রবিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা
সোনা পাচার

চোরাকারবারি গ্রেফতার হয়, সাজা হয় না

সোনা চোরাকারবারিদের গ্রেফতার করেও আটক রাখা যায় না। অদৃশ্য ক্ষমতাবলে, নানান ঘাট মাড়িয়ে দ্রুতই তারা বেরিয়ে আসেন। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে গত বুধবার পর্যন্ত ১৬ মাসে সারা দেশে ২ হাজার ২৭ কেজি সোনা উদ্ধার হয়েছে। এ ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেন অন্তত ৮৪ জন। তবে তাদের অধিকাংশই জামিনে বেরিয়ে গেছেন। কোনোভাবেই জেলে আটক রাখা সম্ভব হয় না। কোনো মামলার একজন আসামি হাইকোর্ট থেকে জামিন পাওয়ার পর ওই মামলার অন্য আসামিরা সেই জামিন আদেশ দেখিয়ে নিু আদালত থেকে জামিন নিচ্ছেন। গত বছরের মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সোনা আটকের ঘটনায় অন্তত ২০টি মামলার আসামিদের জামিন পাওয়ার তথ্য রয়েছে। এ ছাড়া এসব মামলার তদন্তেও তেমন অগ্রগতি নেই। এসব ঘটনায় থানায় হওয়া মামলাগুলোর প্রায় সব আসামিই জামিন পেয়েছেন।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত ও তথ্য প্রসিকিউশনের অতিরিক্ত কমিশনার আনিসুর রহমান বলেন, সোনা চোরাচালান মামলার অধিকাংশ আসামি উচ্চ আদালত থেকে জামিনে আছেন। ঢাকা কাস্টমস হাউসের কমিশনার জাকিয়া সুলতানা বলেন, গত বছর বিমানবন্দরে ১০৫টি চালানে আসা ৪১৫ কেজি সোনা আটক করা হয়। এসব ঘটনায় থানায় ২৯টি মামলা ও ৩৯টি বিভাগীয় মামলা হয়েছে। ২ কেজির ঊর্ধ্বে সোনা আটকের ৩১ ঘটনায় ৩৫৮ কেজি সোনা আটক করা হয়। ২ কেজির নিচে সোনা উদ্ধারের ঘটনায় জরিমানা করে সেগুলো দাবিদারের কাছে দেওয়ার বিধান রয়েছে। এগুলো সেভাবে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। বিমানবন্দরের শুল্ক কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া সোনার ক্ষেত্রে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের হিসাব অনুযায়ী, শাহ আমানত বিমানবন্দরে ২০১৩ সালে আটটি সোনার চালান ধরা পড়ে। এসব চালানে আসা ২ হাজার ১২১ তোলা ৭২১ গ্রাম বা প্রায় ২৫ কেজি সোনার বার জব্দ করা হয়; যার বাজার দর প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা। এ-সংক্রান্ত মামলা দায়ের হলেও পুলিশ পাচারের মূল উৎস শনাক্ত করতে পারেনি। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানার পুলিশের মতে, সোনার বার পাচারে গ্রেফতার ব্যক্তিরা সবাই মূলত বাহক। এ কারণে পাচারের মূল উৎস শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে বিমানবন্দরে কোনো যাত্রীর লাগেজ স্ক্যানিং ছাড়া বের হওয়ার সুযোগ না থাকলে সোনার বার পাচার করা সম্ভব হতো না বলে মন্তব্য করেন তিনি। শুধু সরকারি চাকরিই নয়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও (নির্দিষ্ট সময়ের জন্য) রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যে কোনো কাজ পাওয়া যেন আলাদিনের চেরাগ হাতে পাওয়া! তাই সাম্প্রতিক সময়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সুইপারসহ বিভিন্ন পদের চুক্তিভিত্তিক কাজের জন্যও চলে লাখ লাখ টাকার ঘুষের জমজমাট বাণিজ্য। একই চিত্র বিরাজ করছে চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরেও। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বা শাহ আমানত বিমানবন্দরে যে কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও যদি কেউ এক বছরের জন্য কোনো কাজের দায়িত্ব পায়, তবে তার জীবনে আর কোনো দিনই অর্থনৈতিক অভাব থাকে না। আর যদি স্থায়ী (সরকারি) চাকরি হয়, তবে তা যেন সত্যিই আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো। স্থায়ী চাকরিজীবীরা রীতিমতো সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন। যেন তাদের পরবর্তী দু-তিন প্রজন্মকেও কোনোভাবে ছুঁতে না পারে অর্থনৈতিক অনটন বা পিছুটান। গত এক বছরে শাহজালাল ও শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে সোনাসহ বিভিন্ন চোরাচালানের ঘটনায় গ্রেফতার ব্যক্তিরা এসব তথ্য প্রদান করে আসছেন।

সর্বশেষ খবর