শিরোনাম
২ নভেম্বর, ২০১৭ ২০:৪০

মাল্টায় নতুন স্বপ্ন দেখছে বগুড়ার চাষীরা

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া:

মাল্টায় নতুন স্বপ্ন দেখছে বগুড়ার চাষীরা

সবুজ রঙ ধরেছে।সারি সারি চারাগুলো বেশ ডাল মেলেছে।চারাগুলোর যত্ন বেড়েছে।  সবুজ রঙ আর ডালপালা গজিয়ে ওঠায় মনের মধ্যে নতুন এক স্বপ্ন উঁকি দিচ্ছে।এই স্বপ্ন নিয়েই বগুড়ার মাল্টা চাষীরা এখন ফলন পাওয়ার আশা করছেন।ফলন পাওয়া শুরু হলে জেলায় মাল্টার সাফল্য সৃষ্টি হবে।জেলায় উৎপাদিত মাল্টা দিয়ে এবার জেলার চাহিদা পূরণের আশা করছে কৃষি বিভাগ। 

জেলার ১২ উপজেলায় সরকারিভাবে সহযোগিতা নিয়ে চাষীরা এই মাল্টা চাষে উৎসাহিত হয়ে উঠেছেন।চাষীরা মাল্টা চারা রোপণ করার পর এখন মাল্টার বাগানের যত্ন করছেন। জেলায় এ পর্যন্ত প্রায় ১৫ হেক্টর জমিতে মাল্টা চাষ হয়েছে।কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী বছরে বগুড়ায় উৎপাদিত মাল্টা বাজারে পাওয়া যাবে।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টি কালচার সেন্টার বনানী কার্যালয়ের কৃষি কর্মকর্তরা জানান, ২০১৫ সাল থেকে জেলায় কিছু কিছু বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষ শুরু হয়।  জেলার মাটি ও আবহাওয়া ভাল বলে এ জেলার মাল্টার ফল মিষ্টি।  দেশে যে সব মাল্টা পাওয়া যায় তা টক। কিন্তু বগুড়ায় যে চাষ চলছে তা হবে মিষ্টি।  মাল্টার গাছগুলো কলম করে চারা তৈরী করে কৃষকদের মাঝে বিক্রি করা হয়েছে। জেলায় প্রায় ৯ হাজার চারা কৃষক পর্যায়ে বিক্রি করা হয়েছে। প্রতিটি চারা বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা করে। 

এছাড়া কৃষি সম্প্রসারণের আওতায় রাজস্ব খাতের অর্থয়নে বাস্তবায়িত প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে জেলার ১২টি উপজেলায় মাল্টা চাষে আগ্রহী করে তুলতে বারী-১ জাতের মাল্টার চারা বিতরণ করা হয়। চাষিরা সে চারা দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মাল্টার বাগান তৈরী করে ফলন পাওয়ার আশা করছে এখন। শুধু চারা বিতরণ এমন নয় ওই মাল্টা চাষিদের প্রশিক্ষণ, মাল্টার চাষ প্রণালী বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা করার পাশাপাশি কৃষকদের টিএসপি সার ১৫ কেজি, এমপিও সার ১৫ কেজি, জিপসাম ১৮ কেজি একটি সাইন বোর্ডও বিতরণ করা হয়েছে। এই বাগানগুলোতো আগামী বছর থেকে ফলন পাওয়া যাবে। সরকারিভাবে অর্থায়ন ছাড়াও কিছু কৃষক নিজ উদ্যোগে চারা সংগ্রহ করে বাগান তৈরী করে ফলন পেয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় ১৫ হেক্টর মাল্টা চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ২০টি মিশ্র ফলের বাগান রয়েছে। সেখানে মাল্টার পাশাপাশি অন্য ফলও চাষ করা হচ্ছে।

জানা যায়, ২০১৫ সালে বগুড়ার নন্দীগ্রাম, শাজাহানপুর, কাহালু, বগুড়া সদর ও শেরপুর উপজেলায় কয়েকজন ব্যক্তি নিজ উদ্যোগে মাল্টা চাষ শুরু করেন। এরও আগে বগুড়ার কয়েকটি নার্সারি মালিক নিজ বাগানে এবং বাড়ির ছাদে মিস্টি মাল্টার চাষ করেন। সে সময় শখের বসে হলেও এবার বগুড়া জেলায় বাণিজ্যিকভাবে মাল্টার ছাষ শুরু হয়েছে। জেলার বেশির ভাগ বাণিজ্যিক মাল্টার বাগানের বয়স এক থেকে দুই বছরে। দুই বছরের মাল্টার গাছে অল্প কিছু করে মাল্টা ফলন হলেও মাল্টার বাগন মালিক ও কৃষি অফিস বলছে আগামী বছরে জেলায় উৎপাদিত মাল্টিা ক্রেতাদের হাতে পৌঁছাবে।

বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটরা ইউনিয়নের টাকুরাই গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, নিজের ৫৪ শতক জমির উপর গড়ে তোলেন তার মাল্টা বাগান। তার বাগানে পাকিস্তানি জাতের ২৩৫ টি মাল্টা গাছ লাগানো হয়েছে। মাল্টার চারা রোপণের দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যেই ফল পাওয়া যায়। মাল্টা চাষের শুরু থেকেই কৃষি অফিস সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দিচ্ছেন। মাল্টার গাছগুলো এখন বেশ সতেজ রয়েছে। আগামী বছর ফলন পাবে বলে তিনি আশা করছেন। 

কৃষক আবু বক্কর জানান, মাল্টা চাষের পাশাপাশি তিনি ওই একই জমিতে সাথী ফসল হিসেবে রয়েছে ২৫০ টি থাই পিয়ারা, ২২০ টি থাই লেবু, ২০টি আম গাছ, ৫ টি কমলা, ১২০০ টি লিচু গাছসহ লাগিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে। তার মাল্টা চাষ দেখে এলাকার বেশ কিছু বেকার যুবক ও কৃষকরা এ মাল্টা চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। মাল্টা ফলন পাওয়া শুরু হলে আয়ও শুরু হবে। 

বগুড়া সদর উপজেলা কৃষিকর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সদরের শাখারিয়া ইউনিয়নের গোপাল বাড়ির মো: পাশা ও কদিমপাড়ার বেলাল হোসেনকে মাল্টার চারা প্রদান করা হয়েছে। তারা বাগান তৈরী করেছে ৬০টি করে চারা নিয়ে বাগান তৈরী করেছে। আগামী বছর ফলন পাবে বলে চাষিরা জানিয়েছেন। 

বিডিপ্রতিদিন/ ০২ নভেম্বর, ২০১৭/ ই জাহান

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর