শনিবার, ১ নভেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

কেন বারবার আগুন এখানে

কারওয়ান বাজারের বিএসইসি ভবনে বার বার আগুন কেন- এ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। ২০০৭, ২০১০ সালের পর গতকাল আবার একই ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বহুতল ভবনটিতে নিছক অসাবধানতায় অগ্নিকাণ্ড ঘটছে, নাকি এর পেছনে কোনো নাশকতামূলক তৎপরতা রয়েছে- এসব প্রশ্ন এখন সাধারণ মানুষের মুখে মুখে। বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন (বিএসইসি) ভবনটি মূলত সরকারি। ১১ তলা এ ভবনে এনটিভি, আরটিভি, আমার দেশ এবং বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে প্রায় ৩০টি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় রয়েছে। ভবনের ছয় তলায় আরটিভি কার্যালয়, সপ্তম থেকে নবম তলা পর্যন্ত এনটিভি এবং ১১ তলায় আমার দেশের কার্যালয়। এ ছাড়া ছাদের ওপর দুটি টিনশেড কক্ষে এনটিভির ট্রান্সমিশন স্টেশন। এ ছাড়া দশম তলায় সরকারি ও বেসরকরি তিনটি প্রতিষ্ঠান, পঞ্চম তলায় বিএসইসির প্রকৌশল বিভাগের অফিস রয়েছে। নিচের বিভিন্ন তলায় রয়েছে এবি ব্যাংক, ইস্টার্ন কেবল লিমিটেড, ইস্টার্ন টিউব লিমিটেড, ন্যাশনাল টিউব লিমিটেড, এটলাস বাংলাদেশ লিমিটেডসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়। ফায়ার ব্রিগেড জানায়, গতকাল বেলা ১১টা ৪৮ মিনিটে বিএসইসি ভবনের ১১ তলায় আমার দেশ পত্রিকা অফিস থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এদিন ওই কার্যালয় থেকে তাদের কিছু মালামাল স্থানান্তরের কথা ছিল। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট প্রায় পৌনে ২ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা তাৎক্ষণিকভাবে আগুন লাগার কারণ জানাতে পারেননি। তবে ওই ভবনের বিভিন্ন কার্যালয়ের কর্মীরা জানান, ১১ তলায় আমার দেশের একটি গুদাম থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। দশম তলায় একটি ল ফার্মের কর্মী বাবলু মিয়া বলেন, ‘শর্টসার্কিট হলে স্পার্ক করার যেরকম শব্দ হয়, তেমন আওয়াজ পেলাম হঠাৎ। এরপর আমার দেশের দারোয়ান নেমে এসে চিৎকার করে সবাইকে নেমে যেতে বলেন। ধোঁয়া দেখে তাড়াতাড়ি আমরা সবাই নেমে পড়ি।’ আগুন লাগার পর ভবনের ১১ তলা থেকে প্রচুর কালো ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়। এর আগে ২০০৭ সালের ২৬ ফেব্র“য়ারি ওই ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত চারজন নিহত ও শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছিলেন। ওই সময় এনটিভি, আরটিভি ও আমার দেশসহ ১০টি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় পুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ডে উদ্ধারকাজে প্রথমবারের মতো বিমানবাহিনীর দুটি হেলিকপ্টার ব্যবহৃত হয়। ২০০৭ সালের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তের শুরুতেই বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ঘটনাটি নিছক দুর্ঘটনা নয়, বড় ধরনের নাশকতা বলেই সন্দেহ প্রকাশ করে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটিও তাদের প্রাথমিক রিপোর্টে ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত’ হিসেবে ধারণা করে। কিন্তু এ ব্যাপারে পরবর্তীতে আর কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি। ২০১০ সালের ২০ জুলাই ওই ভবনের নিচ তলার গ্যারেজে দ্বিতীয়বারের মতো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওইদিন বেলা পৌনে ৩টার দিকে ভবনের গ্যারেজে একটি জেনারেটরের তারে আগুন লাগে। দমকল বিভাগের কর্মীরা পৌঁছানোর আগেই সেখানে কর্তব্যরত লোকজন আগুন নিভিয়ে ফেলেন।
আমার দেশ থেকেই আগুনের সূত্রপাত! : সর্বশেষ গতকাল বিএসইসি ভবনটিতে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে দৈনিক আমার দেশের কার্যালয় থেকে। আমার দেশের কর্মী মাহমুদা ডলি উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, তাদের পত্রিকা বন্ধ থাকলেও অনলাইন নিয়মিত প্রকাশ হয়। তা ছাড়া অফিস আজ (শুক্রবার) সকালে নিকেতনে স্থানান্তরের কথা ছিল। এ কারণে নিউজরুমের কেউ সকালে অফিসে ছিলেন না। পত্রিকাটির আরও কয়েকজন কর্মী জানান, চেয়ার-টেবিলসহ ফাইলপত্র কিছু নামানোর কাজও চলছিল। এরই মধ্যে পত্রিকার গুদামঘরের ভিতর থেকে আগুনের ফুলকি উড়তে দেখা যায়। পরে চাবি এনে গুদামের দরজা খুলতে খুলতে কালো ধোঁয়ার গভীর কুণ্ডলীতে সবকিছু আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।
ফায়ার সার্ভিসের অপারেশন ডিরেক্টর মেজর মাহবুব জানিয়েছেন, আমার দেশ পত্রিকা অফিসের গোডাউন থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। অগ্নিকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহম্মদ খান বলেন, ‘শুনেছি ভবনের একটি অফিসের (আমার দেশ পত্রিকার) মালামাল সরানোর কাজ চলছিল। সেখানকার অসাবধানতার কারণে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগতে পারে।’ তবে তদন্তসাপেক্ষে বিস্তারিত জানা যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। বিএসইসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইমতিয়াজ হোসেন চৌধুরী জানান, সংস্থার পরিচালক (অর্থ) সৈয়দ মোজাম্মেল হককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ১০ দিনের মধ্যে অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত কারণ নির্ণয়পূর্বক প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু আগুন লাগার পর বিএসইসি ভবন পরিদর্শন করেছেন। অগ্নিকাণ্ডের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, যে কোনো স্থানে অগ্নিকাণ্ড দুঃখজনক ঘটনা। এর পেছনে অনেক কারণই থাকতে পারে। এ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হবে।
তদন্ত হয়, কিন্তু রিপোর্ট পাই না :  গতকালের অগ্নিকাণ্ডের ২০ মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এনটিভির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসাদ্দেক আলী ফালু। কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘বার বারই এ ভবনে আগুন লাগে, আর আমি বার বারই ক্ষতিগ্রস্ত হই।’ তিনি বলেন, ‘তদন্ত হয়, কিন্তু রিপোর্ট পাই না। তদন্ত কী হয় তা জানা যায় না।’ এই অগ্নিকাণ্ডের আসল তথ্য সরকারকে বের করার দাবি জানান তিনি। ফালু বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্ত করা উচিত। ২০০৭ সালের অগ্নিকাণ্ডের তদন্ত রিপোর্ট এখনো জমা দেওয়া হয়নি। গতকালের অগ্নিকাণ্ড কী কারণে ঘটল, তা তদন্ত করে আসল তথ্য বের করতে হবে বলেও দাবি করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর