বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

কুপুত্রের জিভ সামলান

খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী

কুপুত্রের জিভ সামলান

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আপনার কুপুত্রকে (তারেক রহমান) জিভ সামলে কথা বলতে বলবেন। সে যেভাবে মিথ্যাচার করছে, ইতিহাস বিকৃত করে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে বাংলার মানুষ সহ্য করবে না, বিশ্ববাসীও মেনে নেবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার (তারেক) হাতে অনেক রক্ত। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতা-কর্মী এবং বহু মানুষের রক্ত। যুদ্ধাপরাধীর বিচার যেভাবে হচ্ছে, ঠিক সেভাবেই গ্রেনেড হামলার বিচার হবে। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে গতকাল খামারবাড়ী কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হিসেবে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শেখ হাসিনা। তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের একটি প্রচারণা (ওরা মানুষ মারছে, আসুন আমরা পশু হত্যা করি) স্মরণ করে বলেন, ইয়াহিয়া খান ছিল একটা জানোয়ার। তার (তারেক) কথায়ও ইয়াহিয়ার সুর। বেগম খালেদা জিয়ার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছেলেদের কী শিক্ষা দিলেন? রাষ্ট্রের টাকায় পুত্রদের মানুষ না করে বড় চোর বানিয়েছেন। আমেরিকা ও সিঙ্গাপুরের আদালতেও এ বিষয়ে রায় এসেছে। সিঙ্গাপুর থেকে কিছু টাকা ফেরতও এনেছি। এখন লন্ডনে বসে ইতিহাস বিকৃতি করে চলছে। তার (তারেক রহমান) নাম নিতেও ঘৃণা লাগে। ইচ্ছাকৃত ইতিহাস বিকৃত করে যাচ্ছে। লেখাপড়া শিখলে মানুষের মতো কথা বলত। জানোয়ারকে শিক্ষা কীভাবে দিতে হয় দেশের মানুষ জানে। চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিএনপি বাঁচাতে পারছে না বলেই তারেক রহমান  এসব বলে যাচ্ছেন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, নিজামীর সাজা দিয়েছি, তাদের মনে বড় কষ্ট। সবার বিচার হবে। রায়ও একে একে কার্যকর হবে। আমি জানি দুঃখটা কোথায়? ইনশাআল্লাহ কোনো মানবতাবিরোধী অপরাধীকে বাঁচাতে পারবেন না। মিলনায়তন কানায় কানায় ভরে গেলে নেতা-কর্মীরা খামারবাড়ীর সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে মাইকে বক্তৃতা শোনেন। লাল-সবুজের শাড়ি পরিহিত আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বিকাল ৩টা ৩৭ মিনিটে সভামঞ্চে আসেন। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও অসীম কুমার উকিল সভা পরিচালনা করেন। দলের সিনিয়র নেতারাও লন্ডনে বসে বিএনপি নেতা তারেক রহমানের আপত্তিকর বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন। ‘সরকার হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করছে’ বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এত সাধু হলে, কোর্টে যেতে ভয় পান কেন? এতিমের টাকা মেরে খেয়েছেন। জানেন যে কোর্টে গেলে সাজা হবে। তাই পালিয়ে বেড়ান। চোরের মন পুলিশ পুলিশ। যে নিজেই এতিমের অর্থ চুরি করে মামলা মোকাবিলা করতে ভয় পায় সে আবার অন্যকে দোষ দেয়। তার আইনজীবীরা আদালত অসম্মান করেন। তাকে (খালেদা) বলব, আগে আয়নায় নিজের চেহারাটা দেখেন। হাসতে হাসতে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেখবেন কি, সবই তো নকল’। প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় লাখ লাখ ডলার বেতন নিচ্ছেন- খালেদা জিয়ার এ বক্তব্যের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, আমার ছেলে আমার অবৈতনিক উপদেষ্টা হিসেবে বিনা পয়সায় আমাকে উপদেশ দিচ্ছে। আপনি টাকা ছাড়া কিছুই বোঝেন না। জিয়াউর রহমানই শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছেন- বিএনপির এমন দাবির জবাবে তিনি বলেন, জিয়া আমাকে আনবে কোত্থেকে। জিয়া কলকাতায় আমার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছে, খালেদা জিয়া বাসায় আসতে চেয়েছিল, দেখা করিনি।
তিনি বলেন, জিয়া আমাকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে পর্যন্ত ঢুকতে দেয়নি। মিলাদ পর্যন্ত পড়তে দেয়নি। জিয়া কীভাবে আনবে? জিয়া অবৈধ রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন। হাইকোর্টের রায়ে তা প্রমাণিত।
শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, তারেকের বক্তব্যে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। তাদের পায়ের নিচে মাটি নেই। তারা প্রলাপ বকবে, এটাই স্বাভাবিক। পাগলের শাস্তি পাগলের মতোই হবে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে বিতর্কিত করা মানে মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করা। তারা ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।  বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, কে কী বলল তা বিষয় নয়। তার (তারেক) কথার জবাব দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে ডিফেন্ড করতে হবে এমন নয়। এ সময় আবেগাপ্লুুত হয়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিভিন্ন স্মৃতিচারণা করেন তোফায়েল আহমেদ। দেশ-বিদেশে বিশ্বনেতারা কীভাবে বঙ্গবন্ধুকে মূল্যায়ন করতেন তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন ষড়যন্ত্র করে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, এটা কী উন্মাদের প্রলাপ; নাকি পাকিস্তানের পত্রপাঠ। সে আমাদের কলিজায় হাত দিয়েছে। লন্ডনে যেসব বাঙালি আছে, তারা যদি জিহ্বা কেটে দেয় তখন কী করবেন।

সর্বশেষ খবর