বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা
সতর্ক আইন প্রয়োগকারী সংস্থা

সারা দেশে রেড অ্যালার্ট

তিন দিনের হরতালে রাজধানীসহ সারা দেশে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। কঠোর অবস্থানে থাকবে র‌্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পোশাকে এবং সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা গতকাল বিকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় নজরদারি শুরু করেছেন। তবে বিশেষ নজরদারির মধ্যে রাখা হচ্ছে সাতক্ষীরা, বগুড়া, জয়পুরহাট, গাইবান্ধা, চট্টগ্রামসহ স্পর্শকাতর ২৬ জেলাকে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে বিশেষ নির্দেশনা। গতকাল সন্ধ্যা থেকেই হরতালের নাশকতা মোকাবিলায় বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ)  টহল দিতে শুরু করেছে রাজধানীসহ স্পর্শকাতর জেলায়। মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের ঘোষণা আসার পর জামায়াত-শিবির সারা দেশে তিন দিন হরতালের ঘোষণা দেয়।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয় দুষ্কৃতকারীদের এমন কোনো কর্মকাণ্ড বরদাস্ত করা হবে না। হরতালে জনগণের জান-মাল নিরাপত্তার স্বার্থে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, নাশকতার আশঙ্কায় রাজধানীসহ দেশজুড়ে নিñিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। বঙ্গভবন, সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্ট, সচিবালয়, গুলশান-বারিধারার কূটনৈতিক জোন, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের আবাসিক এলাকা, সংসদ ভবন, জেলখানা, রমনা জাজেস কমপ্লেক্স, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ওয়াসাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে পুলিশ-র‌্যাবসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে গড়ে তোলা হয়েছে কঠোর নিরাপত্তাবলয়। একই অবস্থা থাকবে জামায়াত অধ্যুষিত জেলা ও সব বিভাগীয় শহরগুলোতে। তবে বিশেষ নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, গাইবান্ধা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, লালমনিরহাট, জয়পুরহাট, রাজশাহী, সিলেট, কক্সবাজার, গাজীপুর, পটুয়াখালী, সিরাজগঞ্জ, নীলফামারী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, খাগড়াছড়ি, ফরিদপুর, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর ও পাবনা জেলাকে। এসব জেলায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হরতাল-অবরোধের নামে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল জামায়াত-শিবির।
বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ জানান, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতো বিজিবি সদস্যরাও প্রস্তুত। জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী বিজিবি কাজ করবে। সন্ধ্যা থেকেই রাজধানীতে ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
পুলিশের সূত্রগুলো বলছে, জামায়াত-শিবিরের নাশকতাসহ উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যে কোনো ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। আগাম প্রস্তুতি হিসেবে গতকাল থেকেই পুলিশের জলকামান, গ্যাসকামান, আর্মড ভেহিক্যাল, পিপার স্প্রেসহ সব ধরনের অত্যাধুনিক সরঞ্জামসহ প্রস্তুত রাখা হয়েছে কয়েক প্লাটুন পুলিশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সাঈদীর বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় ঘোষণার পর দেশজুড়ে অরাজকতা সৃষ্টি করে জামায়াত-শিবির। সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে পুলিশসহ শতাধিক ব্যক্তি নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। জামায়াত অধ্যুষিত জেলাগুলো রাজধানী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বিষয়টি মাথায় রেখে এবার আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কোনোভাবেই রায়কে কেন্দ্র করে কোনো অরাজকতা করতে দেবে না পুলিশ। র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান জানান, গত মঙ্গলবার দুপুর থেকে সারা দেশে র‌্যাব সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যে কোনো পরিস্থিতি কঠোর হস্তে দমন করার জন্য র‌্যাব প্রস্তুত। পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) জালাল উদ্দীন আহমেদ চৌধুরী জানান, রাজধানীসহ সারা দেশে পুলিশের সবগুলো ইউনিটকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকার জন্য বলা হয়েছে। জনগণের জান-মাল রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে পুলিশ। ইতিমধ্যে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে পুলিশ।

সর্বশেষ খবর