শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা

নিজামীর রায় পর্যালোচনা করছে আসামিপক্ষ

জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায় এখন পর্যালোচনা করছে আসামিপক্ষ। আইনজীবীরা রায়ের বিভিন্ন ‘অসঙ্গতি’ ও ‘ভ্রান্তি’ অনুসন্ধান করছেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে ‘এখতিয়ার-বহির্ভূত’ভাবে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ‘রাজনৈতিক’ মন্তব্যের বিষয়টিও আবেদনে উল্লেখ করা হবে। এরপর আবেদন প্রস্তুত করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করবেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। আপিলের জন্য নির্ধারিত ৩০ দিনের মধ্যেই এ আবেদন করা হবে। আসামিপক্ষের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত করে বুধবার মতিউর রহমান নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, মানবতাবিরোধী অপরাধী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীকে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়াটা ছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের গালে চপেটাঘাতের শামিল। আর এটা বিশ্বাস করা খুবই কঠিন যে, সক্রিয়ভাবে যিনি বাংলাদেশে স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিলেন, তাকে এই প্রজাতন্ত্রের মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। আমাদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, এই ব্যক্তিকে তৎকালীন সরকারের মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া একটা বড় ধরনের ভুল ছিল। পাশাপাশি এটা ৩০ লাখ শহীদ ও সম্ভ্রম হারানো দুই লাখ নারীর প্রতিও ছিল সুস্পষ্ট চপেটাঘাত। এই লজ্জাজনক ঘটনা পুরো জাতির জন্য অবমাননাকর। আসামিপক্ষের আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়টি ন্যায়ভ্রষ্ট। এটি একটি দুর্বল রায়। এ রায়ের বিরুদ্ধে আমরা আপিল করব। সেখানে এ রায়ের বিরুদ্ধে আমাদের বক্তব্য বিস্তারিতভাবে তুলে ধরব। আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে আমাদের অসন্তুষ্টির কথা জানাব। তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা রায় পর্যালোচনা করছি। এরপর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই আমরা আপিল করব। সেখানে ন্যায়ভ্রষ্ট এ রায় টিকবে না বলে আমরা মনে করি। সূত্র জানায়, নিজামীকে মন্ত্রী বানানো লজ্জা, অবমাননা ও কলঙ্কের বলে রায়ে মন্তব্য করা হয়েছে। এটিকে ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার-বহির্ভূত মন্তব্য হিসেবে দেখছে আসামিপক্ষ। তা ছাড়া রায়ের পর্যবেক্ষণে জনগণের প্রত্যাশা পূরণের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করা আদালতের কাজ নয়। আদালত সংবিধান ও আইন অনুযায়ী বিচার করবেন। আদালত আবেগতাড়িত হবেন না বলেও মনে করে আসামিপক্ষ। সূত্র মতে, ট্রাইব্যুনালের রায়ে দেখা যায়, ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বরের পরে নিজামী ছাত্রসংঘের সভাপতি পদে ছিলেন না। তাহলে তিনি কিভাবে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে সংঘটিত অপরাধ করলেন? নিজামীর বিরুদ্ধে আনা বেশির ভাগ অভিযোগই সেপ্টেম্বরের পর সংঘটিত। তাহলে তিনি কিভাবে অপরাধ করলেন?
আসামিপক্ষের সূত্রের তথ্য মতে, প্রসিকিউশনের তথ্য-উপাত্তে নিজামীকে একদিকে লুঙ্গিপরা রাজাকার বলা হয়েছে। আবার তাকেই আল বদরের সুপ্রিম কমান্ডার বলা হয়েছে। লুঙ্গিপরা রাজাকার হিসেবে নিজামীকে মুক্তিযোদ্ধারা সাতদিন নৌকার গলুইয়ে বেঁধে রেখেছে। এমন তথ্যও রয়েছে প্রসিকিউশনের ডকুমেন্টে। এসব বিষয়ও আপিলে উল্লেখ করা হবে। সূত্র আরও জানায়, নিজামীর বিরুদ্ধে ১৬তম অভিযোগ তদন্ত প্রতিবেদন ও আনুষ্ঠানিক অভিযোগে ছিল না। প্রসিকিউশনের ডকুমেন্ট অনুযায়ী বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডবিষয়ক ৪২টি মামলা হলেও তাতে নিজামীর নাম ছিল না। বুদ্ধিজীবী হত্যার ঘটনায় প্রসিকিউশনের দুজন সাক্ষী নিজামীর বিরুদ্ধে কিছুই বলেননি। কিন্তু এই অভিযোগেও নিজামীকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দেওয়া হয়েছে। এসব বিষয়ও আপিলে উল্লেখ করা হবে। একই সঙ্গে আপিলের শুনানিতে তুলে ধরা হবে।

সর্বশেষ খবর