রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা

ছাত্রলীগকে লেখাপড়াও করতে বললেন প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের লেখাপড়ায় মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, সংগঠন করতে হবে। লেখাপড়া বাদ দিয়ে নয়। নিজেদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। দেশপ্রেমের দীক্ষা দিয়ে তিনি বলেন, দেশকে ভালোবাসতে হবে, দেশের মানুষকে ভালোবাসতে হবে। জাতির পিতা বলেছিলেন, মহৎ অর্জনের জন্য মহৎ ত্যাগ করতে হয়। সেই ত্যাগের জন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। নিজেদের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনের সড়কে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় গতকাল তিনি এসব কথা বলেন। ছাত্রলীগের সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্র পরিচালিত হবে সাংবিধানিক ধারায়। ভবিষ্যতে আর যেন অসাংবিধানিক শক্তি ক্ষমতায় না আসে সে জন্য আমরা সংবিধান সংশোধন করেছি। সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় গণতন্ত্র সুরক্ষিত হয়। আর গণতন্ত্র না থাকলে অর্থনৈতিক মুক্তি আসে না। শেখ হাসিনা বলেন, অসাংবিধানিক শক্তির ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, জাতির জনককে হত্যার পর যে সরকারই এসেছে তারা কেউ সঠিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। সাংবিধানিক অধিকারের জন্য বঙ্গবন্ধু সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল সংক্রান্ত সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীকে জাতির জন্য একটি মাইলফলক উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, '৭৫ এর পর কেউ ভাবেনি দেশে আবার '৭২ এর সংবিধান ফিরে আসবে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এ সংবিধান সংশোধন করেছেন। তখন শুধু বিএনপি-জামায়াত অনুপস্থিত ছিল। এ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে সাংবিধানিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, ২০০১ সাল ছাড়া ৪২ বছরে একবারও শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়নি।

বিকাল ৪টায় ৩২ নম্বরের বাড়িতে আসেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। সেখানে এসেই বঙ্গবন্ধু ভবনে ঢুকে বাড়িটি ঘুরে ঘুরে দেখেন এবং যেখানে জাতির জনককে হত্যা করা হয়েছিল সেস্থানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।

বিকাল সাড়ে তিনটায় এ শোকসভার আয়োজন করা হলেও বেলা এগারোটা থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে উপস্থিত হয়। দুপুর ২টার মধ্যে শোকসভাস্থল কানায় কানায় ভরে ওঠে। সভা শুরুর কিছু আগেই মুষলধারে বৃষ্টি নামে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার বক্তব্য শোনার জন্য ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অপেক্ষা করে। পরে ছাত্রলীগের বার্ষিক প্রকাশনা 'মাতৃভূমি' প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেওয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ক্ষমতায় আসলে দেশের উন্নতি করি। আর বিএনপি ক্ষমতায় আসলে দেশ লুট করে। ওরা যে দুর্নীতিবাজ সেটা আন্তর্জাতিকভাবে প্রমাণিত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজেদের ভাগ্য গড়তে আসিনি। এসেছি জনগণের ভাগ্য গড়তে। বর্তমান সরকারের আমলে দেশের বিভিন্ন খাতে উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও আমরা ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়িয়েছি। শিক্ষার হার বাড়িয়েছি। রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের সুযোগ চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রূপকল্প-২০২১ ঘোষণা করে আমরা ক্ষমতায় এসেছিলাম। অনেক পরিকল্পনা আমরা বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। অনেকগুলোই বাস্তবায়িত হওয়ার পথে। আগামীতে ক্ষমতায় আসলে ইনশাল্লাহ ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলব। আবেগাপ্লুত কণ্ঠে শেখ হাসিনা বলেন, সামনে আমার একটাই লক্ষ্য। আমার পিতার স্বপ্ন পূরণে এই দেশের মানুষের জন্য যেন কিছু করে যেতে পারি।

সভায় কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনা আলোর পথের যাত্রী। আর বিএনপি নেত্রী জামায়াত, হেফাজত, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, অস্ত্রবাজদের নেত্রী।

ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি অগণতান্ত্রিক শক্তি, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পরাজিত শক্তি একত্রিত হচ্ছে দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা নষ্ট করার জন্য। শোকের মাসে বাঙালি জাতির একটাই দাবি যুদ্ধাপরাধীরদের রায় কার্যকর করে বাংলাদেশকে কলুষমুক্ত করা।

আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ কিছুটা হলেও কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। বাকি পলাতক খুনিদের বিদেশ থেকে ফেরত এনে রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে অভিশাপমুক্ত করা।

সর্বশেষ খবর