শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা
বসুন্ধরা সিমেন্ট ওয়ানডে সিরিজ

ওয়ানডে সিরিজও বাংলাদেশের

ওয়ানডে সিরিজও বাংলাদেশের

চট্টগ্রামে প্রথম ওয়ানডে জেতার পর আনন্দের অবগাহনে মেতেছিলেন মাশরাফিরা। টানা ১২ হারের চোরাবালিতে আটকে যখন হাঁসফাঁস করছিল পুরো দল, তখন অধরা জয়ের দেখা পাওয়ায় বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠাই ছিল স্বাভাবিক। কষ্টের জয়ের সুভেনির রেখে দিয়ে উইকেট সংগ্রহে হুড়োহুড়ি লেগে গিয়েছিল ক্রিকেটারদের মধ্যে। কাল আরাফাত সানির বলে জিম্বাবুয়ের শেষ উইকেট পতনের পর জয়ের আনন্দে হাজার হাজার ক্রিকেটপ্রেমীর উচ্চকণ্ঠে মুখরিত হয় মিরপুর স্টেডিয়াম। সিরিজ জয়ের আনন্দে লাফিয়ে ওঠেন ক্রিকেটাররাও। কিন্তু প্রথম ওয়ানডে জয়ের সেই উচ্ছ্বাসটা যেন হারিয়ে গিয়েছিল কোথাও! আসলে জিম্বাবুয়ের যে পারফরম্যান্স এক মাস ধরে, তাতে জয় ধরে নিয়ে খেলতে নামাই স্বাভাবিক হয়ে উঠেছিল ক্রিকেটারদের। সেজন্যই হয়তো সিরিজ জেতার পর সুভেনির হিসেবে উইকেট নিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মাতেননি মাশরাফিরা। না মাতলেও ১৩ মাস পর সিরিজ জিতে টইটম্বুর আÍবিশ্বাস নিয়েই বিশ্বকাপ খেলতে উড়ে যাবেন টাইগাররা; যা বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম জয়। বসুন্ধরা সিমেন্ট ওয়ানডে সিরিজ নিশ্চিত করার তৃতীয়টি জিতেছেন টাইগাররা ১২৪ রানে। কাল সিরিজের চতুর্থ ও ১ ডিসেম্বর সিরিজের শেষ ওয়ানডে। ১৯৮৬ সালে ওয়ানডে অভিষেক। এরপর ২৮ বছরে সিরিজ খেলেছে ৫৮টি। এবার নিয়ে সিরিজ জয়ের সংখ্যা ১৬টি এবং জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৪ সিরিজে অষ্টম। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে সাতটি। এবারেরটি অষ্টম। একবার মাত্র ৫-০ ব্যবধানে জেতার রেকর্ড রয়েছে টাইগারদের। এবার সে লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছে দল, ম্যাচ-উত্তর সংবাদ সম্মেলনে তা-ই বললেন ম্যাচসেরা এনামুল হক বিজয়, ‘সিরিজ জিতে ভালো লাগছে। এখন ৫-০-তে জেতাই লক্ষ্য এবং তা সম্ভব।’ রাতের শিশির এড়াতে এক ঘণ্টা এগিয়ে আনা হয় খেলা। কাল দুপুর থেকেই মিরপুরে ঝরেছে শিশির। ঘন না হলেও ধোঁয়াশাভাব এড়াতে বিকাল হতে না হতেই জ্বালিয়ে দেওয়া হয় ফ্লাডলাইট। সেই লাইটের আলোয় প্রথমে ব্যাট করে ৬ উইকেটে ২৯৭ রান করে বাংলাদেশ। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে যা টাইগারদের দ্বিতীয় এবং জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বোচ্চ স্কোর। অবশ্য দুই দলের লড়াইয়ে আফ্রিকান প্রতিনিধিদের বিপক্ষে টাইগারদের সর্বোচ্চ স্কোর, ৮ উইকেটে ৩২০। ২০০৯ সালে করেছিল বুলাওয়েতে। মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ছিল ৭ উইকেটে ২৪৬।
কাল ২৯৭ রান করার মূল ভিত গড়ে দেন দুই ওপেনার এনামুল হক বিজয় ও তামিম ইকবাল। দুজন ২৫.৫ ওভারে স্কোর বোর্ডে যোগ করেন ১২১ রান। বাংলাদেশের ২৯২ ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে এই প্রথম পরপর দুই ম্যাচে শত রানের জুটি গড়লেন এনামুল-তামিম। চট্টগ্রামে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে দুজন করেছিলেন ১৫৮ রান। উদ্বোধনী জুটিতে ১৫০-ঊর্ধ্ব রান রয়েছে তিনটি। ১৯৯৯ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী জুটিতে মেহরাব হোসেন অপি ও শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ ১৭০ রান করার পরও হেরেছিল বাংলাদেশ। এ বছর এশিয়া কাপে এনামুল হক বিজয় ও ইমরুল কায়েশ ১৫০ রান করেছিলেন পাকিস্তানের বিপক্ষে। টাইগাররা হেরেছিলেন ম্যাচটি। চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৫৮ রান করার পর শঙ্কায় পড়তে হয়নি মাশরাফি বাহিনীকে। ৬৮ রানে হারিয়েছিল আফ্রিকান প্রতিনিধিদের। কাল এনামুল-তামিম যোগ করেন ১২১ রান। উদ্বোধনী জুটিতে যা ষষ্ঠ সর্বোচ্চ। ওয়ানডে ইতিহাসে এখন পর্যন্ত ৫১টি শত রানের জুটি গড়েছে বাংলাদেশ। দুই বন্ধু সাকিব ও তামিম কাল নেমেছিলেন ৪ হাজার রানের মাইলফলক গড়ার হাতছানি নিয়ে। কিন্তু পারেননি। দুজনই সাজঘরে ফেরেন ৪০ রান করে। ফলে দুই বন্ধুকেই অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে সিরিজের বাকি ম্যাচগুলো পর্যন্ত। চার হাজারি ক্লাবে নাম লেখাতে সাকিবের দরকার মাত্র ২৪ ও তামিমের ৫৫ রান। দুই তারকার ভিন্ন আবেদনের ম্যাচটি অসাধারণ ব্যাটিং করে নিজের করে নেন এনামুল। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৮০ রানে আউট হওয়ার আক্ষেপ কাল ঘোচাতে চেয়েছিলেন সেঞ্চুরি করে। কিন্তু নার্ভাস নাইনটিজের শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন ৯৫ রানে। টার্গেট ওভারপ্রতি প্রায় ৬ রান। পর্বতসমান স্কোর তাড়া করতে নেমে অফ ফর্মের গেঁড়াকলে পড়া জিম্বাবুইয়ান ব্যাটসম্যানেরা প্যাভিলিয়নে ফেরার অলিখিত প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠেন।
ইনিংসে তৃতীয় ওভারে প্রথম আঘাত হানেন ইন ফর্ম বোলার মাশরাফি। সেই শুরু। এর পর থেকে ধারাবাহিকভাবে উইকেট হারাতে থাকে জিম্বাবুয়ে। মাশরাফির করে দেওয়া পথে আফ্রিকান প্রতিনিধিদের ইনিংসে যতি টেনে দেন বাঁ হাতি স্পিনার আরাফাত সানি। প্রথম দুই ম্যাচে ৬ উইকেট নেওয়া আরাফাত কালও নেন ৪ উইকেট। অষ্টম ওয়ানডে ক্যারিয়ারে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ৪ উইকেট নেন আরাফাত। তবে ম্যাচসেরা হন এনামুল, ৯৫ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলে।

সর্বশেষ খবর