বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা

ঢাকায় শিবিরের বোমাবাজি চাঁপাইনবাবগঞ্জে সংঘর্ষ

সারা দেশে দেড় শতাধিক গ্রেফতার

মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি স্থানে সংর্ঘষ, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় বিজিবিসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
রায় ঘোষণার পর থেকে জামায়াত-শিবির রাজধানীর বাড্ডা, মগবাজার, চকবাজার এবং জুরাইনে বোমাবাজি ও বিক্ষোভ মিছিল করে। পুলিশের কঠোর অবস্থানের কারণে এরা কোথাও বিক্ষোভ করতে না পারলেও জুরাইনে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যা ৬টায় রমনা থানা জামায়াতের পক্ষ থেকে রায়ের প্রতিবাদ ও হরতালের সমর্থনে মগবাজার চৌরাস্তা এলাকায় মিছিল করে। তারা এসময় টায়ারে আগুন দিয়ে রাস্তা অবরোধ করার চেষ্টা চালায়। পুলিশের ধাওয়ার মুখে মিছিলকারীরা পালিয়ে যায়। গতকাল রাতে শনিরআখড়ায় অনাবিল পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। চকবাজারে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বিক্ষোভ করে শিবির। মিছিলকারীরা আচমকা চকবাজারের রাস্তায় নেমে মিছিল শুরু করে। পুলিশের ধাওয়ায় তারা পিছু হটে যায়। এ সময় শিবির কর্মীরা বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। জামায়াত-শিবির কর্মীরা রামপুরা, তোপখানায় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। দুপুরে রাজধানীর গুলশান এক নম্বরে বিক্ষোভ মিছিল করে শিবির। এ সময় পুলিশ ও শিবির কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ  এ সময় ২ জনকে আটক করেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ : গতকাল বিকালে জামায়াত-শিবির কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে দুই বিজিবি সদস্যসহ অন্তত ১৬ জন আহত হয়েছেন। বিকাল ৩টায় জামায়াত-শিবির কর্মীরা মিছিল শেষে শিবগঞ্জ বাজারের ইসলামী ব্যাংকের কাছে সমাবেশ করছিল। এসময় পুলিশ বাঁধা দিলে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। একপর্যায়ে জামায়াত-শিবির কর্মীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপসহ প্রায় ৩০টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটালে পুলিশ-বিজিবি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় ৫০ রাউন্ড সর্টগানের গুলি বর্ষণ করে। বোমার আঘাতে বিজিবি সদস্য নাজমুল ও আহসান, বাদাম বিক্রেতা সাদিকুলসহ অন্তত ১৫জন আহত হয়েছে। তবে শিবিরের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে গুলিবিদ্ধ তাদের এক কর্মীকে মুমুর্ষু অবস্থায় রাজশাহী প্রেরণ করা হয়েছে। অন্যদিকে বিকাল ৩টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের নিমতলা এলাকায় জামায়াত-শিবির কর্মীরা মিছিল করলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এর আগে সকাল সোয়া ১১টায় রায়ের আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশ ৭ রাউন্ড সর্টগানের গুলি বর্ষণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে সানাউল (৩৫) নামে একজন আহত হয়েছে। ভোলাহাট থানা পুলিশ জানায়, সকাল সোয়া ১১টার দিকে ভোলাহাট মোহবুল্লাহ কলেজের সামনে জামায়াত-শিবির জমায়েতের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের সরে যেতে বলে। একপর্যায়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ ৭ রাউন্ড সর্টগানের গুলি বর্ষণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বগুড়া : শহরের সাতমাথায় গতকাল দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে টায়ারে অগ্নিসংযোগ করেছে হরতাল সমর্থনকারীরা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সাতমাথায় পরপর দুটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দে পুলিশ তিন রাউন্ড টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে টায়ারের আগুন নিভিয়ে ফেলে। সদর থানার ইনচার্জ ফায়জুর রহমান জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। কেউ আহত হয়নি।
দেড় শতাধিক গ্রেফতার : রাজধানীসহ সারা দেশে পুলিশের গ্রেফতার শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার রাত থেকে শুরু হওয়া এ অভিযানে জামায়াতের মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের বাসা-বাড়ি ও তাদের আস্তানাগুলোতে হানা দেয় পুলিশ। এতে দেড় শতাধিক নেতা-কর্মী গ্রেফতার হন বলে পুলিশের সূত্রগুলো জানিয়েছে। তবে জামায়াতের দাবি, গ্রেফতার হওয়া তাদের নেতা-কর্মীর সংখ্যা তিন শতাধিক। হরতালকে কেন্দ্র করে ও রায় ঘোষণার আগে থেকেই বিভিন্ন স্থানে পুলিশের অভিযান শুরু হয়। পুরনো নাশকতা মামলায় জড়িতদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলে রাজধানীর প্রায় প্রতিটি থানায়। পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন অন্তত ১৫ জন। এর মধ্যে বোমাবাজি ও পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় গ্রেফতার হন পাঁচজন। কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ বাজারে জামায়াত-শিবির ঝটিকা মিছিল বের করে। পুলিশ এ সময় মিছিল থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করে। সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্য মতে নোয়াখালীতে পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার হন ৪৬ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৮, চট্টগ্রামে ১৭, সাতক্ষীরায় ১৩, ঝিনাইদহে ১৩, নাটোরে ৯, দিনাজপুরে ৭, গাইবান্ধায় ৬, রাজশাহীতে ৫, সিরাজগঞ্জে ৪ ও বাগেরহাটে ২ জন গ্রেফতার হন।

সর্বশেষ খবর