শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা

একাত্তরের ভূমিকা

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় এদেশের মুক্তিকামী জনগণের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে হত্যাকারী, উসকানিদাতাসহ পাঁচটি অপরাধে দণ্ডিত করা হয় জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমকে। একাত্তরের সময় তার ভূমিকা বহুল বিতর্কিত ও সমালোচিত। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নিজের এ ভূমিকার জন্য তিনি ঘাতক হিসেবে পরিচিতি পান। তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বিচারিক আদালতে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেন। বয়স বিবেচনায় তাকে এই দণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তবে এর বিরুদ্ধে আপিল করেন গোলাম আযম। আপিল বিভাগ তার সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেন। ৯০ বছরের সাজার বোঝা মাথায় নিয়ে গতকাল তিনি হাসপাতালে মারা গেছেন।

গোলাম আযমের বিরুদ্ধে পাঁচ ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের ৬১টি অভিযোগ গঠন করা হয়। অপরাধের এ পাঁচটি ধরন হলো- মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা, উসকানি, সহযোগিতা এবং হত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগ। প্রমাণিত প্রথম ও দ্বিতীয় অভিযোগে ১০ বছর করে, তৃতীয় ও চতুর্থ অভিযোগে ২০ বছর করে এবং পঞ্চম অভিযোগে ৩০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

রায়ের আদেশে বলা হয়, 'সাধারণ দৃষ্টিতেও গোলাম আযমের মতো একজন ধর্মীয় নেতার আদেশ সেনাবাহিনীর একজন জেনারেলের চেয়েও বেশি শক্তিশালী এবং অধীনস্থরা গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করেন। তথ্য-উপাত্তে পাওয়া গেছে যে, তার বেশির ভাগ অধীনস্থই প্যারা মিলিশিয়া বাহিনীর সদস্য (রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামস) ছিলেন এবং তাদের সঙ্গে তার ঊধর্্বতন এবং অধস্তন সম্পর্কের বিষয়টিও প্রমাণিত হয়।'

ষড়যন্ত্র : গোলাম আযমের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ আনা হয়, তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনে ষড়যন্ত্র করেছেন। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ করা বেশ কয়েকটি ঘটনার মধ্যে রয়েছে- ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল গোলাম আযম, নূরুল আমীন, মৌলভী ফরিদ আহমেদ, খাজা খয়েরউদ্দিন, এ কে এম শফিকুল ইসলাম, মাওলানা নূরুজ্জামান, হামিদুল হক চৌধুরী, মোহসিন উদ্দিন আহমেদ, এ টি সাদীসহ ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের 'খ' অঞ্চলের সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করে 'নাগরিক শান্তি কমিটি' গঠনের ষড়যন্ত্র করেন। পূর্ব সাক্ষাতের সূত্র ধরে ৬ এপ্রিল তিনি আবারও টিক্কা খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং ওই ষড়যন্ত্রে অংশ নেন। ১৯ জুন এ ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় তিনি পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের একটি বৈঠক করেন। এর পর ১ ডিসেম্বর রাওয়ালপিন্ডিতে আবারও ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ বৈঠকে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষকে হত্যা করতে রাজাকার বাহিনীর শক্তি বাড়ানোর পরামর্শ দেন।

সর্বশেষ খবর