১ নভেম্বর, ২০১৭ ১৬:০১

প্রকৃতির আঙিনায় শীতের কোলাহল

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম:

প্রকৃতির আঙিনায় শীতের কোলাহল

পড়ন্ত বিকেল। সূর্য ডোবার আগেই কুয়াশার হিমেল পরশ।  সবুজ ঘাসে কুয়াশার শুভ্র ঝিলিক। হাত বুলালেই প্রশান্তির আমেজ।  রাতে শীত শীত আবহ।  ভোরে শীতের কোলাহল।  দিনে কখনো রোদ, কখনো আকাশে ভাসছে মেঘের ভেলা, কখনো নির্মল বাতাস, কখনো গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। সূর্য মামা মাঝে মাঝেই মারছে উঁকি। প্রকৃতির আঙিনায় যেন কড়া নাড়ছে শীত।  
                
প্রকৃতিতে এখন চলছে হেমন্ত।  বর্ষপঞ্জিতে চলছে কার্তিক মাস।  অগ্রাহয়ণের পর পৌষ-মাঘ মাসই শীতকাল।  কিন্তু মধ্য কার্তিক থেকেই অনুভূত হচ্ছে শীত।  শীতের আবহে আলিঙ্গন করছে সকালে। ষড়ঋতুর এই দেশে বর্ষার পরই চলে শীতর আগমনের প্রস্তুতি।  প্রকৃতিতে শীত আসে ধীর লয়ে। কিন্তু এবার একটু আগেই আগমন ঘটছে শীতের। 

পতেঙ্গার আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, মৌসুমী লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। যার বর্ধিতাংশ উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত।  তাছাড়া কিছুদিন ধরে ভারত, পাকিস্তান ও নেপালেও এমন ধোঁয়াশা দেখা দিয়েছে। ভারতের দিল্লি থেকে বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্বাঞ্চলের ৭ রাজ্য হয়ে ঘন কুয়াশার আবরণটি বাংলাদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।  ফলে দেশের প্রকৃতি-পরিবেশেও এর প্রভাব পড়ছে।

আবহাওয়া দপ্তর জানায়, বাতাসে ধূলিকণা জমে যাওয়ার কারণে কুয়াশার মতো অনুভূত হতে পারে। ধুলো-মেঘের কারণে সূর্যের আলো নিচে নামতে পারছে না। এশিয়ার দেশগুলোতে বছরে একাধিকবার ফসল উৎপাদনের কারণেই আকাশে ধুলোর আস্তরণ জমছে। বাংলাদেশসহ এশিয়ার অন্য দেশেও এমন কুয়াশা পড়েছে। আবহাওয়া ক্রমেই বৈরী আচরণ করছে। আগে একটা বড় সময় বিরতি দিয়ে অতি শীত, অতি গরম বা অতি বৃষ্টির ঘটনা ঘটত। কিন্তু এখন উল্টো ঘটছে। ভবিষ্যতে আবহাওয়া আরও বৈরী হয়ে উঠতে পারে। বৃষ্টি কমলেই শীতের দাপট বাড়তে থাকবে।

স্বাস্থ্য বিশেজ্ঞরা বলছেন, এখন ঋতু পরিবর্তন হচ্ছে। ফলে মানুষের মধ্যে নানা রোগের নানা উপসর্গ দেখা দেওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে।  তবে শীতে শিশু ও বৃদ্ধরা কাবু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ আলী বলেন, ‘ঋতু পরিবর্তনজনিত কারণে নানা বয়সী মানুষের নানা ধরণের রোগের উপসর্গ দেখা দিতে পারে।  এক্ষেত্রে সকলকে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এ সময় সর্দি-কাশি-জ্বর, পেটের পীড়া, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ দেখা দিতে পারে।’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘ঋতু পরিবর্তনের কারণে বেশি ঝুঁকিতে থাকবে শিশুরা।  তাই এই সময় মায়েদের কোমলমতি শিশুদের সবচেয়ে বেশি যত্ন নিতে হবে। কারণ ঠান্ডায় শিশুর নিউমোনিয়া, ব্রংকিওলাইটিস, হাপাঁনি, ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি, জ্বরসহ নানা রোগ হতে পারে।  তাই পুরো শীতকাল জুড়েই শিশুকে সুস্থ রাখতে সতর্ক থাকার বিকল্প নেই।’

শিশু বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিশুদের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই কম। তাই শীতের পরিবর্তিত আবহাওয়ায় শিশুরা খুব সহজেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। তাছাড়া এ সময়ে বাতাসে ধুলোবালির পরিমাণও বেড়ে রোগজীবাণুর সংক্রমণ বাড়তে থাকে। তাই নানা রোগেও আক্রান্ত হয়। সঠিক সময়ে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে শিশুকে শীত জনিত রোগ থেকে মুক্ত রাখা যায়। এর জন্য দরকার রোগের কারণ, প্রকৃতি ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা সম্পর্কে অবগত থাকা। তাছাড়া শীতে নবজাতক শিশুকে নরম সুতি কাপড়া জড়ানো, হাত-পায়ে গরম মোজা পড়ানো উচিত। এক বছরের বেশি বয়সী শিশুদের উলের বা সুতির গরম কাপড়ে রাখতে হবে।

বিডিপ্রতিদিন/ ০১ নভেম্বর, ২০১৭/ ই জাহান

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর