বাংলা ঋতু অনুযায়ী বর্ষাকাল পেরিয়ে গেলেও অন্য ঋতুতেও বর্ষণ চলে। শুধুমাত্র শীতকাল ছাড়া বছরজুড়েই বিভিন্ন সময়ে চলে এই বর্ষণ। বিশেষ করে বর্ষাকাল এবং হেমন্তকালে বর্ষণের ব্যাপকতা লক্ষ্য করা যায়। দুই একদিন পরপরই যে কোনো সময় ঘণ্টা ধরে চলে বর্ষণ। কখনও কখনও দিনব্যাপী চলে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। আবার কখনও রাত যখন গভীর হয় তখন শুরু হয় মেঘেদের কান্না।
প্রকৃতির এই নানা রঙয়ের খেলায় বর্ষণের সময়ে নারায়ণগঞ্জ মূল শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া শীতলক্ষ্যা নদী বা লক্ষ্যা নদী প্রাণের সঞ্চার হয়ে থাকে। টলটল করে স্বচ্ছ পানি। পানির স্বচ্ছতা বাড়ার পাশাপাশি বাড়ে কলতানও। স্বাভাবিক ধারায় যেন ফিরে আসে নদীর স্রোত। নদীর এমন পুরানো চেহারায় মন কাড়ে মাঝি-মাল্লা ও নারায়ণগঞ্জবাসীর।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শিল্পনগরী খ্যাত নারায়ণগঞ্জ জেলার বুক চিরে বয়ে গেছে শীতলক্ষ্যা নদী বা লক্ষ্যা নদী। এক সময় রূপ যৌবনে ভরপুর থাকতো এই নদী। কিন্তু বর্তমানে শুষ্ক মৌসুমে শীতলক্ষ্যা নদী হয়ে উঠে নিষ্প্রাণ। নদীর পানি কমে আসলে দুই পাড় ঘেসে গড়ে উঠা ডাইং-কারখানার কেমিক্যাল যুক্ত বিষাক্ত তরল বর্জ্যরে আধিক্য বেড়ে যায়। নাব্যতা হারিয়ে মারা যায় নদী।
শীত মৌসুমসহ বছরের প্রায় বেশির ভাগ সময়ই পানি কম থাকায় নদীর পরিস্থিতি হয়ে উঠে নাজুক। নদীর স্বচ্ছ পানি পরিণত হয় ডাইংয়ের বিষাক্ত বর্জে। থমকে যায় নদীর স্রোত আর পানি পঁচে দুর্গন্ধ ছাড়ায় বাতাসে। সেখানে জলজ প্রাণের অস্তিত্ব মারাত্মক সংকটে পরে যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ডাইং, প্রিন্টিং, কয়েল ও পেপার মিলসহ অন্যান্য কলকারখানার ব্যবসায়িদের অসচেতনতা এবং অনিয়মের ফলে দেশের গুরুত্বপূর্ণ শীতলক্ষ্যা নদী ভয়ানকভাবে দূষিত হচ্ছে। অপচনশীল পলিথিন, প্লাস্টিক ও নানাবিধ ময়লার অবাসস্থলে পরিণত হয়ে থাকে এই শীতলক্ষ্যা।
রেজিস্ট্রেশন ব্যতিত ডাইং, প্রিন্টিং, কয়েল ও পেপার মিলের দূষিত বর্জ্য পরিশোধন ছাড়াই ফেলা হচ্ছে নদীতে। ফলে ভয়ানক ভাবে দূষিত হচ্ছে নদী। কিছু প্রতিষ্ঠান ইটিপি স্থাপন করলেও তা ব্যবহার করা হয় না।
শীতলক্ষ্যা নদীর সেন্ট্রাল খেয়াঘাট এলাকার মাঝি জামাল হোসেন বলেন, বৃষ্টির সময়ে নদীর পানি দেখলে মন চায় ডুবাতে। কিন্তু এই পানি বেশিদিন থাকে না। পানি কমে আসলেই দুর্গন্ধ হয়ে যাবে। আলকাতরার মতো হয়ে যায়। তখন পানির গন্ধে নৌকা চালানোই কষ্ট হয়ে যায়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শেখ মোজাহিদ বলেন, বৃষ্টি মৌসুমে উজান থেকে পানি আসার কারণে এই স্বচ্ছতা দেখা যায়। আর শীতকালে পানির পরিমাণটা কমে যায় যার কারণে দূষণটা বেশি দেখা যায়। সেই সাথে শীতলক্ষ্যা দূষণটা শুধু নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রিক না। নারায়ণগঞ্জের পাশ্ববর্তী জেলা থেকেও এই দূষণটা হয়ে থাকে।
তিনি আরও বলেন, আমরা চেষ্টা করবো শীতলক্ষ্যার সাথে নারায়ণগঞ্জের যেসকল কারখানাগুলো আছে সে সকল কারখানার দূষিত বর্জ্য যেন পরিশোধন করে নদীতে ফেলা হয় সেই ব্যবস্থা করার জন্য। আমরা আমাদের অবস্থান থেকে চেষ্টা করবো শীতলক্ষ্যাকে দূষণমুক্ত রাখার জন্য।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল