শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা
প্রধানমন্ত্রী যাচ্ছেন আজ, স্বাক্ষর হবে তিন চুক্তি-সমঝোতা

খুলে যাচ্ছে আমিরাতের শ্রমবাজার

খুলে যাচ্ছে আমিরাতের শ্রমবাজার
বাংলাদেশের বৃহত্তম শ্রমবাজার আরব আমিরাতের ভিসা জটিলতা নিরসন হচ্ছে। এর মাধ্যমে প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর আমিরাতের শ্রমবাজার আবার বাংলাদেশিদের জন্য খুলে যাচ্ছে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ আমিরাতের রাজধানী দুবাইয়ে যাচ্ছেন। সেখানে আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাখতুমের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে জনশক্তি রপ্তানি, নিরাপত্তা ও বন্দীবিনিময় বিষয়ে দুই চুক্তি ও একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে। এর ফলে আমিরাতে বিশাল কর্মযজ্ঞে যেমন বাংলাদেশ থেকে বড় সংখ্যক শ্রমিক নিয়োগ করা সম্ভব হবে, তেমনি ভিসা জটিলতায় বিপাকে পড়া আমিরাতের প্রায় ১০ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি কাজে লাগাতে পারবেন নতুন সম্ভাবনা। অবশ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, শুধু শ্রমবাজারের সংকটই দূর হবে না, বাংলাদেশ-আমিরাত সার্বিক সম্পর্কও নতুন ধাপে উন্নীত হবে। বিনিয়োগের পরিস্থিতিও বদলে যেতে পারে। জানা যায়, ২০১২ সালের আগস্ট মাসে আমিরাতে কর্মসংস্থান ভিসা বন্ধ হয়ে যায়। এর আগের ১০ বছরের প্রতিবছরই প্রায় দুই লাখ বাংলাদেশি যান সেখানে। কিন্তু হঠাৎ করেই বন্ধ হয় কর্মসংস্থান ভিসা। এর পর ব্যবসায়ী ও পর্যটক ভিসাও বন্ধ হয়। ট্রানজিট ও অফিসিয়াল ভিসার ক্ষেত্রেও ঢাকার দূতাবাসের বিশেষ ব্যবস্থার প্রয়োজন পড়ে। এ সময় শুধু নারী গৃহকর্মীর ভিসা বহাল ছিল। এর ফলে বাংলাদেশের জন্য বড় শ্রমবাজারটিতে অশনি সংকেত দেখা যায়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, প্রবাসী কর্মীদের মাত্রাতিরিক্ত অপরাধ প্রবণতায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আবার প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, ওয়ার্ল্ড এক্সপোর নির্বাচনে দুবাইকে ভোট না দেওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে কারণ যাই হোক পরিস্থিতি উত্তরণে দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর সফলতা আসছে। প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে নিরাপত্তা সহযোগিতা ও বন্দীবিনিময়ের চুক্তি সইয়ের মধ্য দিয়ে সংকট কাটবে। এক্ষেত্রে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়া কর্মীদের দায় নিজের কাঁধে নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া সফরে দুই দেশের মধ্যে জনশক্তি নিয়োগের ব্যাপারে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) ও আমিরাতের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হবে। এর মাধ্যমে আমিরাতে যেতে পারবেন বাংলাদেশিরা।
সফরসূচি অনুসারে, প্রধানমন্ত্রী আজ সকাল সাড়ে ৮টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করবেন। আমিরাত সময় বেলা সাড়ে ১১টায় তিনি আবুধাবি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছবেন। সফর প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুবাইয়ে পৌঁছানোর পরদিন রবিবার আবুধাবীর ক্রাউন প্রিন্স ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সশস্ত্র বাহিনীর উপ-সর্বাধিনায়ক শেখ মুহাম্মাদ বিন যায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। একই দিনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন যায়েদ আল নাহিয়ানও  বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। পরে আমিরাতের জাতির মাতা শেখ ফাতিমার সঙ্গে শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ হবে। সন্ধ্যায় বাংলাদেশ কমিউনিটির সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মিলিত হবেন। পরদিন সোমবার প্রধানমন্ত্রী সংযুক্ত আরব আমিরাতের উপ-রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এবং দুবাইর শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাখতুমের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন। এদিন আমিরাতের অন্যতম শহর রাস-আল-খাইমাহ সফর করবেন প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানকার শাসক সৌদ বিন সাকার আল কাসিমীর সঙ্গে মতবিনিময় ও মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ক্রাউন প্রিন্স ও দুবাইর শাসকের আলোচনায় জনশক্তি রপ্তানি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, উচ্চ শিক্ষা, সংস্কৃতি, পর্যটন, জ্বালানি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং নিরাপত্তাসহ সহযোগিতার বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এ ছাড়া দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে নিয়মিত পর্যালোচনা বৈঠক অনুষ্ঠান, ভিসা সহজিকরণের বিষয়ও থাকবে। সূত্র জানায়, দুই দেশের মধ্যে ফরেন অফিস কনসাল্টেশন স্মারক, উচ্চশিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা বিষয়ক স্মারক, জনশক্তি রপ্তানি পুনরায় চালু করতে ইউএইর একটি আউটসোর্সিং কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক এবং দণ্ডপ্রাপ্তদের বিনিময়, বিনিয়োগ সুরক্ষা ও সম্প্রসারণ, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় ইউএইর আল নাহিয়ান ফাউন্ডেশন কর্তৃক একটি হাসপাতাল স্থাপন, কূটনৈতিক ও সরকারি পাসপোর্টধারীদের ভিসামুক্ত গমনাগমন ও ইউএই দূতাবাসের জন্য ঢাকায় এক খণ্ড জমি হস্তান্তর চুক্তিসহ বেশ কয়েকটি দলিল স্বাক্ষরিত হবে। প্রধানমন্ত্রী সোমবার রাতে ঢাকায় ফিরবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ১৯৮৪ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিষ্ঠাতা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি শেখ যায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। সর্বশেষ  ২০০৯ ও ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করেন। শ্রমবাজার ও ভিসার বাইরে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে বিরাজমান সম্পর্ককে নিবিড় করা প্রধানমন্ত্রীর এ সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য।
রাষ্ট্রপতিও যাবেন : পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে জানান, সংযুক্ত আরব আমিরাতের উপ-রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী ও দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাখতুম বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে ২৮-৩০ অক্টোবর দুবাইয়ে ১০ম বিশ্ব ইসলামিক অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এ উপলক্ষে সোমবার রাষ্ট্রপতি দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবেন এবং সম্মেলনে যোগদান শেষে ২৯ অক্টোবর দেশে ফিরবেন। গত বছর লন্ডনে এই ফোরামের বৈঠকেও রাষ্ট্রপতি অংশ নিয়েছিলেন।
থাইল্যান্ডে কনস্যুলার এক্সেস : থাইল্যান্ডে সম্প্রতি ‘পাচারকারীদের কবল’ থেকে উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বাংলাদেশি নাগরিকদের শনাক্তে কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিষয়ক সচিব মুস্তফা কামাল। গতকাল ব্রিফিং চলাকালে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পাশে উপস্থিত মুস্তফা কামাল বলেন, ধাপে ধাপে আমরা তাদের শনাক্ত করব। আটক হওয়া ৩০ জনের সঙ্গে ২৮ অক্টোবর সাক্ষাতের সময় পাওয়া গেছে। ক্রমান্বয়ে অন্য বন্দীদের সঙ্গেও দেখা করে তারা বাংলাদেশি কিনা তা যাচাই-বাছাই করা হবে।

সর্বশেষ খবর