বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা

সরকার উৎখাত করতে ওপারে বসেই জঙ্গি নীলনকশা!

বাংলাদেশের শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করতে পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে ঘাঁটি গেড়ে বসেই নীলনকশা তৈরি করছিল জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) মতো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলো। বর্ধমান বিস্ফোরণ ঘটনার তদন্তে নেমে এ তথ্যই উঠে এলো গোয়েন্দাদের হাতে। আর এরপরই চোখ কপালে ওঠার জোগাড় ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএর।
বর্ধমান জেলার খাগড়াগড়ে একটি বাড়িতে ২ অক্টোবর বিস্ফোরণে শাকিল আহমেদ ও সোবহান মণ্ডল নামে দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। গুরুতর অবস্থায় এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আবদুল হাকিম। ওই ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে রাজ্য সরকারের গোয়েন্দা সিআইডি। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য রাজিয়া বিবি (মৃত শাকিলের স্ত্রী) এবং আমিনা বিবি (হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আবদুল হাকিমের স্ত্রী)। ইতিমধ্যেই তদন্তের ভার দেওয়া হয়েছে এনআইএকেও। এরপরই তদন্ত যত এগিয়েছে ততই একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের হাতে। তদন্তে নেমেই ধৃতদের নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে এনআইএ। তাদের জেরা করার পরই ঘটনার সঙ্গে সন্ত্রাসী যোগের বিষয়টি পুলিশের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়। মৃত দুই ব্যক্তি বাংলাদেশের নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীনের সদস্য বলেও জানতে পারে তারা। গোয়েন্দারা এও জানতে পারে, বাংলাদেশে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের পাশাপাশি সে দেশের সরকারকে ফেলে দেওয়াই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য।
তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছে, ছোট-বড় মিলিয়ে একাধিক বিস্ফোরক তৈরির কারখানা খোলা হয়েছিল বর্ধমান, মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন স্থানে। এসব কারখানায় গ্রেনেড, ইমপ্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি)-সহ যেসব বিস্ফোরক তৈরি করা হচ্ছে তা চোরাপথে বাংলাদেশে পাঠানোই লক্ষ্য ছিল সন্ত্রাসবাদীদের। বর্ধমানে তৈরি হওয়ার পর সেই বিস্ফোরক সম্ভবত আসামের ধুবড়ি হয়ে ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত পার হয়ে তা পাচার হতো পদ্মাপারের দেশটিতে। এর পর সময়মতো হাসিনার সরকারকে বিপদে ফেলতে তা ব্যবহার করা হতো।  সূত্র জানায়, বেশ কিছু দিন আগে বাংলাদেশ তরফে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছিল, সেদেশের সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামি পশ্চিমবঙ্গের মাটিতেই ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে। এমনকি ওই দুই সন্ত্রাসী বর্ধমানে গা-ঢাকা দিয়েছে। পাশাপাশি আসামের ধুবড়িতেও অবাধ যাতায়াত আছে বলে ভারতের হাতে একাধিক তথ্য তুলে দেয় বাংলাদেশ। পলাতক ওই দুই আসামিই বাংলাদেশের মাটিতে বোমা বিস্ফোরণের পাশাপাশি হাসিনার সরকারকে উৎখাত করতে এই অভিসন্ধি ফেঁদেছে বলে গোয়েন্দাদের অনুমান। ঘটনার পর কেটে গেছে ২০ দিন। এরই মধ্যে বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম জেলার একাধিক জায়গা থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকসহ প্রায় ৬৫টি আইইডি উদ্ধার করা হয়েছে। দুই দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় বেআইনি মাদ্রাসারও খোঁজ পেয়েছে গোয়েন্দারা। ওই মাদ্রাসাগুলো থেকে প্রচুর পরিমাণ বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম, জিহাদি বই উদ্ধার করা হয়েছে। যা যথেষ্ট অস্বস্তির কারণ দুই দেশের কাছে। বর্ধমান বিস্ফোরণ ঘটনায় আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসযোগের প্রমাণ পাওয়ার পরই ভারতীয় গোয়েন্দারা এ ব্যাপারে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের সতর্ক করেছেন। সেই মতো বাংলাদেশের গোয়েন্দারাও সেদেশের মাটিতে আত্মগোপন করে থাকা জেএমবি সন্ত্রাসীদের খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে।
এদিকে বর্ধমান বিস্ফোরণ ঘটনায় জড়িত সন্ত্রাসীদের সঙ্গে ভুঁইফোড় অর্থলগ্নিকারী সংস্থা সারদার কোনো সম্পর্ক আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে তদন্তে নামল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। বিস্ফোরণ ঘটনায় জড়িত জেএমবি সন্ত্রাসীদের কাছে সারদার কোনো রুপি পৌঁছেছে কিনা সে ব্যাপারেও খোঁজখবর নিতে শুরু করল ইডি। বেআইনি মাদ্রসা নির্মাণের কাজে যেভাবে এলাকার কৃষি জমি বেশি দামে বিক্রি করা হয়েছে সে ব্যাপারটি খতিয়ে দেখতে জেলার ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের সঙ্গেও কথা বলবে ইডির অফিসাররা।

সর্বশেষ খবর