শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা

অস্তিত্বের লড়াইয়ে বিএনপি

* সংগঠনকে শক্তিশালী করা * আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে অনিশ্চয়তা * দল ভাঙার ষড়যন্ত্রও চলছে

অস্তিত্বের লড়াইয়ে বিএনপি

বিএনপির সামনে এখন অস্তিত্বের লড়াই। একদিকে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ করে অগোছালো সংগঠনকে শক্তিশালী করা, অন্যদিকে আগামী দিনে আন্দোলনের মাধ্যমে নতুন নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের বাধ্য করা দলটির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট কিংবা দল ভাঙার ষড়যন্ত্র তো আছেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব বাস্তবতা উপলব্ধি করে এগুতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে দলের অস্তিত্ব ধরে রাখার হুমকিতে পড়বে বিএনপি। অবশ্য এ অবস্থা থেকে উত্তরণে খোদ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সতর্কভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। দল ও জোট ভাঙার ষড়যন্ত্র রুখতে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গেই নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন তিনি। চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার আগে ফের মাঠে নেমেছেন, জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে জনসভা করছেন।  
বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের মতে, সরকার যত চেষ্টাই করুক না কেন, তাদের কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হবে না। ৫ জানুয়ারির প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনেও নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিএনপি কিংবা জোটের কোনো দলকে নির্বাচনে নিতে পারেনি। আগামী দিনেও পারবে না। বিএনপির অস্তিত্ব নিয়ে টানাটানি করতে গিয়ে ক্ষমতাসীন দলের অস্তিত্বই চরম হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন তারা।
অবশ্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে যে সংসদ এবং সরকার গঠন করা হয়েছে, তাদের বাধ্য করতে হবে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠায় অতিদ্রুত নির্বাচন দিতে। অন্যথায় আমাদের অর্জিত গণতন্ত্র পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবে। আর এ আন্দোলনে ব্যর্থ হলে তখন দলেরও অস্তিত্ব থাকবে না। এবারের আন্দোলন আমাদের সবার অস্তিত্বের লড়াই। কিছুতেই এতে ব্যর্থ হওয়া যাবে না। যে কোনো মূল্যে তা সফল করতে হবে। বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ বলেছেন অন্যকথা। তার দৃষ্টিতে গণতন্ত্রের যুদ্ধে জনগণের কখনো পরাজয় হয় না। তবে সেটি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার হতে পারে মাত্র। তেমনি গণতান্ত্রিক আন্দোলন করে কোনো দলও কখনো ব্যর্থ হয় না। যদি সেটি জনসমর্থিত দল হয়।
জানা গেছে, জানুয়ারি মাসকে টার্গেট করেই সামনে এগোচ্ছে বিএনপি। ডিসেম্বরের মধ্যেই যে কোনো মূল্যে দলের সর্বস্তরের কমিটি গঠন-পুনর্গঠনসহ জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। জনমত গঠনে জেলা পর্যায়ে জনসভা শুরু করেছেন বিএনপিপ্রধান বেগম খালেদা জিয়া। ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন আয়োজন ইস্যুতে আলোচনার প্রস্তাব না এলে জানুয়ারি থেকেই বিএনপি জোটের ঠিকানা হবে আবারও রাজপথ। তবে চলমান কূটনৈতিক তৎপরতাও ডিসেম্বরের মধ্যেই একটা না একটা রেজাল্ট বয়ে আনবে বলেও মনে করছেন বিএনপির দলীয় কূটনীতিকরা। এ ব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ভাষ্য হলো- ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে-পরের আন্দোলনে ঢাকায় আমাদের ব্যর্থতা থাকলেও এবার ঢাকাসহ সারা দেশে একই সঙ্গে আন্দোলন হবে। আর তা কিছুতেই ব্যর্থ হবে না, এমনকি সরকার ক্ষমতা ছাড়া মাত্র গণধোলাইয়েরও শিকার হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, জনগণের দাবি আদায়ের আন্দোলন করতে গিয়ে কোনো দল ব্যর্থ হয় না। বিএনপিরও ব্যর্থতার কোনো প্রশ্নই আসে না। বরং সে দিন ঘনিয়ে আসছে, যখন সরকারই নতুন নির্বাচন দিতে উতলা হবে। একই আশা প্রকাশ করেন দলের অধিকাংশ নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা। তাদের মতে, এবারের আন্দোলন আর ব্যর্থ হবে না। সরকারের দমননীতিও তা দমাতে পারবে না। সেভাবেই প্রস্তুতি চলছে। তবে আন্দোলন প্রক্রিয়া কিংবা তার প্রস্তুতির ধরন কী হবে- সে সম্পর্কে কেউ কিছু বলছেন না। দৃশ্যমান কোনো কর্মসূচি দূরে থাক, আন্দোলনের ব্যাপারে সুদূরপ্রসারী কোনো পরিকল্পনা, প্রস্তুতি কিংবা লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না এ মুহূর্তে। মির্জা ফখরুল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দ্রুত সংলাপ-সমঝোতায় না এলে গণআন্দোলনের মুখে জনদাবি মানতে এবার বাধ্য হবে সরকার। কারণ তারা সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী শক্তি, জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে। ক্ষমতাসীনরা দেশে এখন অগণতান্ত্রিক রাজনীতি সৃষ্টি করেছে। তৈরি করেছে এক ভয়াবহ সংকট। সংকট-উত্তরণে দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বাধ্য করা হবে সবার অংশগ্রহণের নতুন নির্বাচন দিতে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমি কখনো হতাশ হই না। কারণ জনগণের কাক্সিক্ষত কোনো আন্দোলন কখনো ব্যর্থ হয়েছে বলে কোনো নজির নেই। আপেক্ষিক ব্যর্থতার মধ্যেও ভবিষ্যতের সফলতা নিহিত থাকে। ’৮৬ সালেও এ রকমই মনে হয়েছিল, পরে সে অবস্থাও আমরা পার করে এসেছি। গত নির্বাচনে আমরা ক্ষমতায় যাইনি, এটা আমাদের ব্যর্থতা নয়।’

সর্বশেষ খবর