১০ জুন, ২০১৭ ০৪:৫৮

নিজের সন্তান নিজেই গিলে খাচ্ছে এক বিশাল তারা

অনলাইন ডেস্ক

নিজের সন্তান নিজেই গিলে খাচ্ছে এক বিশাল তারা

সূর্যের চেয়ে অনেক বেশি দাউদাউ করে জ্বলা একটা তারা বা নক্ষত্র নিজেরই একটা ‘সন্তান’, আস্ত একটা গ্রহকে যেন গিলে খাচ্ছে। ওই তারার গা পুড়িয়ে দেওয়া তাপে তাকে পাক মেরে চলা আস্ত একটা গ্রহ ধীরে ধীরে উবে যাচ্ছে! এমন একটা দিন আসবে যখন ওই ভিন গ্রহটির আর কোনও অস্তিত্ব থাকবে না।

আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার’ এ গত সপ্তাহের মাঝামাঝি টেক্সাসের অস্টিনে আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির গ্রীষ্মকালীন বৈঠকে সেই গবেষণাপত্রটি নিয়ে সবিস্তার আলোচনার পর তা নিয়ে শোরগোলও শুরু হয়ে গেছে বিশ্ব জুড়ে।

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন, এত গরম ভিন গ্রহের হদিশ এর আগে মেলেনি। ‘কেল্ট-৯বি’ ভিন গ্রহটিই এই ব্রহ্মাণ্ডে আপাতত সবচেয়ে উষ্ণ কোন গ্রহ। শুধু তাই নয়, সূর্যের মতো যত তারা বা নক্ষত্রের হদিশ মিলেছে এখনও পর্যন্ত, তাদের বেশির ভাগের চেয়েই অনেক অনেক বেশি গরম, গা অনেক বেশি তেতেপুড়ে যাচ্ছে এই সদ্য অবিষ্কৃত ভিন গ্রহ- ‘কেল্ট-৯বি’র।

চাঁদ যেমন তার একটা পিঠ সব সময় রাখে পৃথিবীর দিকে, এই ‘কেল্ট-৯বি’ ভিন গ্রহটিও তেমনই তার একটা পিঠ সব সময় রাখে তার নক্ষত্র ‘কেল্ট-৯’-এর দিকে। আর তার অন্য পিঠটি সব সময়েই থেকে যায় অন্ধকারে।

ওই ভিন গ্রহের যে পিঠটি সব সময় তার নক্ষত্রের দিকে থাকে, তার নাম- ‘ডেসাইড সারফেস’। অন্য পিঠটির নাম- ‘নাইটসাইড সারফেস’। বছরভর, সারা ক্ষণ সেই গ্রহটির ‘ডেসাইড সারফেস’-এর তাপমাত্রা থাকে ৭ হাজার ৮০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা, ৪ হাজার ৩১৫.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৪ হাজার ৬০০ কেলভিন)।

মূল গবেষক কলাম্বাসের ওহায়ো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপক স্কট গাউরির দাবি, ‘‘এত গরম, গ্যাসে ভরা ভিন গ্রহের হদিশ এর আগে মেলেনি। আমাদের বৃহস্পতির মতো গ্যাসে ভরা গ্রহ হলেও ‘কেল্ট-৯বি’ ভিন গ্রহটি ‘গুরুগ্রহ’-এর চেয়ে প্রায় তিন (সঠিক হিসেবে, ২.৮ গুণ) গুণ ভারী। যদিও তার ঘনত্ব আমাদের বৃহস্পতির প্রায় অর্ধেক।’’

আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির গত সপ্তাহের বৈঠকে ওই গবেষণাপত্রটি নিয়ে আলোচনায় উঠে এসেছে ‘নানা মত’। কেউ বলছেন, সত্যি-সত্যিই কি কোনও গ্রহ অতটা গরম হতে পারে? অনেক তারা বা নক্ষত্রের চেয়েও যে বেশি গরম ‘কেল্ট-৯বি’ ভিন গ্রহটি। তাদের সংশয়, অন্য কোনও ধরনের মহাজাগতিক বস্তু নয় তো ‘কেল্ট-৯বি’?

কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভিজিটিং প্রফেসর অর্ণবজ্যোতি মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘যে নক্ষত্রটিকে পাক মারছে ওই ভিন গ্রহটি, সেই ‘কেল্ট-৯’ খুব বেশি দিন আগেকার তারা নয়। তার জন্ম হয়েছিল বড়জোর ৩০ কোটি বছর আগে। যেখানে আমাদের সূর্যের জন্ম হয়েছিল প্রায় ৫০০/৫৫০ কোটি বছর আগে। কিন্তু সেটি আমাদের সূর্যের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি বড়। আর সূর্যের চেয়ে তা প্রায় দ্বিগুণ গরমও। যে ভাবে সর্ব ক্ষণ ওই গ্রহ ‘কেল্ট-৯বি’-র একটা পিঠে আছড়ে পড়ছে তার নক্ষত্র থেকে বেরিয়ে আসা আলট্রা-ভায়োলেট রে’ বা অতিবেগুনি রশ্মি, তাতে তার বায়ুমণ্ডলের একটা বড় অংশই উবে যেতে বাধ্য। আর সেটা মহাকাশে বেরিয়ে আসবে অনেকটা ধূমকেতুর পুচ্ছ বা ‘টেল’-এর মতো। ওই অতিবেগুনি রশ্মির তাপেই ধীরে ধীরে উবে যাচ্ছে ভিন গ্রহ ‘কেল্ট-৯বি’-র বায়ুমণ্ডল।’’

তবে বিজ্ঞানীদের এটাও অনুমান, যে ভাবে অসম্ভব তাপ ঠিকরে বেরচ্ছে ওই নক্ষত্র ‘কেল্ট-৯’-র পিঠ থেকে, তাতে সেই তারাটিও আর খুব বেশি দিন ওই অবস্থায় থাকবে না। হয়ে যাবে ‘লাল দানব নক্ষত্র’ বা ‘রেড জায়ান্ট স্টার’।

বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর