৎস হতে মধু সংগ্রহের কৌশল জানার উদ্যেশ্যেই এই ভ্রমণ। ডার্থ পিরিয়ডেও যে মধু সংগ্রহ করা যায় পঞ্চগড়ের মধু খামারিরা নতুন করে আমাদের শিখিয়েছে। বাংলাদেশের যেখানে মিষ্টিকুমড়া,বিভিন্ন ধরনের সব্জি, ভুট্টা, তিল চাষ হয় সেখান হতে মধু সংগ্রহ করে উক্ত জেলার তথা বাংলাদেশের  মৌচাষীরা লাভবান হতে পারবেন। 


বাংলাদেশ মৌচাষী কল্যাণ সমিতির সাধারন সম্পাদক এবাদুল্লাহ আফজাল বলেন এই এলাকাসহ অন্যান্য এলাকায় উক্ত ফসল যদি মৌচাষের আওতায় আনা যায় তাহলে মৌচাষীদের ডার্থ পিরিয়ডে খাবারের সমস্যার সমাধান হবে।  মধু, পোলেন আহরিত হবে, পাশাপাশি পরাগায়নের মাধ্যমে ফলন বৃদ্ধি পাবে। মৌচাষী এবং মৌফসল উৎপাদনকারীদের আয় বৃদ্ধি পাবে । জাতীয় জিডিপিতেও  বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।
 
এদিকে ডার্থ পিরিয়ডে অন্য কোথাও মধু উৎপাদন না হলেও পঞ্চগড়ের মৌ খামারিরা মিষ্টি কুমড়া, তিল, করল্লাসহ বিভিন্ন সবজি থেকে মধু উৎপাদন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এ সময় তারা অনায়াসে মৌমাছিদের খাদ্যের জোগান দেয়ার পাশাপাশি ১ থেকে দেড় লাখ টাকা মুনাফা করছেন।

জেলা মৌ চাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি মনির হোসেন জানান, সরিষার সময় আমরা সিরাজগঞ্জে ছিলাম। এটা মৌমাছিদের জন্য খারাপ সময় হলেও পঞ্চগড়ে প্রচুর তিল,মিষ্টি কুমড়ো সহ নানা ধরনের সবজি আবাদ হওয়ার কারনে এখানে আমরা মৌমাছি বাঁচিয়ে রাখার পাশাপাশি আয়ও করছি । 

রংপুর এলাকার ভ্রাম্যমাণ মৌচাষি ওয়াজেদ আলী জানান, দেড়’শটি মৌবক্স নিয়ে গত দুমাস আগে পঞ্চগড় এসেছি। মৌমাছিও ভাল আছে । প্রায় লাখ টাকার মধুও বিক্রি করেছি । 

জেলা কৃষিকর্মকর্তা শামছুল হক  বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ডার্থ পিরিয়ডে মধু উৎপাদন ও মৌমাছির খাবার সংগ্রহের বিষয়ে পঞ্চগড়ের মৌচাষিরা নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে । এতে ফসলের উৎপাদনও বাড়বে। আমরা তাদের উৎসাহিত করছি।

বিডি প্রতিদিন/ ২৯ মে, ২০১৭/ ই জাহান

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর