শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা

লতিফকে আওয়ামী লীগ থেকে চূড়ান্ত বহিষ্কার

কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক এমপি পদ বাতিলেরও দাবি জানানো হবে

লতিফকে আওয়ামী লীগ থেকে চূড়ান্ত বহিষ্কার
পবিত্র হজ, বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ও তাবলিগ জামাত নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দেওয়ায় মন্ত্রিসভা, দলের প্রেসিডিয়াম থেকে অব্যাহতির পর আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে গতকাল আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকেও চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। এখন তার এমপি পদ বাতিলের জন্য ইসির কাছে আবেদন করবে আওয়ামী লীগ। গতকাল রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে লতিফ সিদ্দিকীকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করা হয়। দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে প্রায় সব সদস্যই উপস্থিত ছিলেন। সভাশেষে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে বক্তব্য দেওয়ায় মন্ত্রিসভা ও প্রেসিডিয়াম থেকে অব্যাহতির পর লতিফ সিদ্দিকীকে কারণ দর্শাও নোটিস দেওয়া হয়েছিল। তিনি যে জবাব দিয়েছেন তা বিশ্লেষণ করে তার প্রাথমিক সদস্যপদ বাতিল করে দল থেকে বহিষ্কারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। লতিফ সিদ্দিকী এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দলে আপিল করার সুযোগ পাবেন না বলেও জানান তিনি। দল থেকে বাদ পড়ায় লতিফের সংসদ সদস্যপদ থাকছে কিনা এমন প্রশ্নে আশরাফ বলেন, আমরা বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত ইসিতে পাঠিয়ে দেব। ইসির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। গত ২৮ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে হজ, বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.), তাবলিগ জামাত ও ইসলাম ধর্ম নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন লতিফ সিদ্দিকী। সঙ্গে সঙ্গে বিদেশে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী তাকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করার ঘোষণা দেন। ১২ অক্টোবর কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে তাকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ওইদিন লতিফ সিদ্দিকীর প্রাথমিক সদস্যপদ স্থগিতেরও সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ। তাকে কেন চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করা হবে না- তা জানতে চেয়ে ১৪ অক্টোবর কারণ দর্শাও নোটিস পাঠানো হয়। কলকাতায় অবস্থানরত লতিফ সিদ্দিকী সেখান থেকেই জবাব পাঠিয়ে দেন। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, দলের প্রেসিডিয়াম ও মন্ত্রী হচ্ছে একজন রাজনীতিবিদের জন্য ‘অলঙ্কার’। আর প্রাথমিক সদস্যপদ হচ্ছে ‘হৃৎপিণ্ড’। আমার দীর্ঘ রাজনীতিতে জীবনের ত্যাগ, তিতিক্ষা বিবেচনা করে দল প্রাথমিক সদস্যপদটি বহাল রাখতে বিবেচনা করবে বলে মনে করছি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক ডাকা হয়। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বাগত ভাষণের পর রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বক্তব্য রাখেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, আবদুল মতিন খসরু, শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, এইচএন আশিকুর রহমান, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এ কে এম রহমত উল্লাহ, নূরুল মজিদ হুমায়ুন, সুবাস বোস প্রমুখ। বৈঠকের শুরুতেই দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম লতিফ সিদ্দিকীর চিঠি পাঠ করে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের কর্মকর্তাদের শোনান। এ সময় আশরাফের বক্তব্য শেষ না হতেই বেশ কয়েকজন নেতা বক্তব্য দেন।    
বৈঠক সূত্র জানায়, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, লতিফ সিদ্দিকীর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে অবদান আছে স্বীকার করতে হবে। তবে তিনি অনেক বিতর্কে জড়িয়েছেন। ’৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খন্দকার মোশতাক সরকারকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। এর পর ’৮১ সালে নেত্রী (শেখ হাসিনা) যখন দেশে আসেন তখন তিনি ভারতে অবস্থান করেও বিরোধিতা করেছিলেন। ’৮৬-তে এরশাদ সরকারকে সমর্থন জানিয়ে তার স্ত্রী লায়লা সিদ্দিকীকে এমপি বানিয়েছিলেন। এ ছাড়া অনেক বিতর্কিত বক্তব্য রেখেছেন, দল ও সরকারকে বিব্রত করেছেন। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা দলের ঘোষণাপত্র ও গঠণতন্ত্রবিরোধী। কোনোভাবেই তাকে অনুকম্পার সুযোগ নেই। তার প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হোক। এ সময় উপস্থিত সবাই টেবিল চাপড়িয়ে সমর্থন জানান। সৈয়দ আশরাফ বলেন, তার এমপি পদ থেকে বহিষ্কারের জন্যও নির্বাচন কমিশনে আবেদন জানাব। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভেবেছিলাম লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্য অতিকথনের অংশ হিসেবেই বলেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে বক্তব্যে অটুট থাকায় প্রমাণিত তিনি দুরভিসন্ধি কোনো পরিকল্পনা নিয়ে এ বক্তব্য রেখেছেন। এটি সুপরিকল্পিত কোনো ষড়যন্ত্র কিনা তাও খতিয়ে দেখতে হবে। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী ও শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ। তার কন্যা শেখ হাসিনাও ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ধর্মের প্রতি আঘাত হানা মানে আমাদের হৃৎপিণ্ডে আঘাত হানা। তাকে অনুকম্পা দেখানোর সুযোগ নেই। ইতিমধ্যে তার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিমসহ বেশ কয়েকজন বলেন, লতিফ সিদ্দিকীর বিষয়ে আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তারপরও একটি গোষ্ঠী বিশেষ ইন্ধনে রবিবার হরতাল ডেকেছে। তাদের হরতাল প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছি। যদি প্রত্যাহার না করে ভাবব বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য হরতাল ডাকা হয়েছে।      
সবশেষে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে প্রেসিডিয়ামের পদ থেকে বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে গঠনতন্ত্রের ৪৬ ‘ক’ অনুচ্ছেদ এবং প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করার ৪৬ ‘ঞ’ অনুচ্ছেদ অনুসারে বহিষ্কারের ঘোষণা দেন।

সর্বশেষ খবর