বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা

নতুন বিনিয়োগের লক্ষণ নেই

ব্যাংকিং খাতে বাড়ছে দায়

নতুন অর্থবছরে নতুন বিনিয়োগের লক্ষণ নেই। অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগে আগের অর্থবছরের চিত্রই প্রতিফলিত হচ্ছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি না আসায় বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ বিতরণ বাড়ছে না। উল্টো আমানত বাড়ছে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি। ফলে দায় বেড়ে যাচ্ছে দেশের ব্যাংকিং খাতের। বিশেষ করে দেশের বিনিয়োগ ও শিল্পোৎপাদনে সবচেয়ে বেশি অর্থায়ন হয় যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে, তুলনামূলকভাবে সেই ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের হার সবচেয়ে কম। যে পরিমাণ ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো দিতে পারে, বিতরণ হয়েছে তার অর্ধেকের কিছু বেশি। বাকি অর্ধেক (তারল্য) অলস পড়ে রয়েছে, যা ব্যাংকগুলোর দায় বাড়িয়ে দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতিকে পাল্টে দেওয়ার জন্য যে অবকাঠামো সুবিধা দরকার, সেটিই এখনো নিশ্চিত করতে পারছে না সরকার। উপরন্তু হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপসহ বেশ কয়েকটি বড় আকারের ঋণ কেলেঙ্কারির কারণেও অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করছে বাণিজ্যিক ব্যাংক। ফলে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর তুলনামূলক স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ বজায় থাকলেও তার সুফল পাচ্ছেন না উদ্যোক্তারা। গ্যাস, বিদ্যুতের অভাবে এখনো পুরোদমে উৎপাদনে যেতে পারছে না অনেক কারখানা। সম্প্রতি চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসের (জুলাই) ঋণ ও আমানতের তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে আমানত ও ঋণের বিবরণী পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই শেষে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ব্যাংকিং খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি ১৫ দশমিক ৫৪ শতাংশে উন্নীত হলেও ঋণের প্রবৃদ্ধি রয়ে গেছে ১০ দশমিক ৪২ শতাংশে। গত অর্থবছরের জুন শেষে সামগ্রিক ব্যাংক খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ১৫ শতাংশ। ফলে নির্বাচন-পরবর্তী ক্ষমতাসীন সরকারের নতুন বাজেট ঘোষণার পর বিনিয়োগের যে ইতিবাচক চিত্র প্রত্যাশা করা হয়েছিল, তার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জুলাই শেষে দেশের ব্যাংকগুলোয় মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ ৬৮ হাজার ২৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে চার লাখ ৮৯ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা। ফলে ঋণ ও আমানতের গড় অনুপাত (এডিআর) দাঁড়িয়েছে ৭০ শতাংশের কাছাকাছি। জানা গেছে, বিধি অনুযায়ী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মোট দায়ের (সংগৃহীত আমানত) ১৯ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সংরক্ষণ করতে হয়। বাকি ৮১ শতাংশ তারা বিনিয়োগ করতে পারে। তবে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব কিছু রিজার্ভ ফান্ড থাকায় ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ গ্রহণযোগ্য ধরা হয়। সেদিক থেকে দেখা যায়, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর আমানতের তুলনায় বিনিয়োগ হয়েছে গড়ে মাত্র ৭০ শতাংশ পর্যন্ত। আরও ১৫ শতাংশ বিনিয়োগ সক্ষমতা রয়েই গেছে। বিনিয়োগ বা ঋণ বিতরণের দিক থেকে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক। সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী সরকারি এই চার ব্যাংক আমানতের তুলনায় গড় ঋণ বিতরণের হার মাত্র ৫৫ দশমিক ১৮ শতাংশ। দেশের বৃহত্তম ব্যাংক বলে খ্যাত রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক ৬৫ হাজার ৬৭১ কোটি টাকার আমানত সংগ্রহ করলেও ঋণ বিতরণ করেতে পেরেছে মাত্র ৩৩ হাজার ২৩৭ কোটি টাকার। জনতা ব্যাংক ৪৬ হাজার কোটি টাকার আমানত সংগ্রহ করে দিয়েছে ২৮ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকার। আর অগ্রণী ব্যাংক ৩৩ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকার আমানতের মধ্যে ঋণ দিয়েেেছ ২১ হাজার কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগের গতিপ্রকৃতি প্রতিফলিত হয় মূলত ব্যাংকিং খাতের ঋণ বিতরণের চিত্র থেকে। সেদিক থেকে দেখা যাচ্ছে, নির্বাচনের পর রাজনৈতিক পরিবেশ কিছুটা স্থিতিশীল হলেও স্থানীয় বিনিয়োগে তেমন সাড়া পড়েনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অস্থিরতা কিছুটা কমলেও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কিন্তু রয়েই গেছে। সবচেয়ে বড় কথা, বিনিয়োগের জন্য যে পরিবেশ ও অবকাঠামো দরকার সেটিই এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। এ ছাড়া বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য যে প্রতিষ্ঠান বা নিয়ন্ত্রক সংস্থা কাজ করেছে সেগুলোতেও দক্ষতা ও সুশাসনের অভাব রয়েছে। এ ধরনের পরিবেশে নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না বলেই ব্যাংকের ঋণ বিতরণেও গতি আসছে না। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ ও বিনিয়োগ পরিস্থিতি আগামী ছয় মাসে পাল্টে যাবে। ঋণ বাড়ানোর জন্য সরকারি ব্যাংকগুলো সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে বিনিয়োগ চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। তখন নতুন উদ্যোক্তারাও আগ্রহী হবেন, ব্যাংকিং খাতের ঋণ বিতরণও বাড়বে।

সর্বশেষ খবর