রবিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

সার্ক কেন্দ্র হ্রাসের সিদ্ধান্ত প্রোগ্রামিং কমিটির

বুধবার নেপালে শীর্ষ সম্মেলন

সার্ক কেন্দ্র হ্রাসের সিদ্ধান্ত প্রোগ্রামিং কমিটির

দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা-সার্কের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সরাসরি গাড়ি চলাচলের জন্য সার্ক মোটর ভেহিক্যাল এগ্রিমেন্টের সব খুঁটিনাটি দিকই চূড়ান্ত হয়েছিল পাঁচ বছর আগে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ভারত-পাকিস্তানের চিরশত্রুতার বাস্তবতায় তা আর আলোর মুখ দেখেনি। ‘ভারতের গাড়ি’ নিজের মাটিতে চলাচল করতে দিতে নারাজ পাকিস্তান। এ দুই দেশের বৈরিতা এতটুকুও কমেনি। তবু এখন আবার সেই চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে জোর সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে। অবশ্য চুক্তির কাঠামোয় আনা হয়েছে কিছুটা পরিবর্তন। আশা করা হচ্ছে, ভূ-রাজনীতির নতুন বাস্তবতায় গাড়ির পাশাপাশি ট্রেন চলাচলের চুক্তিতেও একমত হয়ে স্বাক্ষর করবে সার্কের আট সদস্য। এমন ‘উচ্চাশা’ নিয়েই গতকাল প্রস্তুতি বৈঠক শুরু হয়েছে ১৮তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের।   

নেপালের কাঠমান্ডুতে বুধবার শুরু হচ্ছে শীর্ষ সম্মেলন, যা শেষ হবে বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) আট সদস্য দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের যৌথ ঘোষণার মাধ্যমে। শেষ দুই দিনে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসবেন দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ নেতারা। আঞ্চলিক যোগাযোগের বাইরে এবারের সম্মেলনে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে সার্ক দেশগুলোর মধ্যে জ্বালানি সহায়তার বিষয়ও। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রোগ্রামিং কমিটির বৈঠকের মধ্য দিয়ে গতকাল সকালে শুরু হয় সার্ক দেশগুলোর শীর্ষ নেতাদের বৈঠকের আনুষ্ঠানিকতা। প্রোগ্রামিং কমিটির বৈঠক উপলক্ষে বাংলাদেশসহ সব দেশের প্রতিনিধি শুক্রবার পৌঁছান কাঠমান্ডু। গতকাল সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কাঠমান্ডু হোটেল সলটিতে হয় এই প্রোগ্রামিং বৈঠক। গত সার্ক প্রোগ্রাম কমিটির চেয়ারপারসন আইশাথ লুইসা জহির বৈঠক উদ্বোধন করে নেপাল প্রতিনিধি দলের প্রধান যোগা বাহাদুর হামালের কাছে চেয়ারপারসনের দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। মূলত সদস্য দেশগুলোর যুগ্ম সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারাই এ বৈঠকে ছিলেন। তারা আগের শীর্ষ সম্মেলনের সিদ্ধান্তগুলো পর্যালোচনা ও ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে আলোচনা করে সম্মেলনের সম্ভাব্য এজেন্ডা ও চুক্তিগুলোর বিষয় নির্ধারণ করেন। এ ছাড়া তারা সার্কের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের বিষয়েও প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সিদ্ধান্ত হয়েছে সার্কের তিনটি কেন্দ্র বিলুপ্ত করার এবং অন্য চারটি কেন্দ্রকে একীভূত করে একটি কার্যালয় করার। বার্তা সংস্থার তথ্যানুসারে, সার্ক তথ্য কেন্দ্র, সার্ক মানব উন্নয়ন কেন্দ্র ও সার্ক নথি সংগ্রহকরণ কেন্দ্র বন্ধ করা এবং সার্ক বনায়ন কেন্দ্র, সার্ক দুর্যোগ মোকাবিলা কেন্দ্র, সার্ক উপকূল ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র ও সার্ক আবহাওয়া গবেষণা কেন্দ্র মিলিয়ে একটি কেন্দ্র করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্মকর্তারা। সমন্বিত এই কেন্দ্রের প্রধান কার্যালয় কোথায় হবে, সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ভুটান ও মালদ্বীপ নিজ নিজ দেশে এই কার্যালয় স্থাপনের আগ্রহ দেখিয়েছে। আগ্রহী দেশগুলো নিজেদের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেছে। অন্যদিকে, বন্ধ করে দেওয়া কেন্দ্রগুলোর কাজ এখন থেকে সার্ক সচিবালয় থেকে করা হবে। কূটনৈতিক সূত্র জানায়, প্রোগ্রামিং কমিটির সিদ্ধান্তগুলো মঙ্গলবার সার্ক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠকে উত্থাপন করা হবে। চুক্তির বিষয়ে ঐকমত্য হলে তা পাঠানো হবে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের বৈঠকে। সার্ক মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করা বাংলাদেশের সাবেক এক কূটনীতিকের মতে, উপমহাদেশের বড় দুই দেশের বৈরিতাই সার্ককে অকার্যকর সংস্থায় পরিণত করেছে। বিভিন্ন ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তার বাস্তবায়নে উদাসীনতা রয়েছে এ দুই দেশের। তবে এবার যেহেতু সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ক্ষমতাধর ও বৃহৎ রাষ্ট্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সার্ক ইস্যুতে বিশেষ আগ্রহের ঘোষণা আছে, সেহেতু কাঠমান্ডু সম্মেলন বিশেষ মাত্রা পাচ্ছে। যদি এখন এ তিনটি চুক্তিই স্বাক্ষর করে বাস্তবায়নের পথে যাওয়া যায় তাহলে সার্কের চেহারাই পাল্টে যাবে। দেশগুলোর মধ্যে পণ্য পরিবহন, যোগাযোগ ও জ্বালানি খাতে পারস্পরিক সহায়তা পুরো অঞ্চলের চেহারাই পাল্টে দিতে পারে। তবে এ ধরনের সম্ভাবনা আগেও তৈরি হয়েছে কিন্তু কোনো ফল পাওয়া যায়নি।  

বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবারের সম্মেলনে বাংলাদেশ আঞ্চলিক যোগাযোগ বা কানেকটিভিটি ও জ্বালানি সহায়তার ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুবশক্তির উন্নয়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ, সাফটা ও সার্ভিস সেক্টরে সহযোগিতা, জলবায়ু পরিবর্তন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, খাদ্য নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হবে। সার্কে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর যথাযথ এবং সময়ানুগ বাস্তবায়নের ওপর জোর দেওয়া হবে। বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, এর মাধ্যমে সার্ককে সত্যিকার গণমানুষের সংগঠনে পরিণত করা সম্ভব এবং দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের কাছে দৃষ্টিগোচর সংগঠন হিসেবে আবির্ভূত হবে। জানা যায়, বাংলাদেশের উদ্যোগে ১৯৮৫ সালের ৮ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত হওয়া সার্কের দুই বছর পর পর শীর্ষ সম্মেলন হয়ে আসছিল। কিন্তু ২০১১ সালের নভেম্বরে মালদ্বীপের পর্যটন নগরী আদ্দুতে হওয়া ১৭তম সম্মেলনের পরের নির্ধারিত আয়োজক নেপাল অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে আয়োজনে অসমর্থ হয়েছিল। তাই এবার তিন বছর পর হচ্ছে ১৮তম সম্মেলন।

সর্বশেষ খবর