রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা
চার জঙ্গির তথ্য

হুজির টার্গেট ২০ ভিআইপি

তিন শহরে একযোগে হামলার পরিকল্পনা

হুজির টার্গেট ২০ ভিআইপি

বিস্ফোরক নিয়ে রীতিমতো গবেষণা শুরু করেছে নিষিদ্ধ সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ (হুজিবি)। রাজধানীর ওয়ারী ও উপকণ্ঠ টঙ্গীতে দুটি অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরিও স্থাপন করেন হুজিবির জঙ্গিরা। ল্যাবে বানানো উচ্চক্ষমতার বোমা দিয়ে চলতি মাসের শেষের দিকে ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রামে একযোগে হামলার পরিকল্পনা ছিল তাদের। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তি ছাড়াও অন্তত ২০ ভিআইপিকে হত্যার নীলনকশাও তৈরি করেছিল হুজিবি। এর বাইরে জেএমবিসহ অন্য জঙ্গি সংগঠনকে নিয়ে ‘বাংলাদেশ জিহাদি গ্রুপ’ নামে একটি প্লাটফর্ম গড়ে তোলার কাজও শুরু করেছেন তারা।
হুজিবির চার জঙ্গি রফিক আহমেদ ওরফে সাজিদ (৩৪), উমর ওরফে ফয়জুল ওরফে রবি (২৫), নাদিম আহমেদ ওরফে সুমন (৩০) ও সালাউদ্দিন আহমেদ (২৯) শুক্রবার গভীর রাতে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ধরা পড়েন। তাদের কাছ থেকে এসব তথ্য আদায় করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সহযোগিতায় ডিবির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. সানোয়ার হোসেনের তত্ত্বাবধানে চারটি দল চার হুজিবি সদস্যকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে ৫৫ ধরনের উচ্চমাত্রার বিস্ফোরক, ডেটনেটর, বোমা তৈরির সরঞ্জাম ও পাকিস্তানে তৈরি সাব-মেশিনগান উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের গতকাল চার দিনের রিমান্ডে নেয় ডিবি পুলিশ। গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ডিসি (পূর্ব) জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর, এডিসি সানোয়ার হোসেন, এসি মো. রহমত উল্লাহ চৌধুরী, জাহাঙ্গীর আলম, মাহমুদা আফরোজ লাকি, হাসানসহ অনেকে। যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল বলেন, কারাবন্দী হুজির শীর্ষ নেতা মাওলানা জাফর ওরফে সাঈদের পরিকল্পনায় জেএমবিসহ সব জঙ্গি গোষ্ঠীর সমন্বয়ে ‘বাংলাদেশ জিহাদি গ্রুপ’ নামে কমন প্লাটফর্ম গঠন করার পরিকল্পনা নিয়েছেন জঙ্গিরা। এজন্য নিজেদের অবস্থান জানান দিতে আগস্টে ই ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় এবং অনেক মানুষের সমাগম রয়েছে এমন স্থানে বোমা হামলার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তিসহ অনেক ভিআইপিকে টার্গেট করেছিলেন জঙ্গিরা। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষাবিদসহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীনরা রয়েছেন। তিনি আরও বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিশেষ নজরদারির কারণে আগস্ট থেকে সরে এসে তারা চলতি মাসে হামলার পরিকল্পনা করেন। এসব হামলার জন্য রাজধানীর উপকণ্ঠ টঙ্গীতে বাসা ভাড়া করে বোমা তৈরির ল্যাব স্থাপন করে বিশেষজ্ঞ ক্যামিস্ট নিয়োগ দেয় হুজিবি। তৈরি করা হয় উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বেশকিছু বোমা। উদ্ধারকৃত রাসায়নিক ও বিস্ফোরক দ্রব্য দিয়ে কমপক্ষে ৩০০ বোমা তৈরি করা সম্ভব। জনসমাগম রয়েছে এমন স্থানে একেকটি বোমা দিয়ে ২৫-৩০ জন লোককে হত্যা করা সম্ভব। তিনি বলেন, ‘বোমা তৈরির ক্ষেত্রে উমরের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দেখে আমরা রীতিমতো বিস্মিত। তিনি নিজেও দাবি করেছেন, তার চেয়ে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক বিষয়ে দক্ষ কেউ নেই।’ জঙ্গিদের অর্থায়নের প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল বলেন, ‘দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংগঠন থেকে জঙ্গিদের উৎসাহিত করতে মোটা অঙ্কের অর্থ সাহায্য দেওয়া হচ্ছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তবে এ তথ্যগুলো যাচাই করে দেখা হবে।’
বাংলাদেশ জিহাদি গ্রুপের ব্যাপারে তিনি বলেন, জাফরের নির্দেশনাসংক্রান্ত কিছু কাগজ ও মনোগ্রাম পাওয়া গেছে। দেশের বাইরে জিহাদি কর্মী পাঠানোসহ বাংলাদেশে তাদের বেশকিছু পরিকল্পনা ছিল যা কয়েকটি স্তরে বিভক্ত। এর মধ্যে নীরব হত্যা, গুপ্তহত্যা, ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ উল্লেখযোগ্য। তবে এগুলো যাচাই করা হচ্ছে। হিযবুত তাহ্রীরকে তারা ম্যানেজ করতে পারেনি বলে দাবি করছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, টার্গেট করা ব্যক্তিদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ছাড়াও ক্ষমতাসীন দলের সাবেক তিন মন্ত্রী, বর্তমান দুই মন্ত্রী এবং সিলেট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষাবিদ রয়েছেন। ক্যামিস্ট হিসেবে বোমা তৈরির বিষয়টি সমন্বয় করেন প্রাইম ইউনিভার্সিটির রসায়নের শেষ বর্ষের ছাত্র উমর।

সর্বশেষ খবর