বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা
ট্রাইব্যুনালের পর্যবেক্ষণ

নিজামীকে মন্ত্রী করা ছিল শহীদদের গালে চড়

নিজামীকে মন্ত্রী করা ছিল শহীদদের গালে চড়

মানবতাবিরোধী অপরাধী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীকে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়াটা ছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের গালে চপেটাঘাতের শামিল। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গতকাল নিজামীর মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে এ কথা বলেন। 

ট্রাইব্যুনাল বলেন, এটা বিশ্বাস করা খুবই কঠিন যে, সক্রিয়ভাবে যিনি বাংলাদেশে স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিলেন, তাকে এই প্রজাতন্ত্রের মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। আমাদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, এই ব্যক্তিকে তৎকালীন সরকারের মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া একটা বড় ধরনের ভুল ছিল। পাশাপাশি এটা ৩০ লাখ শহীদ ও সম্ভ্রম হারানো দুই লাখ নারীর প্রতিও ছিল সুস্পষ্ট চপেটাঘাত। এই লজ্জাজনক ঘটনা পুরো জাতির জন্য অবমাননাকর। ট্রাইব্যুনালের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, নিজামী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজনীতিতে ধর্মের অপব্যবহার করেন। তার বিরুদ্ধে আনা কয়েকটি অভিযোগ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় স্পষ্টতই তিনি এবং তার দল জামায়াতে ইসলামী ইসলামের মূল কথার বিকৃতি ঘটিয়ে রাজনীতিতে ব্যবহার করেছেন। ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। আলবদর বাহিনী সম্পর্কে ট্রাইব্যুনাল বলেন, নিজামী শুধু আলবদর বাহিনীর প্রধানই ছিলেন না, এটি গঠনের ক্ষেত্রেও মূলহোতা ছিলেন। এ ছাড়া ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি নিখিল পাকিস্তান ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন, যা বর্তমানে ছাত্রশিবির নামে পরিচিত। আলবদর বাহিনী ছিল ছাত্রসংঘের ‘অ্যাকশন সেকশন’। এটি ছিল একটি ডেথ স্কোয়াড। স্পষ্টতই ছাত্রসংঘ ও আলবদরের ওপর নিজামীর প্রবল নিয়ন্ত্রণ ছিল। মানবতাবিরোধী অপরাধের ক্ষেত্রে নিজামী ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায় এড়াতে পারেন না। অপরাধ সংঘটন না করার জন্য তিনি কোনো বাধা দেননি। এক্ষেত্রে তার প্রভাব কাজে লাগাননি। ট্রাইব্যুনালের পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, নিজামী মনপ্রাণ দিয়ে শুধু বাংলাদেশের বিরোধিতাই করেননি, তিনি পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন।  

বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরী, আজহারুল হক ও হুমায়ূন কবিরের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা সাক্ষ্যের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। অথচ এই নিজামীকেই বাংলাদেশের মন্ত্রী করা হয়েছিল, এই ঘটনাটি ছিল বড় ধরনের ভুল এবং মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের গালে চড় মারার শামিল। ট্রাইব্যুনাল রায়ে বলেন, এসব অপরাধেও নিজামীর সর্বোচ্চ দণ্ড না হওয়াটা হবে বিচারের ব্যর্থতা। একাত্তরে নিজামী ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি ও আলবদরের প্রধান হিসেবে অপরাধ সংঘটন করেন। বুদ্ধিজীবী গণহত্যায় নিজামীর ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায় সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের ওই সরকারে পাবনা-১ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য নিজামীকে প্রথমে কৃষিমন্ত্রী করা হয়েছিল। পরে তিন বছর শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ওই সরকারে নিজামী ছাড়াও জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদকেও মন্ত্রী করা হয়। তিনি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। মুজাহিদকেও ট্রাইব্যুনালের রায়ে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর