১২ মার্চ, ২০১৮ ১৩:৩৫

অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি তাড়ুয়া সৈকত

এম আবু সিদ্দিক, চরফ্যাশন:

অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি তাড়ুয়া সৈকত

বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে নদী বেষ্টিত একমাত্র দ্বীপ জেলা ভোলা। পূর্বে মেঘনা, উত্তরে ইলিশা, পশ্চিমে তেঁতুলিয়া আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। এর মাঝে ৩ হাজার ৪শ' ৩ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে ব-দ্বীপ জেলা ভোলা। রূপালী ইলিশ, ধান আর সুপারির জন্য বিখ্যাত এ জেলা। এই জেলার উপ শাখা হিসেবে রয়েছে চর মানিক, চর জব্বার, চর নিউটন, চর নিজাম, চর জংলী, চর মনপুরা, চর ফয়েজ উদ্দিন, চর জহিরউদ্দিন, চর কচুয়া, চর সৈয়দ, ভাসান চর, চর পাতিলা, চর কুকরী মুকরী ও ঢালচর সহ ছোট বড় অসংখ্য চর। এসকল চরের মাঝে লুকিয়ে আছে সূর্যদ্বয় ও সূর্যাস্তসহ অপরূপ সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি। 

জেলা সদর থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দক্ষিণে চরফ্যাশন উপজেলার সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় প্রায় দেড় শত বছর আগে জেগে উঠা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ঢালচর। এই চরের তাড়ুয়া সমুদ্র সৈকতটি অপরূপ সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি। বিচ্ছিন্ন এই ঢালচর থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টার নদী পথ ট্রলারে পাড়ি দিয়ে বঙ্গোপসাগরের একেবারে দক্ষিণের মোহনায় মনোরম ম্যানগ্রোভ বন সমৃদ্ধ তাড়ুয়া চর দাঁড়িয়ে আছে। চারপাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি কেওড়া গাছ। তাড়ুয়ার সৈকতে দেখা মিলবে চকচকে সাদাবালি আর লাল কাঁকড়ার লুকোচুরি। পাশাপাশি দেখা মিলবে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কোলাহল, সূর্যদয় ও সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য। কর্ম চাঞ্চল্য জীবনের মাঝে কিছুটা সময় অবকাশ যাপনের জন্য প্রকৃতি প্রেমিরা ইচ্ছে করলেই এ চর ঘুরে যেতে পারেন।

তাড়ুয়া ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল:
এই ঢালচরের ৩১.৩১ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ২৮.২০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে সুবিশাল বনাঞ্চল রয়েছে। এর মধ্যে তাড়ুয়ার বন অন্যতম। এই তাড়ুয়া বনে রয়েছে গেওয়া, গড়ান, কেওড়া, বাইন, রেইনট্রিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান গাছ। শীত এলেই এখানে দেখা মিলবে বিভিন্ন প্রজাতির হাজার হাজার পরিযায়ী পাখির। এখানে পরিকল্পিতভাবে বনাঞ্চল শুরু হয় ১৯৭৬ সালে। কোন হিংস্র পশুর ভয় না থাকলেও বনে রয়েছে শিয়াল, বন বিড়াল, হরিণ, সাপসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণি। এই বাগানের মধ্যে দিয়ে সরু রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে একটু ভেতরে প্রবেশ করলেই মনে হবে এ যেন আরেক ভুবন। সেখানে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বিশাল এক খন্ড শীতল ছাঁয়া বিশিষ্ট মাঠ। স্থানীয়দের কাছে জায়গাটা বরই তলা নামে পরিচিত।

তাড়ুয়া সমুদ্র সৈকত:
বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের শেষ প্রান্তে বঙ্গোপসাগরের অবস্থান। তাড়ুয়ার সাদা বালির বিশাল সমুদ্র সৈকতে দেখা মিলবে নোনা পানির ঢেউ। সেখানে সাদা বালি আর নোনা পানিতে স্বাদ মিলবে কক্সবাজার অথবা কুয়াকাটা সৈকতের। পাশাপাশি সৈকতে দেখা মিলবে লাল কাকড়ার। বালির উপরে ছোট ছোট পা দিয়ে দৌঁড়ে চলে এসব লাল কাঁকড়ার দল। মানুষে অবস্থান টের পেলে এরা চোখের নিমিষেই লুকিয়ে পড়ে বালির গর্তে।

সূর্যদ্বয় ও সূর্যাস্ত:
দিনের প্রথম প্রহরে তাড়ুয়া সৈকতে দাঁড়ালে দেখা যাবে সমুদ্র থেকে ভেসে ওঠা লাল টকটকে সূর্য। সিঁড়ি বেয়ে একপা দু’পা করে আকাশের পথে যাচ্ছে। আবার সন্ধ্যায় দেখা মিলবে সমুদ্রের ঢেউ সেই সূর্যে মিসে যাওয়ার দৃশ্য।

বিনোদন কেন্দ্র:
এই সমুদ্র সৈকতের পাশে রয়েছে বিশাল তাড়ুয়া বন। বনের ভেতরেই প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা শীতল ছাঁয়া বেষ্টিত মাঠ। সেখানে একাধিক বাংলা ছায়াছবির শুটিং হয়েছে। এই চরেই বাংলা ছায়াছবি “অনেক সাধের ময়না” এর বাসর ঘর ও কয়েকটি গানের দৃশ্যের চিত্রায়ন হয়।

ভোলা জেলা প্রশাসক মোঃ সেলিম উদ্দিন জানান, ভোলায় পর্যটনের সম্ভাবনা প্রচুর। কারণ এখানকার ছোট ছোট দ্বীপগুলোতে একটি প্রাকৃতিক পরিবেশ আছে, যাকে বলে ইকোট্যুরিজম। আমরা সেটা উৎসাহিত করার চেষ্টা করছি। এখানে সরকারি বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো গেলে আরো অবকাঠামো তৈরি হবে। পাশাপাশি আরো বেশি বেশি পর্যটক আসবে বলেও জানান তিনি।


বিডি প্রতিদিন/১২ মার্চ ২০১৮/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর