প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার সাজ্জাদুল হাসান ও পুলিশ কমিশনার মো. কামরুল আহসানকে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, কারও মুখের দিকে না তাকিয়ে শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলনকক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠক শেষে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ও পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে এ নির্দেশনা দেন। একই সময়ে প্রধানমন্ত্রী রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার এবং মৌলভীবাজার ও পাবনা জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সঙ্গেও ভিডিও কনফারেন্স করেন। মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন থেকে প্রতি মাসে দুই দিন জেলা উন্নয়ন কমিটির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলবেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে ভিডিও কনফারেন্সে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার সাজ্জাদুল হাসান ও পুলিশ কমিশনার মো. কামরুল আহসানের সঙ্গে কথা বলেন। শুরুতেই তিনি বলেন, কিছু দিন আগে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বোধহয় একটি সমস্যা দেখা দিয়েছে- এ সম্পর্কে পুলিশ কমিশনারের কাছ থেকে জানতে চাই।
এরপর প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে একটা নির্দেশ আমি দিতে চাই, যারাই এ ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করবে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাস করবে, যে দলের হোক, কে কোন দলের সেটা দেখার কথা নয়। যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ড করবে সঙ্গে সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে হবে।
এর পর সিলেটের পুলিশ কমিশনার প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, গত ২০ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। মারামারিতে একজন ছেলে নিহত হয়। ঘটনার সময় নিয়ন্ত্রণ করেছি। তা না হলে হয়তো আরও ক্ষয়ক্ষতি হতে পারত। তিনি জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে, বিশেষ অভিযানে ৩৩ জনকে গ্রেফতার করার পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও বেশ কিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এই অভিযান অব্যাহত আছে। আশা করছি যারা এ ঘটনায় জড়িত তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে পারব। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে বলেন, আমি জানি যে বা যারাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গণ্ডগোল করুক, একটা পর্যায়ে দেখা গেছে সেখানে ছাত্রের চেয়ে অছাত্র বেশি, কিছু বহিরাগত, তারাও এর সঙ্গে জড়িত থাকে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, দোষীদের সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার ও উপযুক্ত শাস্তি দিলে তাৎক্ষণিকভাবে এসব ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ও পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দেন- এ ব্যাপারে কোনো দিকে না তাকিয়ে, কারও মুখের দিকে না তাকিয়ে যথাযথভাবে ব্যবস্থা নেবেন এটাই আমরা চাই। দেশকে এগিয়ে নিতে চাই, বাংলাদেশের মানুষ ভালো থাকুক, সুখে থাকুক, উন্নত জীবন পাক- এটাই আমরা চাই। সিলেটের সঙ্গে আরেক দিন ভিডিও কনফারেন্স করবেন জানিয়ে বলেন, এটি চলমান থাকবে, ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন স্বপ্ন নয়, বাস্তব। মৌলভীবাজার জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স শেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ শুরু করলাম, এর পর অন্যান্য বিষয় নিয়ে সবাই সব সময় তৈরি থাকবেন। আপনারা কে কী কাজ করছেন, সব ডাটা নিয়ে রেডি থাকবেন। যে কোনো সময় বসব, কথা বলব এবং জিজ্ঞেস করব- স্ব স্ব এলাকায় কী কী কাজ হচ্ছে। ভিডিও কনফারেন্সে জেলা প্রতিনিধি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা নিজ নিজ এলাকার ভালো কাজের বিবরণ ও বিভিন্ন চাহিদার কথা তুলে ধরেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী কিছু বিষয় তাৎক্ষণিকভাবে সমাধানের জন্য নির্দেশ দেন। এর মধ্যে ভিডিও কনফারেন্সে উপস্থিত পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে মনু নদীর ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। এদিকে মন্ত্রিসভার গতকালের বৈঠকে মালয়েশিয়ার সঙ্গে দুটি সমঝোতা স্মারকের অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ কোরিয়া সফর ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ইন্দোনেশিয়া সফর সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে জানান।
