শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা
অংশীদারি সংলাপ

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র

সংলাপে নেতৃত্বদানকারী যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি ওয়েন্ডি শারম্যান, সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মো. শহীদুল হক ও রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন-এনআরবি নিউজ

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে বৃহত্তর পরিসরে দুই দেশের সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রগুলো নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র। গত দুই দিন ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত তৃতীয় অংশীদারিত্ব সংলাপের কয়েকটি সেশনে আলোচনার পর এ ক্ষেত্রগুলো নির্ধারণ করা হয়। গতকাল প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়- ‘যেহেতু দুটি জাতি ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছে, উভয় প্রতিনিধি দল বৃহত্তর সম্পৃক্ততার জায়গাগুলো শনাক্ত করেছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে বিমসটেকের দফতর ও আঞ্চলিক নেতৃত্বে বাংলাদেশের ভূমিকাকে স্বীকৃতি প্রদান করে যুক্তরাষ্ট্র।’ বৃহত্তর সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে বিবৃতিতে স্থান পেয়েছে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক একীভূতকরণ এবং যোগাযোগ উন্নয়ন উদ্যোগসহ ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক করিডরের উন্নয়ন, আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্যে সহায়তাকরণ, জ্বালানি সহায়তা, পরিবেশ সুরক্ষা, অর্থনীতিতে নারীর বর্ধিত অংশগ্রহণ, নারী ও মেয়েশিশুদের পরিপূর্ণ ও সমান অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা রোধ ও বর্তমানের প্রতিবন্ধকতা দূর করে ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রবক্তা হিসেবে দুই দেশের তরুণদের পারস্পরিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি। এ ছাড়া এই প্রথম অংশীদারিত্ব সংলাপের আওতায় সাইবার স্পেসে ক্রমবর্ধমান হুমকি মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে আলোচনা করেছে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র। বহুল আলোচিত ইস্যুগুলোর মধ্যে জিএসপি ফিরে পেতে প্রস্তাবিত অ্যাকশন প্লানের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ওয়াশিংটনে ২৮ ও ২৯ অক্টোবর দুই দিনের এ অংশীদারিত্ব সংলাপে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক এবং মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের রাজনীতি বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ওয়েন্ডি শ্যারমেন। প্রথম দিন তিন সেশনে উন্নয়ন ও সুশাসন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ?এবং নিরাপত্তা সহযোগিতা ওয়ার্কিং গ্র“পের আলোচনা হয়। পরদিন প্লেনারি সেশনে আগের আলোচনার পর্যালোচনা করে দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সহযোগিতা বৃদ্ধির ক্ষেত্র চিহ্নিত করেন। মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে- সম্প্রতি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশ জয়ী হওয়ায় অভিনন্দন জানিয়েছেন ওয়েন্ডি শ্যারমেন। সেই সঙ্গে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের মাধ্যমে বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় বাংলাদেশের অদ্বিতীয় ভূমিকার প্রশংসা করেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি। অন্যদিকে, বৈঠক শেষে ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়- ঢাকায় ২০১৩ সালের মে মাসে দ্বিতীয় অংশীদারি সংলাপ-পরবর্তীতে কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ অংশীদারিত্ব বিস্তার ও গভীর হয়েছে। সন্ত্রাস মোকাবিলা, মাদকবিরোধী সহযোগিতা ও টিকফার মাধ্যমে বাণিজ্য সহযোগিতা বৃদ্ধি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র কোস্টগার্ড বাংলাদেশকে জাহাজ কাটার জারভিস (নতুন নাম সমুদ্র জয়) দিয়েছে। ২০১৫ সালে আরেকটি আসবে। এ হস্তান্তর বঙ্গোপসাগরে সমুদ্রসীমা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের সক্ষমতা বাড়াবে। বিবৃতিতে বলা হয়- শ্রমিক নিরাপত্তা ও শ্রম অধিকার, বিশেষত পোশাকশ্রমিকদের জন্য বাংলাদেশের অগ্রগতিকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করছে। প্রাথমিক অনলাইন তথ্যভাণ্ডার প্রতিষ্ঠা, নতুন পরিদর্শক নিয়োগ, কারখানা পরিদর্শন, নতুন ইউনিয়ন নিবন্ধন এবং শ্রমিকনেতাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারে বাংলাদেশের পদক্ষেপ আশাব্যঞ্জক। উভয় পক্ষ শ্রমিকের অধিকার সংরক্ষণ এবং সুস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাকি কাজ যৌথভাবে করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জিএসপি সুবিধা দ্রুততম সময়ে ফিরে পেতে অ্যাকশন প্ল্যান দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য কাজ করবে দুই দেশ। পরিবেশ সুরক্ষার ক্ষেত্রে জাতীয় বনাঞ্চলের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে কর্মসূচির রূপরেখা দিয়েছে। এর ফলে বনাঞ্চল রক্ষা ও বন পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ সম্ভব হবে। সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার বিষয়ে বলা হয়- উভয় দেশই সন্ত্রাসী অর্থায়ন ও সহিংস চরমপন্থা মোকাবিলায় সহায়তা চালিয়ে যাওয়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেছে। বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ফাইন্যানশিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স কাঠামোর অংশ হিসেবে ডিসেম্বরে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায়, সহিংস চরমপন্থা ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন মোকাবিলায় সর্বোত্তম অনুশীলনের জন্য একটি দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক কর্মশালার আয়োজন করবে। মাতৃমৃত্যু হার কমানো, মেয়েশিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ এবং দারিদ্র্য হ্রাসে বাংলাদেশের উন্নতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে উভয় দেশ, নারী শিশুদের মাধ্যমিক শিক্ষার ব্যবস্থা এবং বাল্য ও জোরপূর্বক বিয়ে রোধে করণীয়সহ কিশোরীরা যেসব বাধার সম্মুখীন হয় সে বিষয়গুলো দূর করতে একমত হয়েছে। তরুণদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির বিষয়ে বলা হয়- পারস্পরিক মূল্যবোধ, আকাক্সক্ষা ও পারস্পরিক স্বার্থ তুলে ধরতে এবং সংলাপের ক্ষেত্রে তরুণদের সম্পৃক্ত করার গুরুত্ব অনুধাবন করেছে দুই দেশ। এজন্য উভয় দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে যোগসূত্র বৃদ্ধি এবং পেশাদারি, শিক্ষাবিদ ও শিক্ষাবিষয়ক বিনিময় বৃদ্ধির পথ খুঁজে দেখা হবে। এ ছাড়া ইবোলা প্রতিরোধের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে কাজ করবে। দ্রুততম সময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর যুক্তরাষ্ট্র সফর নির্ধারণ করার কথাও বলা হয়েছে যৌথ বিবৃতিতে।

সর্বশেষ খবর