১৫ ডিসেম্বর, ২০১৭ ১২:২৫

সাফারি পার্কে ক্যাঙ্গারু পরিবারে নতুন অতিথি

খায়রুল ইসলাম, গাজীপুর :

সাফারি পার্কে ক্যাঙ্গারু পরিবারে নতুন অতিথি

গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ক্যাঙ্গারু পরিবারে নতুন অতিথির আগমন ঘটেছে। আবারো বাচ্চা প্রসব করেছে পার্কের একটি স্ত্রী ক্যাঙ্গারু। এ নিয়ে এই পার্কে দ্বিতীয় বারের মতো উন্মুক্ত পরিবেশে বাচ্চা প্রসব করলো ক্যাঙ্গারু। 

এর আগে গত বছর মে মাসে বাংলাদেশে প্রথম বারের মতো ক্যাঙ্গারু শাবক জন্ম দিয়েছিল। এবার জন্ম নেওয়া মা ও বাচ্চা উভয়ই ভালো আছে। 

২০১৪ সালের আগস্টে ফ্যালকন ট্রেডার্সের মাধ্যমে সুদূর আফ্রিকা থেকে কিনে আনা হয় একটি পুরুষ ও দুইটি স্ত্রী ক্যাঙ্গারু। পরে এদের বিচরণের জন্য সাফারি পার্কের বেষ্টনীর ভিতর ছেড়ে দেওয়া হয়। প্রায় দুই বছর পর এবার বেষ্টনী ভিতরে একটি শাবক জন্ম নেয় এর প্রায় দেড় বছর পরই আরেকটি ক্যাঙ্গারু শাবক জন্ম নিল।

পার্কের ওয়াইল্ডলাইফ সুপারভাইজার সরোয়ার হোসেন খান ও মো. আনিসুর রহমান জানান, মারসুপিয়াল গোত্রের এক প্রকারের তৃণভোজী স্তন্যপায়ী প্রাণী ক্যাঙ্গারু। এ প্রাণী কেবল অস্ট্রেলিয়া, নিউগিনি, তাসমানিয়ার আশপাশের দ্বীপাঞ্চলগুলোয় বেশি পাওয়া যায়। ক্যাঙ্গারুর আদিনিবাস অস্ট্রেলিয়া হলেও পার্কে আনা হয় সুদূর আফ্রিকা থেকে। 

তিনি বলেন, আমাদের দেশে ভিন্ন পরিবেশ হলেও পার্কে উপযুক্ত পরিবেশ পেয়ে রেড (হলদে লাল) পুরুষ আর ধূসর বর্ণের নারী দম্পতি প্রায় দুই বছর পর একটি এবং এর প্রায় দেড় বছর পর আরেকটি ধূসর বর্ণের মেয়ে শাবকের জন্ম দিয়েছে। ক্যাঙ্গারু শাবক ৭-৮ মাস মায়ের দুধ পান করে। আর এক বছর পর পরিবার থেকে আলাদা হয়ে যায়। এরা প্রাকৃতিক পরিবেশে ১২ থেকে ১৬ বছর বেঁচে থাকে। তবে সাফারি বাউন্ডে (আবদ্ধ জোন) ২০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।

বড় ক্যাঙ্গারুগুলো ম্যাক্রোপোডিড পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এরা দুই বছরে ৩ বার বাচ্চা দেয়। লাল ও ধূসর ক্যাঙ্গারু আকারে বড় হয়। এদের ২ মিটার দৈর্ঘ্য আর ৮৫ কেজি পর্যন্ত ওজন হয়ে থাকে। পৃথিবীতে প্রায় ৫০ প্রকার ক্যাঙ্গারু থাকলেও বাংলাদেশে একটি মাত্র প্রজাতির ক্যাঙ্গারু আনা হয়েছে। এটি প্রজননের ৩৩ দিন পরেই সন্তান জন্ম দেয়। 

ক্যাঙ্গারু শাবক মাত্র তিন-চার সেন্টিমিটাটার দৈর্ঘের হয়। জন্মের পরপরই এটি তার মায়ের পেটের থলের মধ্যে প্রবেশ করে। তখন শাবকের চোখ ফুটেনা। শরীরে কোনো লোমও থাকে না। পেটের থলের মধ্যে থেকেই এরা মায়ের বুকের দুধ পান করে। দুই-আড়াই মাস পর মায়ের পেট থেকে যখন মাথা বের করে তখন এটিকে দেখা যায়। তাদের নিয়মিত কলা, আপেল, কলমি শাক, গাজর, শশা, খেজুর, সবুজ ঘাসসহ বিভিন্ন ফল দেয়া হয়।

সাফারী পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, সাফারি পার্কে কোনো প্রাণী শাবক প্রসব করলে তাৎক্ষণিকভাবে সাধারণদের জানানো হয়না। জন্ম নেয়া শাবকগুলোর একটি নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পর তা জানানো হয়। বিভিন্ন প্রকার রোগ-বালাই, সংক্রামক ব্যাধি এবং আবহাওয়া ও পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার পরই বিষয়টি সকলকে জানানো হয়।

পার্কের ক্যাঙ্গারু ব্যাষ্টনিতে গিয়ে দেখা গেছে, ক্যাঙ্গারু ছানাটি সারাক্ষণই বেষ্টনীর ভিতরে ছোটাছুটি করছে। কখনো মায়ের পেটের নিচের থলির ভিতর স্থির থাকছে, আবার কখনো থলি থেকে বের হয়ে মা-বাবার সঙ্গে খেলা করছে। সে মায়ের পিছু কিছুতেই ছাড়ছে না। মা যেদিকে যাচ্ছে শাবকটিও সেদিকে যাচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মোতালেব হোসেন জানান, ক্যাঙ্গারু বিদেশি পরিবেশের প্রাণী। আমরা এখানে প্রাণীগুলোকে বিশেষ পরিবেশে বড় করেছি। সে তার প্রাকৃতিক পরিবেশের মতোই এই পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিয়েছে বলেই গত বছর ও এই বছর বাচ্চা প্রসব করেছে। কিছুদিন পর বাচ্চাটিকে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হলে পার্কে পার্কে পর্যটনের এ মৌসুমে ক্যাঙ্গারু শাবক দর্শনার্থীদের অন্যরকম আনন্দ দেবে।

বিডিপ্রতিদিন/ ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৭/ ই জাহান

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর