বুধবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

মামলা খড়গে বিরোধী জনপ্রতিনিধিরা

মামলা খড়গে বিরোধী জনপ্রতিনিধিরা

শুধু বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের শীর্ষ নেতারাই নন, মামলা খড়গে তৃণমূলে বিরোধী দলের জনপ্রতিনিধিরাও। সিটি করপোরেশনের মেয়র থেকে শুরু করে পৌর মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান কিংবা ভাইস চেয়ারম্যানরাও বিভিন্ন মামলার আসামি। জনপ্রতিনিধিদের অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে দায়িত্ব থেকে সরিয়েও দেওয়া হয়েছে। আবার কেউ কেউ কারাগারে রয়েছেন। অনেক এলাকায় অলিখিতভাবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করছেন। সর্বশেষ সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলার চার্জশিটে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে আসামি করা হয়েছে। মামলা হওয়ার পর আরিফুল হক আত্মগোপনে চলে গেছেন। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ। মেয়র উপস্থিত না থাকায় সিটি করপোরেশনের কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। তার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছেন সিটি কাউন্সিলররা। তারা ১৫ দিনের কর্মসূচি দিয়েছেন। বিএনপির স্থানীয় নেতারা বলছেন, ১০ বছর পর এই মামলায় আরিফুল হক চৌধুরীকে জড়ানো ষড়যন্ত্রের অংশ। তাকে মেয়র থেকে অপরসারণের জন্যই এটি করা হয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এমনিতেই গণতন্ত্র হুমকির মুখে। তার ওপর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের গ্রেফতার-হয়রানিতে গণতন্ত্রের মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা নেমে এসেছে। এটা সরকারের স্বেচ্ছাচারের মনোবৃত্তি। কারণ, জনপ্রতিনিধিরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে না পারলে সংশ্লিষ্ট এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ জানা গেছে, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের বিরুদ্ধে তিনটি মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। হুলিয়া মাথায় নিয়েই তিনি সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব পালন করছেন। যে কোনো সময় গ্রেফতারের খড়গ নেমে আসতে পারে। বুলবুলের বিরুদ্ধে মামলাগুলো হলো-পুলিশ কনস্টেবল সিদ্ধার্থ হত্যা, বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ ও বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসিকে গুলি করা। সিদ্ধার্থ হত্যা মামলায় তিনি জেলও খেটেছেন। গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধী দলের আন্দোলনের সময় এক মামলায় বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র আহসান হাবিব কামালের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। আরেকটি দুর্নীতি মামলায় তিনি জামিনে রয়েছেন। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র আবদুল মান্নানের বিরুদ্ধেও দুটি মামলা। ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে এক বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় গত ৯ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়। এতে তার সঙ্গে বিএনপি সমর্থিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান আজম ভূঁইয়া, শিরিন চাকলাদার, খায়রুল আলম, তানবীর আহমেদ ও ফয়সাল সরকারসহ চার শতাধিক নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়। রেহাই পাননি খুলনা সিটি মেয়র মনিরুজ্জামান মনিও। গত ৮ নভেম্বর রাতে একটি ইজিবাইক পোড়ানোর মামলায় তাকেসহ বিএনপি-জামায়াতের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মনজুর আলমের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলা না থাকলেও ভূমি দখলের মামলা রয়েছে। তবে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল ইসলাম সাক্কুর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই বলে জানা গেছে। শুধু সিটি মেয়ররাই নন, পৌর মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানরাও পড়েছেন মামলার খড়গে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেল খাটছেন। বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মণ্ডলকে গত ১১ নভেম্বর সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তার বিরুদ্ধে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগসহ থানায় দায়ের করা চারটি ‘নাশকতা’ মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মাজেদুর রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান আবু সোলায়মান সরকার সাজুকে গত ১৮ নভেম্বর বরখাস্ত করা হয়। সুন্দরগঞ্জ পৌর মেয়র নুরুন্নবী প্রামাণিক সাজুকে বরখাস্ত করা হয়েছে ১ অক্টোবর। তার বিরুদ্ধে ১১টি নাশকতার মামলা রয়েছে। গাইবান্ধা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল করিমকে ২ অক্টোবর সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বগুড়ার শেরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান দবিবুর রহমানকে ৮ সেপ্টেম্বর বরখাস্ত করা হয়। ২ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান সরওয়ার জাহান চৌধুরী ও ভাইস চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ চৌধুরীকে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তারা দুজনই উখিয়ায় বৌদ্ধ মন্দিরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। ১১ জুন রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ চাঁদকে বরখাস্ত করা হয়। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক কবিরসহ বিএনপির ২০ নেতা-কর্মীকে ২০ নভেম্বর কারাগারে পাঠানো হয়। ২০ অক্টোবর সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবদুর রউফকে শহরের মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ মাস্টার আদালতে একটি মামলার হাজিরা দিতে গিয়ে আটক হন। তার বিরুদ্ধে দোকানপাট ভাঙচুরের অভিযোগে মামলা দায়ের করে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ। এদিকে ২৭ মার্চ রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের কাছে শপথ নিতে গিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন তিন উপজেলা চেয়ারম্যান ও দুই ভাইস চেয়ারম্যান। তারা হলেন পঞ্চগড়ের আটোয়ারি উপজেলা চেয়্যারম্যান আবদুর রহমান আবদার, ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, বোদা উপজেলা চেয়ারম্যান শফিউল আলম শফি, রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম রাব্বানী ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুর বাসেত সাজ্জান। পবিত্র হজ ও তাবলিগ জামায়াত নিয়ে লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যের প্রতিবাদে গত ১ অক্টোবর যশোরে এক মানববন্ধনে হামলার ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের হয়। এতে যশোর পৌরসভা মেয়র মারুফুল ইসলাম, কেশবপুর পৌরসভার মেয়র আবদুস সামাদ বিশ্বাস, মনিরামপুর পৌরসভার মেয়র শহীদ ইকবাল, বাঘারপাড়া পৌরসভার মেয়র আবদুর রহিম মনা, কাউন্সিলর হাজি আনিসুর রহমান মুকুলসহ বেশ কয়েকজনকে আসামি করা হয়। হামলা, মামলা, বরখাস্ত কিংবা গ্রেফতার হওয়া মেয়র, চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যানদের সবাই বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত।

সর্বশেষ খবর