শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা
প্রতিবেশী চার দেশের জেলেদের আধিপত্য

দেশের সমুদ্রসীমায় ঢুকে বিদেশি জেলেরা টনকে টন মাছ লুটছে

দেশের সমুদ্রসীমায় ঢুকে বিদেশি জেলেরা টনকে টন মাছ লুটছে
বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ সমুদ্রসীমায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বিদেশি জেলেরা। পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগের মুন্সিগঞ্জ উপকূল থেকে টেকনাফ উপকূল পর্যন্ত দেশের চারটি মৎস্যভাণ্ডারসহ গভীর সমুদ্র থেকে ভারত, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের জেলেরা প্রতিদিন মাছ শিকার করছে আর নিয়ে যাচ্ছে ইলিশ ও অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ। বিদেশি জেলেরা শুধু টনে টনে মাছ লুট করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না, তারা বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় এ দেশের জেলেদেরই মাছ ধরতে দিচ্ছে না। সাগর থেকে ফেরা জেলে ও মৎস্যজীবী নেতারা এ তথ্য দিয়েছেন।
উপকূলের জেলে ও মৎস্যজীবী নেতারা ৫ অক্টোবর বাগেরহাটের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র কেবিঘাটে দাঁড়িয়ে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট মীর শওকাত আলী বাদশা এমপির কাছে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ সমুদ্রসীমায় বিদেশি জেলেদের দাপিয়ে বেড়ানোর বিষয়ে অভিযোগ করেন। জেলে ও মৎস্যজীবী নেতারা তাকে জানান, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের জেলেদের অবৈধ ফিশিং বন্ধ করা গেলে ১০০ টাকা কেজি দরে তারা দেশবাসীকে ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছ খাওয়াতে পারবেন। এমপি বাদশা সমস্যাটির দ্রুত প্রতিকারের আশ্বাস দেন। ৫ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ আহরণ বন্ধের পর জেলেরা ফিরে যায় সাগরে। উপকূলের জেলে ও মৎস্যজীবী নেতাদের অভিযোগের সত্যতা দ্রুতই প্রমাণিত হয়। বাংলাদেশ নৌবাহনীর সদস্যরা ১৫ অক্টোবর সুন্দরবন উপকূলে ফেয়ারওয়ে বয়ার কাছে একটি ট্রলারসহ ১৪ ভারতীয় জেলেকে আটক করেন। ১৭ অক্টোবর চট্টগ্রাম উপকূলে চারটি ট্রলারসহ ২০ শ্রীলঙ্কান জেলেকে আটক করে নৌবাহিনী। ১৮ অক্টোবর সুন্দরবন উপকূলের ফেয়ারওয়ে বয়ার কাছ থেকে নৌবাহনী আটক করে একটি ট্রলারসহ ১৪ ভারতীয় জেলেকে। ২০ অক্টোবর একই এলাকা থেকে নৌবাহনীর সদস্যরা একটি ট্রলারসহ ১৪ ভারতীয় জেলেকে আটক করেন। ২২ অক্টোবর ১৩ ভারতীয় জেলেকে একটি ট্রলারসহ আটক করতে সক্ষম হয় নৌবাহনী। নৌবাহনীর সদস্যরা বাংলাদেশের জলসীমায় অনুপ্রবেশ করে মাছ আহরণের সময় আটটি ট্রলারসহ ৭৫ জন বিদেশি জেলেকে আটক করেন আট দিনে। উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের জলসীমায় ভারতীয় জেলেরা অনুপ্রবেশ করে মাছ শিকার করে চলেছে এমন অভিযোগ উপকূলে মাছ ধরা জেলেদের। শুধু মাছ ধরাই নয়, তারা বাংলাদেশের জেলেদের মারধর করে জাল লুট করে নিয়ে যায়। অনুপ্রবেশের দায়ে এর আগে ভিনদেশি জেলেদের নামে মামলা হলেও নানা অজুহাতে তারা অল্প দিনের মধ্যেই কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে যায়। মামলা হলেও ভারতীয় জেলেদের সাজা হয়েছে এমন নজির নেই। অন্যদিকে, ঝড়ের কবলে পড়ে বাংলাদেশি জেলেরা ভারতে গেলেও তাদের ফেরত না দিয়ে মামলা দায়ের ও বছরের পর বছর ভারতীয় কারাগারে বন্দী করে রাখার অনেক ঘটনা রয়েছে। এ বিষয়ে উপকূলীয় মৎস্যজীবী কল্যাণ সমিতির সভাপতি শেখ ইদ্রিস আলী জানান, দীর্ঘদিন ধরে ভারত, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের জেলেরা বঙ্গোপসাগরে অনুপ্রবেশ করে দেশের মৎস্যসম্পদ লুটে নিচ্ছে। অনেক দেরিতে হলেও এ ব্যাপারে নৌবাহিনী শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করায় তিনি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

সর্বশেষ খবর