শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা

কূলকিনারা হয়নি মাওলানা ফারুকীর নৃশংস হত্যার

কূলকিনারা হয়নি মাওলানা ফারুকীর নৃশংস হত্যার
টেলিভিশনে ইসলামী অনুষ্ঠানের উপস্থাপক মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যাকাণ্ডের কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি পুলিশ। গত দুই মাসে কেবল ধারণাতেই আটকে আছে তদন্ত। চাঞ্চল্যকর ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মাহমুদা খাতুন, শরিফুল ইসলাম ও ইউসুফ মজুমদার নামে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তবে রিমান্ডে এনে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে তেমন কোনো তথ্য পায়নি পুলিশ।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নিষিদ্ধ-ঘোষিত জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যরা সম্পৃক্ত। এর বাইরে কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি পুলিশ।
অন্যদিকে ‘হত্যার নির্দেশদাতা’ হিসেবে বেসরকারি ছয় টেলিভিশন উপস্থাপকের বিরুদ্ধে মামলা হলেও তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেনি পুলিশ। এ নিয়ে নিহতের স্বজনরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘সবকিছুর পরও আমরা অপেক্ষা করছি, খুনিরা যেন ধরা পড়ে।’
ইসলামী ফ্রন্টের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুকী আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতেরও কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। তিনি চ্যানেল আইয়ের ‘কাফেলা’ ও ‘শান্তির পথে’ নামে দুটি ইসলামী অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতেন। ২৭ আগস্ট রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের ১৭৪ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলায় ফারুকীকে হাত-পা বেঁধে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
হত্যাকাণ্ডের পর তার পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সুন্নিবাদী এই নেতাকে হত্যার পেছনে কোনো উগ্রপন্থি সংগঠন জড়িত।
ফারুকীর ছেলে ফয়সাল বলেন, ‘পুলিশ দেড় মাস আগে শেষ আমাদের বাসায় এসেছিল। তারা তদন্তের জন্য যেসব তথ্য চেয়েছে তার সবই আমরা দিয়েছি। প্রায় দুই মাস হয়ে গেল, খুনিদের তারা গ্রেফতার করতে পারেনি।’ ঘটনার দিন রাতেই ফয়সাল অজ্ঞাতপরিচয় সাত-আটজনের বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন, যার তদন্ত করছে ডিবি পুলিশ।
ইসলামী ছাত্রসেনার ঢাকা মহানগরী শাখার সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার ছয়জন টিভি উপস্থাপককে দায়ী করে ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে আরেকটি মামলা করেন। বিচারক থানায় করা ফারুকীর ছেলের মামলার সঙ্গে যুক্ত করে বিষয়টি একসঙ্গে তদন্তের নির্দেশ দেন। ওই ছয় উপস্থাপক হলেন এনটিভি ও এটিএন বাংলার তারেক মনোয়ার, কামাল উদ্দিন জাফরী; দিগন্ত ও পিস টিভির কাজী ইব্রাহীম; এটিএন বাংলার আরকানুল্লাহ হারুনী; আরটিভি ও রেডিও টুডের খলেদ সাইফুল্লাহ বখশী এবং বাংলাভিশনের মুখতার আহমদ। মামলায় ওই ছয়জনকে ফারুকী হত্যার ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ হিসেবে উল্লেখ করেন তুষার। তিনি বলেন, পুলিশ ছয় টেলিভিশন উপস্থাপককে গ্রেফতার তো দূরের কথা, জিজ্ঞাসাবাদও করেনি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি-পশ্চিম) পরিদর্শক জুলহাস উদ্দিন আকন্দ জানান, ফারুকী হত্যার আসল খুনিরা ধরা পড়লে ছয় টেলিভিশন উপস্থাপককে জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশ। তারা পুলিশের সন্দেহের তালিকায় আছে। পুলিশ ‘নিয়মিত’ নিহতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে ডিবি পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে গতকাল পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডের তেমন কোনো অগ্রগতির কথা জানাতে পারেননি তিনি।

সর্বশেষ খবর