রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা

প্রথম দিনটা বাংলাদেশের

প্রথম দিনটা বাংলাদেশের

দিনটি হতে পারত জুবায়ের হোসেন লিখনের। বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম লেগ স্পিনার হিসেবে অভিষেক। স্বপ্নিল অভিষেকে জুবায়েরের পারফরম্যান্সও ছিল দিনের আলোর মতো উজ্জ্বল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দিনটি আর তার হতে পারেনি। দিনটিকে নিজের করে নেন সাকিব আল হাসান। রাজসিক প্রত্যাবর্তনে সাকিব সব আলো কেড়ে নেন নিজের দিকে। টেনে নেন সব ফোকাস। বুঝিয়ে দেন অন্যদের সঙ্গে নিজের ব্যবধান। বিশ্বের অন্যতম সেরা এই বাঁ হাতি স্পিনার কাল এমনই দুর্বোধ্য হয়ে  উঠেছিলেন, তাকে কোনোভাবেই পাঠযোগ্য করে তুলতে পারেননি জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরা। নিষেধাজ্ঞার গ্যাঁড়াকল থেকে ফিরে মিরপুরে ‘বসুন্ধরা সিমেন্ট সিরিজ’ টেস্টের প্রথম দিনটিকে ‘সাকিবময়’ উপমার সোনালি অক্ষরে লিখে নেন। এলাম, দেখলাম, জিতলাম-মানসিকতায় কাল ঘূর্ণির মায়াজাল বিস্তার করে সফরকারী জিম্বাবুয়েকে বেঁধে ফেলেন ২৪০ রানে। যা বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে যে কোনো দলের দ্বিতীয় সর্বনিু স্কোর। আগের রেকর্ডটি ২০০৯ সালে সেন্ট জর্জেসে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংসে থমকে গিয়েছিল ২৩৭ রানে। সেবারও নায়ক ছিলেন সাকিব। তাই বাংলাদেশের ক্রিকেট মানেই সাকিব। বাংলাদেশ এবং সাকিব এখন সমোচ্চারিত এক নাম। অবশ্য সাকিবময় দিনটি আরও অত্যুজ্জ্বল হতো, যদি না তামিম ইকবালের উইকেট হারিয়ে ২৭ রান তুলতো বাংলাদেশ। গত ডিসেম্বর থেকে ব্যর্থতার গোলক ধাঁধায় অবিরত ঘুরপাক খাচ্ছে টাইগাররা। এই ধাঁধা এমনই, যেখানে লজ্জা পেতে হয়েছিল আফগানিস্তান ও হংকংয়ের মতো দুই আনকোরা দলের কাছে হেরে। গত এক বছরের দুঃখ, কষ্ট এবং কান্নার স্মৃতিকে পেছনে ফেলে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া মুশফিকবাহিনী খেলল সত্যিকারের ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার’ হয়ে। আর ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন সাকিব, ১৯ বছরের তরুণ জুবায়েরকে সঙ্গী করে। দলের নিয়ম-নীতি মানেন না, কাউকে তোয়াক্কা করেন না- অভিযোগে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন সাকিব। নিষিদ্ধ ছিলেন প্রায় আড়াই মাস। তাই খেলা হয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ। অথচ নিষিদ্ধ হওয়ার আগের ইনিংসটিতে চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। নিষেধাজ্ঞা তার ওপর যে কোনো প্রভাবই ফেলতে পারেনি, কাল তার পারফরম্যান্সই বলে! খেলতে নামেন হিমালয়সম প্রতিজ্ঞা নিয়ে। নিজেকে প্রমাণের জন্য কতটা ক্ষুুধার্ত ছিলেন, কাল হাড়ে  হাড়ে টের পেয়েছে সফরকারী ব্যাটসম্যানরা। জিম্বাবুয়ে ব্যাটিং করেছে ৭৫.৫ ওভার। তার এক তৃতীয়াংশ করেন সাকিব। ২৪.৫ ওভার বোলিং করেন তিন সেশনে। তিন সেশনেই উইকেট নেন যথাক্রমে ১, ১ ও ৪টি। বিশেষ করে শেষ সেশনে ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। ২৯ বলের স্পেলে ২১ রানের খরচে নেন ৪ উইকেট। সব মিলিয়ে ২৪.৫ ওভারে ৫৯ রানে উইকেট সংখ্যা ৬। যা তার দ্বিতীয় ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। ২০০৮ সালে এই মিরপুরেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিয়েছিলেন ৩৬ রানে ৭ উইকেট। বাংলাদেশের স্পিনারদের দুর্বোধ্য বোলিংয়ে ২৪০ রানে শেষ জিম্বাবুয়ের ইনিংস। জবাবটা ভালো হতে পারতো স্বাগতিকদের। কিন্তু উইকেটের বাউন্সের সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পারায় দিনটি পুরোপুরি নিজেদের হয়নি বাংলাদেশের। বাউন্সের অসহায় হয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে তামিম ফেরায় আজ দ্বিতীয় দিন ২১৩ রানে পিছিয়ে থেকে খেলতে নামবে মুশফিকবাহিনী।

সর্বশেষ খবর