বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা

বিএনপি ব্যস্ত দল জোটের ভাঙন ঠেকাতে

দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ফখরুলসহ কয়েক সিনিয়র নেতাকে

বিএনপি ব্যস্ত দল জোটের ভাঙন ঠেকাতে

মুখে আন্দোলনের কথা বললেও দল ও জোটের ভাঙন ঠেকাতেই ব্যস্ত বিএনপি নেতারা। সেই সঙ্গে রয়েছে নতুন মামলার আতঙ্ক। শীর্ষ থেকে শুরু করে তৃণমূল- সব পর্যায়েই একই পরিস্থিতি। ভাঙন রুখতে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে খোঁজখবর রেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে তারা দু-তিনটি শরিক দলের ‘জোট ত্যাগ’ এবং বেশ কয়েকজন নেতার ‘দল ত্যাগ’ ঠেকাতে সক্ষম হয়েছেন বলেও জানা যায়।
বিএনপি চেয়ারপারসন, জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ভাঙনের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, ‘নানাভাবে বিএনপি ও জোট ভাঙার চেষ্টা করছে সরকার। এমনকি একাধিক গোয়েন্দা সংস্থাকেও এখন দল ভাঙার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। কোন দল কীভাবে ভাঙবে, কোন জোট থেকে কাকে কীভাবে নিয়ে আসা হবে, কার নামে কীভাবে কয়টা মামলা দিয়ে দলছুট করানো যাবে- সেসব কাজ করানো হচ্ছে বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে।’
অবশ্য, বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, জোটের ভাঙন ঠেকানোর পাশাপাশি ক্ষমতাসীন ১৪-দলীয় জোট থেকে দুটি বড় দলসহ খুচরা কয়েকটি দলকেও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। দুটি শরিক দলের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতার উদ্যোগে বৃহৎ দুটি অংশ এ জোটে আসার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করলেও সরকারের দমননীতির ভয়ে আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। ওই দুই দলে একাধিক মন্ত্রী, এমপিও রয়েছেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘শুধু বিএনপি নয়, বিরোধী মতের সব দলকেই দেশ থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। কার্যত তারা একদলীয় শাসনব্যবস্থার দিকে এগোচ্ছে।’ জোট ভাঙার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ছোটখাটো দুটি দলের কয়েকজন নেতাকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে সরকার। তবে এতে ২০-দলীয় জোটের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। বরং সরকারের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে।’ ফখরুল আরও বলেন, ‘অতীতে বিএনপির বিরুদ্ধে বহু ষড়যন্ত্র হয়েছে। মইন উদ্দিন-ফখরুদ্দীনের সরকারও চেষ্টা করেছে। এই আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরদিন থেকেই বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। কিন্তু আমাদের নেতা-কর্মীরা যথেষ্ট সজাগ ও সতর্ক। তারা মামলা-হামলা, হয়রানি-নির্যাতন সবকিছু সহ্য করেও দল ও জোটের ঐক্য ধরে রেখেছেন। ইনশা আল্লাহ কোনো ষড়যন্ত্র সফল হবে না।’
বিএনপির একাধিক সূত্রের দাবি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) শেখ আনোয়ারুজ্জামান ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) শেখ শওকত হোসেন নীলুসহ কয়েকজন নেতাকে জোট ত্যাগী করানো হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) ও বাংলাদেশ লেবার পার্টির শীর্ষস্থানীয় নেতাদেরও বিভিন্ন লোভ-লালসা দেখানোসহ টোপ দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ তাকে মন্ত্রিত্বের টোপ দেওয়া হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিইনি বলেই আমাকে এখন দুদকে যেতে হচ্ছে।’ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা। এ ছাড়া লেবার পার্টির ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানকে জোট ছাড়তে লোভনীয় প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এনডিপির গোলাম মোর্তজাসহ আরও কয়েকটি ছোট দলের নেতার সামনে এখনো টোপ রয়েছে।
শুধু জোট ও বিএনপিই নয়- শ্রমিক দল, ছাত্রদল ও যুবদলসহ বিএনপির সহযোগী সংগঠনগুলোও ভাঙার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের পর পদবঞ্চিত নেতাদের সরকারের পক্ষ থেকে উসকানি ও ইন্ধনের অভিযোগ তুলেছেন খোদ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল ভাঙার সঙ্গে জড়িতরা ছিলেন সরকারের এজেন্ট। গত ছয় বছরে যেখানে ১০ জন লোককে একসঙ্গে পার্টি অফিসের সামনে দাঁড়াতে দেয়নি সরকার, সেখানে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভসহ অফিস অবরুদ্ধ ও ভাঙচুর করার জন্য হাজার হাজার সদস্যকে এনে দাঁড় করিয়েছে। তাদের খাবারের প্যাকেট ও পানির বোতল সরবরাহসহ নানাভাবে সহযোগিতা করা হয়েছে।’
এর আগে বিদ্রোহীদের দিয়ে শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নয়া কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে লাঞ্ছিত ও অবরুদ্ধ করে রাখার ক্ষেত্রেও সরকারের ইন্ধন ছিল বলে অভিযোগ করেন বিএনপি ও শ্রমিক দলের কয়েকজন নেতা। বিএনপির নীতিনির্ধারক মহলের দুজন সদস্য জানান, দলের সিনিয়র নেতাদের নামে ডজন ডজন পুরনো মামলা রয়েছে। তাদের মানসিকভাবে দুর্বল করতে এখন আরও মামলা দেওয়া হচ্ছে। নতুন মামলার পাশাপাশি পুরনো মামলাগুলোরও চার্জশিট দেওয়া হচ্ছে দ্রুত। স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বিরুদ্ধে গুলশানের বাড়িসংক্রান্ত মামলা চলছে। ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকাসহ নয়জনের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার জারি করা হয়েছে গ্রেফতারি পরোয়ানা। ৮২ বছরের প্রবীণ নেতা এম কে আনোয়ারের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা দিয়ে তার বিচার শুরু করা হয়েছে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সর্বশেষ রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালতে। আর বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগও তদন্ত করতে বলা হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এসব মামলাকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আখ্যা দিয়েছেন। তবে তার নিজের বিরুদ্ধেই ১৫টিরও বেশি মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্র ছাড়াও জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও একইভাবে মামলা-হামলা, জেলে পাঠানো ও নানা ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ বিভিন্ন লোভনীয় প্রস্তাবের মাধ্যমে বিএনপি নেতা-কর্মীদের অন্য দলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার গোপালদি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বাশার কাশু সম্প্রতি সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুর হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। তিনি বিএনপির সাবেক এমপি আতাউর রহমান আঙ্গুরের ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দল ভাঙার চেষ্টা আওয়ামী লীগ অতীতেও করেছিল, এখনো নানাভাবেই করছে। কিন্তু এ অবৈধ সরকারের সঙ্গে কেউ যেতে চাচ্ছে না। ইনশা আল্লাহ দল ভাঙার এই আওয়ামী চেষ্টা কোনো দিনই সফল হবে না।’ তিনি দল ও জোটের নেতা-কর্মীদের এ ব্যাপারে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।

সর্বশেষ খবর